মদ্যপ অবস্থায় বিমান চালানোয় তিন বছরের জন্য লাইসেন্স সাসপেন্ড। —ফাইল ছবি
নেশায় চুর পাইলটের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ করল এয়ার ইন্ডিয়া। তিন বছরের জন্য তাঁর লাইসেন্স সাসপেন্ড করা হয়েছে। মত্ত অবস্থায় রবিবার লন্ডনগামী বিমান চালাতে যান তিনি। তবে অ্যালকোহল পরীক্ষায় ধরা পড়ে যান। এর পর সোমবার তাঁর লাইসেন্স সাসপেন্ড করে উড়ান নিরাপত্তা সংক্রান্ত নজরদারি সংস্থা।
অসামরিক বিমান পরিষেবা সংস্থা (ডিজিসিএ)-এর তরফে পরে বিবৃতি জারি করে বলা হয়, ‘‘১১ নভেম্বর থেকে তিন বছরের জন্য অভিযুক্ত পাইলটের লাইসেন্স সাসপেন্ড করা হয়েছে।’’
রবিবার দুপুরে দিল্লি বিমানবন্দর থেকে লন্ডনের উদ্দেশে রওনা দেওয়ার কথা ছিল এয়ার ইন্ডিয়ার এআই-১১১ বিমানটির। উড়ানের দায়িত্বে ছিলেন সিনিয়র পাইলট ও পরিচালন বিভাগের ডিরেক্টর অরবিন্দ কাঠপালিয়া। ভরদুপুরে মত্ত অবস্থায় সেখানে হাজির হন তিনি। কিন্তু অ্যালকোহল পরীক্ষায় ধরা পড়ে যান। জানা যায়, বিমান চালানোর মতো অবস্থায় নেই তিনি।
Here is why Air India is Always Ram Bharose !
— Kuldeep Singh (@KuldeepSingBais) November 11, 2018
Air India senior pilot Arvind Kathpalia was today found positive in Breath Analyser (BA) and declared 'not fit to fly'. He was scheduled to fly AI's Delhi to London flight. @sureshpprabhu @NewsWorldIN @KhabarNwi pic.twitter.com/TA0wsF7OdF
অরবিন্দ কাঠপালিয়ার অ্যালকোহল পরীক্ষার রিপোর্ট।
আরও পড়ুন: তাড়া করেছে বাঘ, জঙ্গলে ঊর্ধ্বশ্বাসে ছুটছে হুডখোলা গাড়ি, তার পর...
পরিস্থিতি সামাল দিতে তড়িঘড়ি অন্য এক পাইলটকে খবর দেওয়া হয়। কিন্তু তাঁর এসে পৌঁছতে বেশ খানিকটা সময় লেগে যায়। প্রায় ৫৫ মিনিট পর বিমানটি ছাড়ে। বিমান সংস্থার এক আধিকারিক জানান, ‘‘দিল্লি থেকে লন্ডন অভিমুখী বিমান পরিচালনার দায়িত্বে ছিলেন ক্যাপ্টেন কাঠপালিয়া। কিন্তু বিমানে ওঠার আগে দু’-দু’বার অ্যালকোহল পরীক্ষায় ব্যর্থ হন তিনি। তাই বিমান চালানোর অনুমতি দেওয়া হয়নি।’’
ভারত-সহ পৃথিবীর সব দেশেই বিমান পরিষেবা সংক্রান্ত বেশ কিছু নিয়ম কানুন রয়েছে। সেই অনুযায়ী, উড়ানের ১২ ঘণ্টা আগে থেকে কোনওরকম নেশা বা মদ্যপান করতে পারেন না পাইলট এবং বিমানকর্মীরা। উড়ানের আগে এবং পরে প্রত্যেকের অ্যালকোহল পরীক্ষা করা হয়। অরবিন্দ কাঠপালিয়ার মতো অভিজ্ঞ পাইলটেরও তা না জানারকারণ নয়। তা হলে এই ঝুঁকি নিলেন কেন তিনি?
উত্তর খুঁজতে গিয়ে আরও মারাত্মক তথ্য উঠে আসে। এয়ার ইন্ডিয়া সূত্রে জানা যায়, আগেও এমন কাণ্ড ঘটিয়েছেন কাঠপালিয়া। একবার তো বিমানে ওঠার আগে অ্যালকোহল পরীক্ষা করাননি। যার জেরে ২০১৭ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে তিনমাসের জন্য তাঁর লাইসেন্স সাসপেন্ড করা হয়। তবে বার বার দায়িত্বজ্ঞানহীনের মতো আচরণ করলেও, কড়া পদক্ষেপ করা হয়নি তাঁর বিরুদ্ধে। উল্টে এয়ার ইন্ডিয়ার বিমান পরিচালন বিভাগের এক্সিকিউটিভ ডিরেক্টর নিযুক্ত হন। যা নিয়ে বিস্তর ঝামেলা হয়। আপত্তি তোলা হয় পাইলট অ্যাসোসিয়েশনের পক্ষ থেকে। মামলা পৌঁছয় দিল্লি হাইকোর্টে। যার পর তাঁকে ওই পদ থেকে সরাতে বাধ্য হন বিমান সংস্থা কর্তৃপক্ষ।
আরও পড়ুন: মুখবন্ধ খামে রাফাল চুক্তির তথ্য সুপ্রিম কোর্টে জমা দিল কেন্দ্র
তবে তা ছিল সাময়িক। তার কিছুদিন পরই পাঁচ বছরের জন্য এয়ার ইন্ডিয়া লিমিটেডের পরিচালন বিভাগের ডিরেক্টর পদে বসানো হয় অরবিন্দ কাঠপালিয়াকে। যেখানে অসামরিক বিমান পরিষেবা (ডিজিসিএ)-র আইন অনুযায়ী, প্রথমবার কেউ নিয়ম লঙ্ঘন করলে তিনমাসের জন্য লাইসেন্স সাসপেন্ড করা হয়। দ্বিতীয়বার করলে তিনবছরের জন্য আর তৃতীয়বার হলে সারা জীবনের মতো বাতিল হয়ে যায় লাইসেন্স।
কেবিন ক্রু অ্যাসোসিয়েশনের প্রাক্তন সাধারণ সচিব কে ভি জে রাও জানান, ‘‘এই নিয়ে দ্বিতীয়বার মত্ত অবস্থায় ধরা পড়লেন কাঠপালিয়া। গত বছর বেঙ্গালুরু-দিল্লির একটি বিমানে অ্যালকোহল পরীক্ষা না করিয়েই উঠে পড়েন তিনি। সেই অবস্থাতেই যাত্রা করেন।’’
তিনি যে মত্ত অবস্থায় বিমানে উঠেছিলেন, তার প্রমাণও লোপাট করে দিয়েছিলেন কাঠপালিয়া। যে কারণে চলতি বছরের অগস্ট মাসে তাঁর বিরুদ্ধে বিমান পরিষেবা আইন লঙ্ঘন, প্রমাণ লোপাট এবং বিমান সংস্থায় কর্মরত চিকিৎসকদের প্রভাবিত করার অভিযোগে এফআইআর দায়েরের নির্দেশ দেয় দিল্লি আদালত। অ্যালকোহল পরীক্ষায় ফাঁকি দেওয়া, ভুয়ো নথিপত্র দাখিল, বিমান সংস্থার সঙ্গে প্রতারণা এবং যাত্রীদের নিরাপত্তা নিয়ে ছেলেখেলা করায় গত সপ্তাহে মুম্বইয়ের অন্ধেরি দায়রা আদালতও তাঁর বিরুদ্ধে এফআইআর দায়ের করতে নির্দেশ দিয়েছে।
তাই রবিবারের ঘটনার পর আর তাঁকে রেয়াত করেনি এয়ার ইন্ডিয়া।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy