Advertisement
০৫ নভেম্বর ২০২৪
Ajmal Kasab

হাতে তাগা পরে চোখে ধুলো দিতে চেয়েছিল ২৬/১১-র হামলাকারী কসাব!

নিজের বই ‘লেট মি সে ইট নাও’-তে এমনই দাবি করলেন মুম্বই পুলিশের প্রাক্তন কমিশনার রাকেশ মারিয়া।

আজমল কসাব। —ফাইল চিত্র।

আজমল কসাব। —ফাইল চিত্র।

সংবাদ সংস্থা
মুম্বই শেষ আপডেট: ১৮ ফেব্রুয়ারি ২০২০ ১৪:১৯
Share: Save:

২৬/১১ মুম্বই হামলাকে হিন্দু সন্ত্রাসবাদীদের হামলা হিসাবে দেখাতে চেয়েছিল লস্কর-ই-তৈবা। সেই মতো পাকিস্তানে বসেই যাবতীয় পরিকল্পনা সেরে ফেলেছিল তারা। মহম্মদ আজমল আমির কসাব-সহ হামলাকারী ১০ জঙ্গির ভুয়ো পরিচয়পত্র তৈরি করা হয়েছিল, যাতে হামলার পর তাদের ভারতীয় এবং হিন্দু হিসাবেই তাদের শনাক্ত করেন গোয়েন্দারা। নিজের বই ‘লেট মি সে ইট নাও’-তে এ বার এমনই দাবি করলেন মুম্বই পুলিশের প্রাক্তন কমিশনার রাকেশ মারিয়া।

নিজের বইয়ে রাকেশ মারিয়া লিখেছেন, হিন্দু সন্ত্রাসবাদীরাই এই ঘটনা ঘটিয়েছে বলে দেখাতে চেয়েছিল লস্কর-ই-তৈবা। তার জন্য জঙ্গিদের ভুয়ো পরিচয়পত্র তৈরি করেছিল তারা। বেঙ্গালুরুর বাসিন্দা সমীর দীনেশ চৌধুরি পরিচয় নিয়ে মারা যাওয়ার কথা ছিল মহম্মদ আজমল আমির কসাবের। কসাবকে হিন্দু প্রতিপন্ন করতে তার হাতে লাল তাগাও বেঁধে দেওয়া হয়েছিল। ওই জঙ্গি সংগঠন ভেবেছিল, হিন্দু সন্ত্রাসবাদীরা হামলা চালিয়েছে জানতে পারলেই সংবাদমাধ্যমে হইচই পড়ে যাবে। কসাবের পরিবার ও প্রতিবেশীদের খোঁজে বেঙ্গালুরুতে ছুটবেন তাবড় সাংবাদিকরা। কিন্তু ওদের এই চেষ্টা সফল হয়নি। আজমল কসাব যে পাকিস্তানের ফরিদকোটের বাসিন্দা, তা ধামাচাপা দেওয়া যায়নি।’’

হামলাকারীদের প্রত্যেকের কাছে হায়দরাবাদের অরুণোদয় কলেজের ভুয়ো পরিচয়পত্র ছিল বলেও জানা গিয়েছে। রাকেশ মারিয়া জানিয়েছেন, জিহাদের প্রতি কোনওকালেই আকর্ষণ ছিল না কসাবের। বরং চরম অর্থকষ্ট থেকে রেহাই পেতে বন্ধু মুজফ্ফর লাল খানকে সঙ্গে নিয়ে ডাকাত দলে যোগ দিতে চেয়েছিল সে। তার জন্য অস্ত্র প্রশিক্ষণও নিতে চেয়েছিল। সেই সূত্রেই লস্কর-ই-তৈবায় যোগদান তার। সেখানেই তার মগজধোলাই করে জঙ্গিরা। ভারতে মুসলিমদের নমাজ পড়তে দেওয়া হয় না, সমস্ত মসজিদ তালাবন্ধ করে রাখা হয়েছে, এ সব তার মাথায় ঢোকানো হয়। হামলা চালানোর আগে তাকে ১ লক্ষ ২৫ হাজার টাকা দেয় লস্কর। সেই সঙ্গে পরিবারের সঙ্গে দেখা করার জন্য এক সপ্তাহের ছুটি। বোনের বিয়ের জন্য ওই টাকা বাড়ির লোকজনের হাতে তুলে দেয় কসাব।

আরও পড়ুন: বিদ্রোহ, কেলেঙ্কারি সব ছাপিয়ে তাপসের জন্য রয়ে গেল চোখের জল​

মুম্বই পুলিশের অপরাধ দমন শাখা জেলে বন্দি থাকাকালীন বাইরে থেকে আজান শুনেও কসাব বিশ্বাস করতে পারেনি বলে জানিয়েছেন রাকেশ মারিয়া। তিনি জানিয়েছেন, ‘‘জেল থেকে দিনে পাঁচবার আজান শোনা যেত। কিন্তু তাতে বিশ্বাস করতে চায়নি কসাব। সব তার কল্পনা বলে ভেবে বসেছিল সে। তাই তদন্তকারী অফিসার রাকেশ মাহালেকে মেট্রো সিনেমা সংলগ্ন একটি মসজিদের তাকে কাছে নিয়ে যেতে বলি আমি। সেখানে সকলকে নমাজ পড়তে দেখে কসাব হতভম্ব হয়ে গিয়েছিল।’’

আরও পড়ুন: ‘নীতীশকে তো কেউ প্রশ্নই করে না’, বিতর্কে আহ্বান করে বললেন প্রশান্ত কিশোর​

মহারাষ্ট্রে বিজেপির সরকার থাকাকালীন শিনা বরা কাণ্ডে তদন্তের দায়িত্বে ছিলেন রাকেশ মারিয়া। আইপিএল দুর্নীতিকাণ্ডে অভিযুক্ত ললিত মোদীর সঙ্গে লন্ডনে দেখা করা নিয়ে সেইসময় বিতর্কে জড়ান রাকেশ মারিয়া। তার জেরে রাতারাতি পদোন্নতি করে অন্যত্র সরিয়ে দেওয়া হয় তাঁকে। নিজের বইয়ে তিনি দাবি করেছেন, বেঁচে থাকলে হামলার পিছনে পাক যোগ প্রমাণ হয়ে যেতে পারে, তাই পাক গুপ্তচর সংস্থা আইএসআই এবং লস্করের তরফে তাকে হত্যা করতে দাউদ ইব্রাহিমের ডি কোম্পানিকে বরাত দেওয়া হয়েছিল। জিজ্ঞাসাবাদ চলাকালীন কসাব তাঁর উপর ভরসা করতেও শুরু করেছিলেন বলে জানিছেন তিনি। রাকেশ মারিয়া জানিয়েছেন, শেষ দিকে কসাব তাঁকে ‘স্যর’ বলে সম্বোধন করতে শুরু করে।

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE