ফাইল চিত্র।
লখিমপুর খেরিতে কৃষকদের গাড়ি দিয়ে পিষে দেওয়ার মামলায় আজ উত্তরপ্রদেশে বিধানসভার প্রথম পর্বের নির্বাচনের দিনই জামিন পেলেন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী অজয় মিশ্র টেনির পুত্র আশিস। তাঁর জামিন মঞ্জুর করেছে ইলাহাবাদ হাই কোর্টের লখনউ বেঞ্চ। গত বছর ৩ অক্টোবর প্রতিবাদী কৃষকদের হত্যায় মূল অভিযু্ক্ত ছিলেন মন্ত্রিপুত্র আশিস। এই প্রভাবশালী ব্রাহ্মণ নেতার ছেলের জামিনে মুক্তি নিয়ে প্রশ্ন তুলতে শুরু করেছে রাজনৈতিক মহল।
অভিযোগ, ৩ অক্টোবর নরেন্দ্র মোদী সরকারের আনা বিতর্কিত তিন কৃষি আইনের বিরুদ্ধে লখিমপুর খেরিতে প্রতিবাদে শামিল হয়েছিলেন কৃষকেরা। সেই সময়ে আশিস চার কৃষক এবং এক সাংবাদিকের উপর দিয়ে ‘ইচ্ছাকৃত’ ভাবে গাড়ি চালিয়ে হত্যা করেন। আহতও হন অনেকে। সেই ঘটনার হিংসা ছড়িয়ে পড়লে আরও তিন জনের প্রাণহানি ঘটে।
সেই দিনের ঘটনা একাধিক ভিডিয়োয় দেখা যায়, গতি কমানোর পরিবর্তে প্রতিবাদী কৃষকদের উপরে দিয়েই গাড়ি চালিয়ে দেন মন্ত্রিপুত্র।
এর আগে নিম্ন আদালত আশিসের জামিন খারিজ করেছিল।
উল্লেখযোগ্য যে, বিশেষ তদন্তকারী দলের (সিট) পেশ করা চার্জশিটে আশিসকে মূল অভিযুক্ত বলে উল্লেখ করা হয়েছিল। পাঁচ হাজার পাতার ওই চার্জশিট চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট চিন্তা রামের কাছে জমা দেয় সিট। সেখানে বলা হয়, ঘটনাস্থলে ছিলেন আশিস।
যদিও আশিসের আইনজীবী অবধেশ সিংহের দাবি, বিশেষ তদন্তকারী দলের কাছে শ’দেড়েক ছবি পেশ করেছিলেন তাঁরা। যাতে এটা স্পষ্ট হয় যে, ঘটনার দিন সেখানে ছিলেন না আশিস। যদিও তাতে মান্যতা দেয়নি সিট। তবে অবধেশের দাবি, তাঁর মক্কেলের বিরুদ্ধে কোনও অকাট্য প্রমাণ ছিল না, যার মাধ্যমে প্রমাণিত হয় যে, তিনি দোষী।
আশিসের বিরুদ্ধে আনা কয়েকটি অভিযোগ নিয়ে আজ প্রশ্ন তুলেছে হাই কোর্ট। আদালত জানায়, অভিযোগপত্রে প্রতিবাদীদের উদ্দেশে গুলি চালানোর বিষয়টি উল্লেখ করা হয়েছে। কিন্তু কোনও নিহতের কিংবা আহতের শরীরে গুলির চিহ্নের উল্লেখ ছিল না তদন্তে। এমনকি আশিস যখন জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তদন্তকারী অফিসারের মুখোমুখি হন, সেই সময়ে চার্জশিট প্রায় তৈরি।
প্রসঙ্গত, সাত দফার ভোটের মধ্যে লখিমপুরে নির্বাচন হবে চতুর্থ দফায়। দ্বিতীয় বা তৃতীয় দফার ভোটপর্ব থেকে সেখানে ব্রাক্ষ্ণণ ভোট অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকেরা। বিশেষত যোগী জমানায় যেখানে ঠাকুর আধিপত্যের সামনে অসন্তুষ্ট ছিলেন ব্রাহ্মণদের একটা বড় অংশ। এই পরিস্থিতিতে রাজ্যে ব্রাহ্মণ মুখ অজয়ের পুত্র আশিসের জামিন অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ বলে মত রাজনৈতিক মহলের।
তৃণমূল কংগ্রেসের সাংসদ মহুয়া মৈত্র আশিসের জামিনের যৌক্তিকতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। তিনি টুইট করে জানিয়েছেন, জামিন পাওয়ার তিনটি বিষয় গুরুত্বপূর্ণ— ১) সাক্ষীকে প্রভাবিত করা, ২) প্রমাণ নষ্ট করা এবং ৩) উড়ানে চেপে দেশে ছাড়ার সম্ভাবনা রয়েছে কি না। এ ক্ষেত্রে প্রথম শর্তটি কী ভাবে আশিসের জামিন পাওয়ার ক্ষেত্রে উপযোগী প্রশ্ন তুলেছেন মহুয়া।
প্রসঙ্গত, লখিমপুরে কৃষক হত্যার জেরে বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ার পরে আশিসকে গ্রেফতার করেছিল উত্তরপ্রদেশ পুলিশ। তদন্তে ঢিলেমি নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করে সুপ্রিম কোর্টের বিশেষ তদন্তের নির্দেশ দিয়েছিল। এর পরেই সিট আশিস-সহ ১৩ জনকে গ্রেফতার করে। ৩ জানুয়ারি চার্জশিট পেশ করে। সেখানে আশিস-সহ ১৪ জনের নাম ছিল।
এই ঘটনায় নিহত কৃষকদের পরিবারের পাশাপাশি বিরোধীরাও অজয়কে মন্ত্রিত্ব থেকে সরিয়ে দেওয়ার দাবি তুললেও তাকে মান্যতা দেয়নি মোদী সরকার। রাজনৈতিক মহলের একাংশ মনে করে, উত্তরপ্রদেশ বিধানসভার দিকে তাকিয়েই ব্রাহ্মণ মুখ অজয়কে সরানোর ঝুঁকি নেননি মোদী-অমিত শাহেরা।
তবে ভোটের আগে কৃষকদের ক্ষোভের আঁচ মালুম করেই বিতর্কিত তিন কৃষি আইন প্রত্যাহারের ঘোষণা করেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী।
গত কাল এক সাক্ষাৎকারে প্রধানমন্ত্রী জানিয়েছিলেন, স্বচ্ছতা বজায় রেখেই তদন্ত করছে যোগী প্রশাসন। যদিও রাজ্য পুলিশের তদন্তে অনাস্থা প্রকাশ করেই বিশেষ তদন্তের নির্দেশ দিয়েছিল সুপ্রিম কোর্ট।
তবে মোদীর সাক্ষাৎকারের পরের দিনই আশিস-পুত্রের জামিন ঘিরে তুঙ্গে উঠেছে জল্পনা।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy