দর্শন: বৃহস্পতিবার তাজমহলে যোগী আদিত্যনাথ। ছবি: পিটিআই।
তাজমহল নিয়ে অবশেষে ক্ষত মেরামতিতে নামতে বাধ্য হলেন উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ। আজ আগরায় গিয়ে তাজ দর্শন করে তিনি বললেন, ‘‘কে কবে তাজমহল বানিয়েছে সেটা বড় কথা নয়। তাজমহল ভারতীয় সংস্কৃতির অঙ্গ।’’
এই আদিত্যনাথই কিন্তু গত মে মাসে মুখ্যমন্ত্রী হিসাবে প্রথম আগরা সফরে তাজমহল দর্শন এড়িয়ে গিয়েছিলেন। তার পর গত ছ’মাসে যমুনা দিয়ে অনেক জল বয়ে গিয়েছে আর একের পর এক বিতর্কে জড়িয়েছে তাজ। যার সূত্রপাত, উত্তরপ্রদেশ পর্যটনের বুকলেটে তাজের অনুপস্থিতিকে ঘিরে। এর পর বিজেপি বিধায়ক সঙ্গীত সোম তাজমহলকে ভারতীয় সংস্কৃতির কলঙ্ক বলে দেগে দেন, শাহজাহানকে হিন্দু-বিদ্বেষী হিসাবে তুলে ধরে বিভেদের রাজনীতিকেও টেনে আনেন। বিজেপি নেতা বিনয় কাটিহার দাবি করেছেন, তাজমহলের জায়গায় একটি শিবমন্দির ছিল। তাই তাজমহলের নাম পাল্টে তাজ মন্দির করা উচিত। দু’দিন আগে তাজ চত্বরে শিবস্তোত্র পাঠ করেন আদিত্যনাথের হাতে গড়া হিন্দু যুব বাহিনীর সদস্যরা।
কিন্তু ঘটনা হল, তাজমহল বলে কথা! বিশ্ব দরবারে ভারতের জনপ্রিয়তম পর্যটন-আকর্ষণ! তাকে নিয়ে নেতিবাচক রাজনীতি পছন্দ করছিলেন না নরেন্দ্র মোদী। এই অযথা বিতর্কে দেশের ভাবমূর্তি খারাপ হচ্ছে বলে মনে করছিল পর্যটন ও সংস্কৃতি মন্ত্রকও। কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব চাইছিল, অবিলম্বে তাজ নিয়ে সমস্ত বির্তকের অবসান ঘটাক যোগী সরকার। মুখ খুলে অবস্থান স্পষ্ট করুন মুখ্যমন্ত্রী। সেটাই আজ করলেন যোগী। তবে তার মধ্যে ফতেপুর সিক্রিতে বিদেশি পর্যটকদের মারধরের ঘটনা তাঁকে অস্বস্তি জিইয়ে রাখল।
আরও পড়ুন: এক রাতেই বদলে গেল গল্প, খুনি অভিযোগকারী স্বামীই
স্বচ্ছতায় জোর দিতে আজ সকালে প্রথমে তাজমহলের পশ্চিম প্রবেশ দ্বারের সামনের চত্বরে ঝাড়ু দেন মুখ্যমন্ত্রী। তার পরে শুরু করেন তাজ দর্শন। সঙ্গে ছিলেন রাজ্যের পর্যটনমন্ত্রী রীতা বহুগুণা জোশী ও প্রায় পাঁচশো বিজেপি সমর্থক। আগরার জনসভা থেকে পরে আদিত্যনাথ বলেন, ‘‘ভারতের শ্রমিক-কৃষকের ঘাম দিয়ে তৈরি হয়েছে এই তাজমহল। এ আমাদের ঐতিহ্য। ভারতের অন্যতম দুর্মূল্য রত্ন।’’ বিজেপি সূত্র বলছে, আগামী দিনে তাজমহল নিয়ে সরকার যে কোনও নেতিবাচক প্রচার সহ্য করবে না, তা আজ স্পষ্ট করে দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। তাজমহল নিয়ে বিরূপ প্রচারে ব্যবসায় ক্ষতি হচ্ছিল বলে সরব হয়েছিলেন আগরার ব্যবসায়ীরা। আজ তাঁদেরও আশ্বাস দিয়ে যোগী বলেন, ‘‘ব্যবসায়ীদের স্বার্থ রক্ষার বিষয়টি সরকার দেখবে। পর্যটন-সহ আগরার সার্বিক উন্নতিতে ২৩৫ কোটি টাকার প্রকল্পের ছাড়পত্র দেওয়া হয়েছে।’’ তবে যোগীর এই পদক্ষেপে কতটা কাজ হবে তা নিয়ে সংশয় যথেষ্টই রয়েছে। যোগীর তাজ দর্শন চলাকালীনই আগরা (উত্তর)-র বিধায়ক জগন প্রসাদ গর্গকে বলতে শোনা যায়, ‘‘একাধিক ইতিহাসবিদ বিশ্বাস করেন এখানে অতীতে শিবের মন্দির ছিল। মোগল আমলে তা ভেঙে তাজমহল বানানো হয়েছিল।’’
যোগীর দলের সভাপতি অখিলেশ যাদবের দাবি, ‘‘দেখুন, সময় কী ভাবে বদলে যায়! এখন মুখ্যমন্ত্রী তাজ চত্বরে ঝাড়ু লাগাচ্ছেন। অনিচ্ছা সত্ত্বেও কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের চাপেই আজ মুখ খুলতে হল আদিত্যনাথকে।’’ কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের চাপ যে ছিল তা মেনে নিচ্ছেন রাজ্য বিজেপি নেতৃত্বও। দলেরই এক নেতার কথায়, ‘‘তা না হলে যে লোক ক’দিন আগে বিহারে গিয়ে বলে এসেছেন, তাজমহল ভারতের সংস্কৃতির অঙ্গ নয়! বিদেশিদের উপহার হিসেবে তাজমহলের প্রতিমূর্তির পরিবর্তে গীতা দেওয়া উচিত। তাঁর মুখে আজ তাজের প্রশংসা!’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy