Advertisement
০২ নভেম্বর ২০২৪

মন্ত্রীদের পরে কর্মীরাও এ বার মোদী-নজরে

সোমবার আপিস খুললে আর দেরিতে যাওয়ার জো নেই। সাউথ ব্লকে বসে কেন্দ্রীয় সরকারি কর্মচারীদের আসা-যাওয়ায় নজর রাখতে চলেছেন হেডমাস্টার নরেন্দ্র মোদী। মন্ত্রীদের উপরে মোদীর নজরদারিতে আগেই তটস্থ ছিল গোটা সরকার। এ বার সেই তালিকায় যোগ হতে চলেছেন কর্মীরাও। হেডমাস্টার তকমায় অবশ্য আপত্তি আছে প্রধানমন্ত্রীর। নিজেকে তিনি বলেন ‘টাস্কমাস্টার’।

দিগন্ত বন্দ্যোপাধ্যায়
নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ১২ সেপ্টেম্বর ২০১৪ ০৩:২৯
Share: Save:

সোমবার আপিস খুললে আর দেরিতে যাওয়ার জো নেই। সাউথ ব্লকে বসে কেন্দ্রীয় সরকারি কর্মচারীদের আসা-যাওয়ায় নজর রাখতে চলেছেন হেডমাস্টার নরেন্দ্র মোদী। মন্ত্রীদের উপরে মোদীর নজরদারিতে আগেই তটস্থ ছিল গোটা সরকার। এ বার সেই তালিকায় যোগ হতে চলেছেন কর্মীরাও।

হেডমাস্টার তকমায় অবশ্য আপত্তি আছে প্রধানমন্ত্রীর। নিজেকে তিনি বলেন ‘টাস্কমাস্টার’। সকলকে দিয়ে কাজ করিয়ে নেওয়ায় সিদ্ধহস্ত। নতুন সরকার আসার পর সরকারি কর্মচারীদের সক্কাল-সক্কাল হাজিরা সুনিশ্চিত করতে মন্ত্রীরা আচমকাই মন্ত্রকের ঘরে-ঘরে টহল দেওয়া শুরু করেছিলেন। তাতে কিছুটা কাজ দিয়েছে বটে। কিন্তু এখন সরকারি কর্মচারীরা ঠিক কখন দফতরে ঢুকছেন, কখন বেরোচ্ছেন, কখন অন্য দফতরে যাচ্ছেন, তার উপরে অনলাইনে নজরদারি করতে চাইছেন মোদী। প্রধানমন্ত্রীর দফতরে বসেই তিনি তৎক্ষণাৎ জানতে পেরে যাবেন সকলের গতিবিধি। সোমবার থেকেই পরীক্ষামূলক ভাবে দিল্লিতে কয়েকটি সরকারি দফতরে চালু হয়ে যাবে এই ব্যবস্থা। ধাপে ধাপে তা ছড়িয়ে দেওয়া হবে সব দফতরে।

কর্মীদের হাজিরা নথিবদ্ধ করতে আগেই অনেক দফতরে বায়োমেট্রিক ব্যবস্থা চালু করা হয়েছিল। আঙুলের ছাপ ও চোখের মণি স্ক্যান করার ব্যবস্থাও রয়েছে। নতুন ব্যবস্থায় ব্যবহার করা হবে কর্মীদের আধার কার্ডের অভিন্ন ছয় অঙ্কের সংখ্যাও। গোটা ব্যবস্থাটি অনলাইন করে তা প্রযুক্তির মাধ্যমে পৌঁছে দেওয়া হবে প্রধানমন্ত্রীর সচিবালয়ে। যার ফলে সব কর্মীদের উপস্থিতি ও গতিবিধির উপরে সরাসরি নজর রাখতে পারবেন প্রধানমন্ত্রী। অনেক সময়ে কোনও আমলা বা কর্মীকে অন্য মন্ত্রকে যেতে হয় বৈঠকের জন্য। নিজের মন্ত্রক থেকে বেরোনো ও অন্য মন্ত্রকে প্রবেশের সময়ও একই ভাবে নিজেদের উপস্থিতি জানান দিতে হবে।

কেন্দ্রীয় তথ্য ও প্রযুক্তি মন্ত্রকের এক কর্তার মতে, প্রথম দিকে আধার কার্ডের সংখ্যা ও বায়োমেট্রিক ব্যবস্থা মেনে পরিচয় জানাতে ত্রিশ সেকেন্ড থেকে এক মিনিটের মতো সময় লাগবে প্রতিটি কমর্চারীর। কিন্তু উপযুক্ত প্রশিক্ষণ দিয়ে এই সময় কর্মচারী প্রতি দশ সেকেন্ডে নামিয়ে আনা সম্ভব। এক একটি বায়োমেট্রিক টার্মিনাল সকাল বা সন্ধ্যায় ‘পিক-আওয়ারে’ ত্রিশ মিনিটে ৩০-৪০ জন কর্মী নিজেদের হাজিরা দিতে পারবেন। প্রতিটি দফতরে ৫০ জন কর্মী পিছু একটি করে টার্মিনালের ব্যবস্থা করা হচ্ছে। যাতে লাইনে কাউকেই বেশিক্ষণ অপেক্ষা করতে না হয়। অনলাইন ব্যবস্থা করার জন্য ওয়াই-ফাই ও অন্যান্য সিম-ভিত্তিক জিএসএম যোগাযোগ ব্যবস্থা কার্যকর করা হচ্ছে। কোনও কর্মীর যদি আধার কার্ড না থাকে, তাহলে দফতরের নোডাল অফিসারের সঙ্গে যোগাযোগ করে শীঘ্র তা করিয়ে নেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। প্রতিটি গুরুত্বপূর্ণ দফতরের গেটেই ২৪ ঘণ্টা নিরাপত্তা কর্মী মোতায়েন থাকে। তাঁর সামনেই এই টার্মিনাল থাকবে। ফলে কেউ যদি দীর্ঘ সময় ধরে দফতরে কাজ করেন, সেটিও নথিবদ্ধ হতে কোনও সমস্যা নেই।

লোকসভা ভোটের প্রচারের সময়ে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহকে আক্রমণ করে নরেন্দ্র মোদী বলতেন, নেতৃত্ব যদি ঠিক থাকে, তাহলে একই আমলাতন্ত্রকে দিয়ে আরও ভালো কাজ করানো যায়। গুজরাতের মুখ্যমন্ত্রী থাকার সময়েও সরকারের কর্মসংস্কৃতি এ ভাবেই বদল করেছিলেন তিনি। এ বারে দিল্লিতেও আমলাদের দিয়ে আরও ভালো কাজ করাতে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ মোদী। তাঁর সরকারের এক মন্ত্রী বলেন, “সরকারি কর্মচারীদের সম্পর্কে মোটের উপর একটি ধারণা তৈরি হয়েছে, তাঁরা কাজ করেন না। এটি আংশিক ভাবে সত্য তো বটেই। এই জমানায় কর্মসংস্কৃতির ভোল কিছুটা বদলাবে। বিশেষত প্রধানমন্ত্রী যখন নজরদারি করছেন।”

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE