Advertisement
২২ নভেম্বর ২০২৪
Board Examination

শরীর সায় দিত না, লুকিয়ে রাত জেগে মেয়ের বই-খাতা থেকে পড়ে মেয়েরই সঙ্গে ম্যাট্রিক পাশ!

পরিস্মিতা জানান, ১৭ বছর আগে ম্যাট্রিক পরীক্ষা দেওয়ার আগেই দারিদ্র্য ও পরিবারের চাপে তাঁকে বিয়ের পিঁড়িতে বসতে হয়েছিল।

An image of the mother and the daughter

বাড়িতে মা পরিস্মিতার সঙ্গে মেয়ে শিবানী দাস। নিজস্ব চিত্র।

রাজীবাক্ষ রক্ষিত
গুয়াহাটি শেষ আপডেট: ২৮ মে ২০২৩ ০৮:৩০
Share: Save:

মেয়ে ঘুমোলে, পাড়া জুড়োলে তখন তিনি সংসারের ভারী জোয়ালটা খাটের পাশে আলতো করে কাঁধ থেকে নামিয়ে রাখেন। শরীর জিরেন চায়। কিন্তু মনের কড়া শাসনে তিনি হাত বাড়ান মেয়ের বন্ধ বইখাতার দিকে। ওল্টাতে থাকেন বই। মেয়ের বাতিল খাতার পাতায় পাতায় খোদাই হতে থাকে পরিস্মিতা দাসের নোট। বেশি রাত পর্যন্ত পড়ার উপায় নেই। ভোর থেকে উঠে তাঁর মুখের দিকেই তাকিয়ে থাকবে বাড়ির গরু, ছাগল, হাঁস, মুরগির দল। রান্নাবাড়া শুরু করে ছেলে-মেয়েদের স্কুলে পাঠাতে হবে। মেয়ে স্কুলে গেলেই ফের সুযোগ আসে। আবার পড়তে বসেন অসমের মাজুলির ডেকা শেনচোয়া গ্রামের পরিস্মিতা দাস। গ্রামের মানুষের সামনে লজ্জায় বলতে পারেনি মনের ইচ্ছের কথা। কিন্তু উৎসাহ দিয়েছে মেয়ে শিবানী আর তাঁর স্কুলের কয়েক জন শিক্ষক। ১৭ বছর ধরে যে অপূর্ণ সাধ মনের কোনে গুমরে থেকেছে শেষ পর্যন্ত সেই সাধ পূরণ করেই দেখালেন পরিস্মিতা। অমন কুড়িয়ে-বাড়িয়ে লেখাপড়া করেও মেয়ের সঙ্গে পরীক্ষায় বসে পাশ করেফেললেন ম্যাট্রিক!

পরিস্মিতা জানান, ১৭ বছর আগে ম্যাট্রিক পরীক্ষা দেওয়ার আগেই দারিদ্র্য ও পরিবারের চাপে তাঁকে বিয়ের পিঁড়িতে বসতে হয়েছিল। এত বছরের সাংসারিক চাপের মধ্যেও ম্যাট্রিক পাশ না করার সেই হতাশা মনে কোনে ঘাঁটি গেড়ে বসেছিল। তাই মেয়ে নবম শ্রেণীর পড়া শুরুকরলে তিনিও মনে মনে ভেবে নেন, এই সুযোগ।

স্বামী কর্মসূত্রে বাইরে থাকেন। পরিস্মিতা মেয়ের বই নিয়ে পড়া শুরু করে দেন। কুঁড়ের দাওয়ায় বসে বলছিলেন, “মেয়েকে প্রাইভেট টিউটর পড়াতে আসতেন। আমি নানা ছুতোয় পাশে গিয়ে বসে থাকতাম। স্যর মনে মনে হয়ত বিরক্ত হতেন, ভাবতেন নজরদারি করছি। কিন্তু আমি স্যরের পড়ানো মাথায় গেঁথে রাখতাম। রাতে মেয়ে পড়া শেষে ঘুমোতে গেলে স্যরের নোটের যে-টুকু মনে থাকত তা বাতিল খাতায় টুকে রাখতাম।”

মেয়ে সব জানতে পরে স্কুলের প্রধান শিক্ষককে বলে। তিনি বলেন, পরীক্ষা দিতে। এ বার মেয়েকে নিয়ে যখন পরীক্ষার প্রথম দিন পরীক্ষাকেন্দ্রে যান মা, গ্রামের মানুষ তখনও জানত না। কিন্তু মেয়েকে পরীক্ষাকেন্দ্রে ঢুকিয়ে দিয়েও মা বেরিয়ে না আসায় বাকি অভিভাবকদের সন্দেহ হয়। বাইরে বেরোনোর পরে জেরায় জেরবার পরিস্মিতা জানাতে বাধ্য হন তিনিও মেয়ের সঙ্গেই ম্যাট্রিক দিচ্ছেন। তাতে লজ্জা বাড়ে, চাপও। কিন্তু পিছিয়ে এলে চলত না। তাই পরীক্ষা শেষ করেন।

ফল বেরোলে দেখা যায় মা ও মেয়ে দু’জনই দ্বিতীয় ডিভিশনে পাশ করেছে। শিবানী বলে, “আমি প্রথম বিভাগ পাব ভেবেছিলাম, কিন্তু ফল ভাল হয়নি। তবে, মায়ের ফল সব দুঃখ ভুলিয়ে দিয়েছে। মা আমার থেকেও পড়াশোনায় বেশি ভাল। বাড়ির কেউ মানতেই চায়নি মা পাশ করবে। কিন্তু আমার বিশ্বাস ছিল।আজ মা শুধু আমার নয়, গ্রামের সব মেয়ের অনুপ্রেরণা।”

অন্য বিষয়গুলি:

Board Examination Mother-Daughter guwahati
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy