গায়ে পেট্রল ঢেলে আগুন ধরিয়ে দেয় অভিযুক্তেরা। প্রতীকী ছবি।
সাহায্যের জন্য চিৎকার করছেন মহিলা। ঢুকে পড়ছেন আশপাশের বাড়িতে। প্রাণপণে ফোন করে চলেছেন পুলিশকে। কিন্তু এগিয়ে আসছে না কেউ। অথচ, যখন দুষ্কৃতীরা তাঁর গায়ে আগুন ধরিয়ে দিল, সেই দৃশ্য মোবাইলবন্দি করতে মানুষের উৎসাহের অভাব ছিল না। রাজস্থান থেকে উঠে আসা আরও একটি অমানবিক ঘটনার খবরে শিউরে উঠছে দেশ। সম্প্রতি এই রাজ্যেই ‘উচ্চবর্ণের জন্য নির্দিষ্ট’ কলসি থেকে জল খাওয়ার ‘অপরাধে’ মিটিয়ে মারা হয় এক দলিত বালককে। কয়েক দিনের মধ্যেই ফের প্রকাশ্যে খুনের ঘটনা ঘটল রাজস্থানে।
গ্রামের নাম রাইসার। রাজস্থানের রাজধানী জয়পুর থেকে প্রায় আশি কিলোমিটার দূরে। ১০ অগস্ট সকাল ৮টা। ছ’বছরের ছেলের হাত ধরে শিক্ষিকা অনিতা রেগার যাচ্ছিলেন স্কুলে। পথে তাঁর উপরে চড়াও হয় ছ’জন লোক। বছর বত্রিশের অনিতা স্থানীয় একটি বাড়িতে ঢুকে পড়ে পুলিশকে ফোন করেন। জানান, কোথায় আছেন। কী পরিস্থিতি। কিন্তু কিছুতেই কিছু হয়নি। অভিযোগ, পুলিশ আসেনি যথাকালে। তার পরেই তাঁর গায়ে পেট্রল ঢেলে আগুন ধরিয়ে দেয় অভিযুক্তেরা।
খবর পেয়ে অনিতার স্বামী তারাচাঁদ পরিজনদের নিয়ে গিয়ে তাঁকে উদ্ধার করেন। ৭০ শতাংশ দগ্ধ অবস্থায় ভর্তি করানো হয় স্থানীয় সরকারি হাসপাতালে। পরে সেখান থেকে স্থানান্তর করা হয় জয়পুরের এসএমএস মেডিক্যাল কলেজে। হাসপাতালের শয্যা থেকে অনিতার বয়ানের ভিডিয়ো ছড়িয়েছে সমাজমাধ্যমে। সপ্তাহভর লড়াইয়ের শেষে, মঙ্গলবার রাতে অনিতার মৃত্যু হয়েছে হাসপাতালে। তারাচাঁদ জানান, অভিযুক্তেরা তাঁদের আত্মীয়। গত ১২ অগস্ট রাজস্থান পুলিশের ডিজির সঙ্গে দেখা করেন তারাচাঁদ। তাঁর অভিযোগ, রাইসারের এসএইচও, এক এএসআই এবং এক পুলিশকর্মী অপরাধীদের সঙ্গে জড়িত। তাই পুলিশ কোনও ব্যবস্থা নেয়নি।
পুলিশ স্থানীয় মানুষজনকে পুড়িয়ে মারার ভিডিয়ো ইন্টারনেটে প্রকাশ করতে বারণ করেছিল। কিন্তু, অনিতার মৃত্যু খবর চাউর হতেই সেই ভিডিয়োও ছড়িয়ে পড়েছে সমাজমাধ্যমে। তবে অভিযোগ অস্বীকার করছে পুলিশ। এএসপি (হেডকোয়ার্টার্স) ধর্মেন্দ্র যাদব বলেন, ‘‘পুলিশ বিষয়টির তদন্ত করছে। অভিযুক্তদের দ্রুত গ্রেফতার করা হবে।’’
স্থানীয় কিছু সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদনে দাবি করা হয়েছে, অনিতা অভিযুক্তদের কয়েক লক্ষ টাকা ধার দিয়েছিলেন। সম্প্রতি তা ফেরত চাওয়ায় হেনস্থা হতে হচ্ছিল। তাঁকে গালিগালাজ আর মারধর করছিল অভিযুক্তেরা। সে ব্যাপারে গত ৭ মে অভিযোগও দায়ের করেন তিনি। কিন্তু অভিযোগ, এফআইআর নিয়ে আর কোনও পদক্ষেপ পুলিশ করেনি।
জালোর জেলার সুরানা গ্রামের ন’বছরের ইন্দ্র মেঘওয়াল বেসরকারি স্কুলের ছাত্র ছিল। তেষ্টার চোটে ‘উচ্চবর্ণের জন্য নির্দিষ্ট’ কলসি থেকে জল খাওয়ায় শিক্ষকের মারের চোটে মৃত্যু হয়েছে তার। আজই পরিবারটির সঙ্গে দেখা করতে যাওয়ার পথে জোধপুরের বিমানবন্দরে আটক করা হয় ‘ভীম আর্মি’-র প্রধান চন্দ্রশেখর আজ়াদকে। আর তার মধ্যে নতুন করে দগ্ধ শিক্ষিকার মৃত্যুসংবাদ প্রশাসনের মুখ পুড়িয়েছে। বিধানসভা নির্বাচনের বছরখানেক আগে আরও বেকায়দায় পড়েছে রাজ্যের কংগ্রেস সরকার।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy