মন্দিরে নিয়ে যাওয়া হয়েছে ‘রামলালা’কে। ছবি: পিটিআই।
যাবতীয় আনন্দ-আয়োজন তো রামকে ঘিরেই। বিরাট ক্রেনে রামলালার মূর্তি গত রাতেই নিয়ে আসা হয়েছিল মন্দির চত্বরে। আর আজ ‘জয় শ্রীরাম’ ধ্বনির মধ্যে অরুণ যোগীরাজের তৈরি সেই মূর্তি স্থাপন করা হল রামমন্দিরের গর্ভগৃহে। তার আগে করা হল বিশেষ পুজো।
তবে অযোধ্যামুখী ভিড় যখন রামলালা দর্শনে উদ্গ্রীব, সেই ভিড়ে দেখা মিলল তাঁদেরও। সংখ্যায় কম। এসেছেন ‘নির্যাতিতা মা’র সঙ্গে দেখা করতে, নেপালের রাজধানী কাঠমান্ডুর কাছের গ্রাম বীরপাণি থেকে।
রাম নন, তাঁদের ঘরের মেয়ে জানকী।
রামায়ণ বলে, মিথিলার রাজা জনকের কন্যা জানকী বা সীতা। আর প্রাচীন যুগের জনকনগরীর একাংশ এখন নেপাল ও বিহারের অন্তর্গত। তাই জনা চল্লিশের দলটি এসেছে জানকীর সুখ-দুঃখের খবর নিতে, নিজেদের মনের কথা ভাগ করে নিতে। নেপাল পুলিশের প্রাক্তন কর্মী ধুরবা-র নেতৃত্বে আসা দলটির অধিকাংশই মহিলা। আজ ভোর ৬টায় স্নান সেরে রামমন্দির দর্শনে প্রস্তুত দলের সদস্যরা। প্রশ্ন করতেই বললেন, ‘‘যাচ্ছি নির্যাতিতা মা’র কাছে।’’
গোটা অযোধ্যা যখন রামময়, তখন ‘নির্যাতিতা মা’? দলের প্রবীণা সদস্য মুক্তি বললেন, ‘‘মনে করে দেখো, কত পরীক্ষা, কত কষ্টের মধ্যে দিয়ে যেতে হয়েছে আমাদের ঘরের মেয়েকে। বিয়ে হল। রাজসুখ সহ্য হল না। ছুটল স্বামীর সঙ্গে জঙ্গলে। তার পরে রাবণ অপহরণ করল। রাবণ বধ করে তাকে উদ্ধার করা হল তো দিতে হল অগ্নিপরীক্ষা। সেখানেও শেষ নয়। সন্তান জন্মের পরেও একাধিক বার পরীক্ষা দিতে হয়েছিল। যে মেয়েকে এত পরীক্ষার মধ্যে দিতে যেতে হয়, সে তো আসলে নির্যাতিতা। তাই আমাদের কাছে জানকী আজও নির্যাতিতা মা হিসেবে পরিচিত।’’ ভারতের সঙ্গে যে রোটি-বেটির সম্পর্ক, তা মনে করিয়ে মুক্তিদের আক্ষেপ, মহিলাদের উপর নির্যাতন এখনও একই রকম ভাবে হয়ে চলেছে। শত রামমন্দির প্রতিষ্ঠাতেও যা থামে না।
আর ধুরবার কথায়, ‘‘ রামমন্দিরের উদ্বোধন হচ্ছে। দীর্ঘ দিনের দাবি পূরণ হতে চলেছে। নেপালের মানুষও দীর্ঘ দিন ধরে এই শুভ মুহূর্তের অপেক্ষা করছিল।’’ রামচন্দ্রের ‘শ্বশুরবাড়ির দেশ’ থেকে তাই উপহার আসার বিরাম নেই। মন্দির কর্তৃপক্ষ সূত্রের খবর, রামলালার যে কালো রঙের মূর্তিটি তৈরি করা হয়েছে, তা কালো রঙের শালগ্রাম শিলা দিয়ে তৈরি করা হয়েছে। মূর্তি তৈরির জন্য নেপালের কালী গণ্ডকী নদীতে পাওয়া দু’টি শালগ্রাম শিলা মন্দির কর্তৃপক্ষকে পাঠিয়েছিল নেপাল।
এ ছাড়া, জনকপুরের রামজানকী মন্দির থেকে আজ বিভিন্ন ধরনের গয়না, বাসনপত্র, জামাকাপড়, মিষ্টি নিয়ে যাত্রা শুরু করেছে গাড়ির কনভয়। ২০ জানুয়ারি কনভয় পৌঁছবে অযোধ্যায়, যাতে উপহারগুলি অভিষেকের দিন ব্যবহার করা যায়। ইতিমধ্যেই নেপালের বিভিন্ন মঠ ও মন্দির থেকে এসেছে প্রায় তিন হাজার উপহার। যেগুলির মধ্যে রয়েছে পাদুকা, গয়না ও পোশাক।
ইতিমধ্যে অযোধ্যার ন্যায় ঘাট (বর্তমানে লতা মঙ্গেশকর চক) থেকে হনুমান গড়হি বা হনুমান মন্দির পর্যন্ত ভাঙাচোরা, পুরনো হাভেলির ইতিহাস মুছে ফেলা হয়েছে। বৈচিত্র্যকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে এক ধাঁচের, এক লয়ের দোকান ঘর। একই ধাঁচে লেখা দোকানের নাম, যা রাঙানো রয়েছে একই রঙ— হালকা গেরুয়ায়। প্রশাসনের নির্দেশে যা মানতে বাধ্য হয়েছেন দোকানি বা বাড়ির মালিকেরা। এরই মধ্যে ব্যতিক্রম দু’-একটি পুরনো বাড়ি। তবে বড় ব্যবসায়ীরা যে ভাবে টাকার থলি নিয়ে ঘোরা শুরু করেছেন, তাতে ওই পুরনো বাড়িগুলির আয়ু নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে।
হনুমান গড়হি থেকে রাম মন্দিরের অস্থায়ী তাঁবু পর্যন্ত রাস্তা এখন অতীত। যে রাস্তায় এক সময়ে অন্তত আধ ডজন বার নিরাপত্তা সংক্রান্ত পরীক্ষা হত, আজ সেখানে নিশ্চিন্ত চলাফেরা। এমনকি, বিতর্কিত স্থলের ছবি তুলতে দেখেও না দেখার ভিড় নিরাপত্তারক্ষীদের। যথাসম্ভব চওড়া করা হয়েছে হনুমান গড়হি থেকে রাম মন্দিরে যাওয়ার মূল সড়কটি। অটো চলাচল নিষিদ্ধ করে, চালানো হচ্ছে ইলেকট্রিক বাস। চালক, কনডাক্টর-সহ যা নিয়ে আসা হয়েছে কানপুর থেকে।
কিন্তু উদ্বোধনের যেখানে চার দিনও বাকি নেই, সেখানে আসল প্রশ্ন তো মন্দিরের কাজ শেষ হওয়া নিয়েই। শেষ মুহূর্তে রাত জেগে প্রশাসন কাজ করছে বটে, কিন্তু তাতে সারা বছরের খামতি ঢাকবে কি না, তা নিয়ে সংশয় রয়েছে। মন্দির শেষ হওয়ার আগেই রামলালার মূর্তির প্রাণপ্রতিষ্ঠা বিতর্কে শঙ্করাচার্যরা মুখ খোলায় অস্বস্তিতে গেরুয়া শিবির। তাই মন্দির প্রাঙ্গণে নরেন্দ্র মোদী পা দেওয়ার আগে অন্তত রামমন্দিরের প্রবেশ পথ তৈরির কাজ যাতে শেষ করা যায়, তা নিশ্চিত করতে উঠে পড়ে লেগেছেন মন্দির কর্তৃপক্ষ। তবে সময়ের সঙ্গেএই অসম যুদ্ধে জেতা যে কঠিন, স্পষ্ট তার ইঙ্গিতও।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy