রাহুল গান্ধী। ছবি: পিটিআই।
হিন্দি বলয়ের তিন রাজ্যে হারের পরে ইন্ডিয়া জোটের বৈঠকে বিরোধী শিবিরের আক্রমণের মুখে পড়ল কংগ্রেস। সমাজবাদী পার্টি, আরজেডি, তৃণমূল কংগ্রেস-সহ একাধিক বিরোধী দলের নেতারা আজ কংগ্রেসকে মনে করিয়ে দিয়েছেন, পটনা, বেঙ্গালুরু, মুম্বইয়ের বৈঠকের পরে কংগ্রেস পুরোপুরি পাঁচ রাজ্যের বিধানসভা নির্বাচন নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়েছিল। ইন্ডিয়া জোট নিয়ে সক্রিয়তা দেখায়নি। সর্বোপরি ইন্ডিয়ার শরিকদের সঙ্গে বিধানসভা নির্বাচনে কংগ্রেস কোনও রকম আসন সমঝোতায় যেতে চায়নি। কংগ্রেসের নেতাদের জন্যই ভোপালে ইন্ডিয়া-র প্রথম জনসভা ঘোষণা করেও পরে বাতিল করতে হয়েছে। তার ফলে ইন্ডিয়া জোটের ঐক্যে ছন্দপতন হয়েছে।
সূত্রের খবর, ইন্ডিয়া-র বৈঠকে সমাজবাদী পার্টির রামগোপাল যাদব, জেডিইউ-এর লাল্লন সিংহ, আরজেডি নেতা ও বিহারের উপমুখ্যমন্ত্রী তেজস্বী যাদব কংগ্রেসকে দোষারোপ করে বলেন, ইন্ডিয়া জোটে যে গতি এসেছিল, কংগ্রেসের জন্যই তা নষ্ট হয়েছে। সমাজবাদী পার্টি, বাম দলগুলি মধ্যপ্রদেশ, ছত্তীসগঢ়, রাজস্থানে কংগ্রেসের সঙ্গে আসন সমঝোতায় গিয়ে কিছু আসন চেয়েছিল। কমল নাথ, অশোক গহলৌত, ভূপেশ বঘেলরা তা নস্যাৎ করে দেন। কিন্তু তিন জনের কেউই নিজেদের রাজ্যে কংগ্রেসকে জিতিয়ে আনতে পারেননি। অথচ কংগ্রেস এই তিন রাজ্য ও তেলঙ্গানা নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়ায় ইন্ডিয়া নিয়ে সক্রিয়তা পিছনের সারিতে চলে যায়।
এসপি নেতা রামগোপাল মনে করিয়েছেন, লোকসভা নির্বাচনে বিজেপিকে আটকাতে হলে উত্তরপ্রদেশের ৮০টি আসনে বিরোধীদের এককাট্টা হয়ে লড়তে হবে। কংগ্রেস শীর্ষনেতাদের সঙ্গে উত্তরপ্রদেশের রাজ্য কংগ্রেস নেতাদের অনেকেই মায়াবতীর সঙ্গে জোট করতে চাইছেন বলে শোনা যাচ্ছে। কিন্তু তা করতে গেলে কংগ্রেস ভুল করবে। কারণ, বিএসপি-কে ভোট দেওয়া আর বিজেপিকে ভোট দেওয়া এখন একই। সমাজবাদী পার্টির অখিলেশ যাদব স্পষ্ট বার্তা দেন, বিএসপি ইন্ডিয়া জোটে যোগ দিলেও তিনি কোনও ভাবে মায়াবতীর সঙ্গে জোট চান না। বৈঠকের পরে অখিলেশ বলেন, ‘‘উত্তরপ্রদেশে ৮০টি আসনে বিজেপিকে হারাতে পারলে দেশের গণতন্ত্র বাঁচানো যাবে।’’
কংগ্রেসকে সতর্ক করে আরএসপি-র সাধারণ সম্পাদক মনোজ ভট্টাচার্য বলেন, নরম হিন্দুত্বের রাজনীতি করে লাভ হবে না। ইন্ডিয়া জোটের প্রথম জনসভা ভোপালে হবে বলে ঠিক হয়েছিল। কিন্তু ডিএমকে নেতার সনাতন ধর্ম নিয়ে মন্তব্যের জন্য তাঁদের ক্ষতি হবে বলে কমল নাথ একতরফা সিদ্ধান্তে সেই জনসভা নাকচ করে দিয়েছিলেন। তিনি বাগেশ্বর বাবার মতো ধর্মগুরুদের পাশে নিয়ে নরম হিন্দুত্বের রাজনীতি করছিলেন। ছত্তীসগঢ়েও কংগ্রেস নরম হিন্দুত্বের রাজনীতি করেছে বলে মনোজ সমালোচনা করেন। একই সুরে আরও কিছু বিরোধী নেতা বলেন, ইন্ডিয়া জোট হিন্দি বলয়ের রাজ্যগুলিতে যৌথ প্রচারে গেলে কংগ্রেসেরই লাভ হত। কিন্তু কংগ্রেস সেই উদারতা দেখাতে পারেনি। তৃণমূলের ডেরেক ও’ব্রায়েন বলেন, বেঙ্গালুরুর বৈঠকে ‘ইন্ডিয়া’ নামকরণ হয়েছিল। তার পরে আসন সমঝোতা নিয়ে আলোচনা শুরুই
করা যায়নি।
তিন রাজ্যে আসন সমঝোতা না হওয়ার ফলে হার হয়েছে, সেই বিষয়টি তুলে ধরেছেন ডিএমকে-র এম কে স্ট্যালিনও। যিনি রাজ্যে কংগ্রেসের শরিক। ঝাড়খণ্ডে কংগ্রেসের শরিক জেএমএম-এর হেমন্ত সোরেন বৈঠকে আসেননি। কিন্তু দলের সাংসদ মহুয়া মাঝিও একই কথা বলেছেন।
সম্মিলিত চাপের মুখে কংগ্রেস নেতারা কার্যত ভুল মেনে নেন। অন্য দলের সঙ্গে যে দূরত্ব তৈরি হয়েছিল, তা কাটাতে রাহুল গান্ধী ও মল্লিকার্জুন খড়্গে অখিলেশ যাদবদের সঙ্গে আলাদা করে কথা বলেন। চা খান। পরে বৈঠকে এসে সনিয়া গান্ধীও নীতীশ কুমার, লালু প্রসাদ, অখিলেশ, এম কে স্ট্যালিনদের সঙ্গে কুশল বিনিময় করেন। অন্যান্য বিরোধী নেতাদের তাঁরা অনুরোধ করেন, পুরনো কথা ভুলে গিয়ে সবাই যেন একসঙ্গে বিজেপির বিরুদ্ধে লড়াই করেন। সূত্রের খবর, রাহুল গান্ধী বলেন, লোকসভা নির্বাচনের প্রস্তুতি হিসেবে এখন থেকেই জনসংযোগ কর্মসূচি শুরু করে দিতে হবে। সংবাদমাধ্যমের থেকে বিরোধী জোট ‘ইন্ডিয়া’ তেমন সুবিধা পাবে না। তাই বিরোধী শিবিরকে সরাসরি মানুষের কাছে পৌঁছতে হবে। সিপিএমের সীতারাম ইয়েচুরিও জনসংযোগ কর্মসূচির উপরে জোর দেন। ঠিক হয়েছে, খুব শীঘ্রই ইন্ডিয়া-র প্রচার কমিটির বৈঠক ডাকা হবে। সেখানে ইন্ডিয়া-র প্রথম জনসভা, প্রচারের বিষয় নিয়ে আলোচনা হবে।
ফরওয়ার্ড ব্লকের জি দেবরাজন বলেছেন, বিজেপি এখন আশি-নব্বই দশকের দল নয়। তারা এখন নির্বাচনী পরিকল্পনা করে, আরএসএসের সাহায্য নিয়ে, ভোটকুশলী নিয়োগ করে নির্বাচন লড়তে নামে। তাদের সঙ্গে লড়তে হলে বিরোধী শিবিরকেও যথেষ্ট প্রস্তুতি নিয়ে নামতে হবে। রাহুল গান্ধী তাতে সায় দিয়ে বলেন, নরেন্দ্র মোদী-অমিত শাহের জমানায় বিজেপি এখন যে ভাবে নির্বাচনে লড়ে, তার মোকাবিলায় বিকল্প কৌশল
নিতে হবে।
আজ ইন্ডিয়া-র বৈঠকে ভিভিপ্যাট নিয়ে প্রস্তাব পাশ হয়েছে। বিরোধীদের দাবি, অনেক পেশাদার ও বিশেষজ্ঞ ইভিএম হ্যাক করা যায় কি না, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। এখন ভিভিপ্যাট স্লিপ আলাদা বাক্সে জমা পড়ে। তা ভোটারদের হাতে তুলে দেওয়া হোক। ইন্ডিয়ার দাবি, সমস্ত ইভিএমে ভিভিপ্যাট থাকতে হবে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy