শিশুটির বাবা তাকে নিজের গাড়িতে তোলার চেষ্টা করতেই শিশুটি বাধা দেয়। হাত ছাড়িয়ে ছুটে যায় আদালত কক্ষের দিকে। গ্রাফিক— শৌভিক দেবনাথ।
মামলা চলছিল মাতৃহারা একটি শিশুর লালন-পালনের দায়িত্ব নিয়ে। সেই মামলার একদিকে ছিলেন শিশুটির বাবা। আর উল্টো দিকে ছিলেন শিশুটির মামারবাড়ির আত্মীয়স্বজন— দাদু, দিদিমা, মামা। দীর্ঘদিন ধরে চলা সেই মামলায় শেষ পর্যন্ত বাবাকেই শিশুটির দায়িত্বভার অর্পণ করে আদালত। কিন্তু দেখা গেল সেই রায়ে খুশি নয় শিশুটি। বাবা তাকে সঙ্গে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করতেই সে বাবার হাত ছাড়িয়ে প্রাণপণ ছুটল আদালত চত্বরের অন্য দিকে। যেখানে দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করছিলেন শিশুটির দাদু-দিদা, মৃতা মায়ের আত্মীয়েরা।
বম্বে হাই কোর্ট চত্বর এমনই একপ্রস্ত সিনেমার মতো দৃশ্য প্রত্যক্ষ করল মঙ্গলবার। যে শিশুটির দায়িত্ব নিয়ে মামলা, তার বয়স ১১। বছর তিনেক আগে ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু হয় তার মায়ের। তার পর থেকেই শিশুটির লালন-পালনের দায়িত্ব কে নেবে, তা নিয়ে শুরু হয় মামলা। প্রথমে হাই কোর্ট তার পর সুপ্রিম কোর্টও শিশুটিকে বড় করার দায়িত্ব বাবাকেই দেয়। কিন্তু তার পরও আদালতের নির্দেশ মেনে শিশুটিকে বাবার কাছে ফেরাননি তার মায়ের আত্মীয়েরা। যার জেরে আবার একটি মামলা হয়। মঙ্গলবার সেই মামলারই শুনানি ছিল বম্বে হাই কোর্টে। তবে মামলার রায় ঘোষণার পর শিশুটির বাবার হাত ছাড়িয়ে পালিয়ে যাওয়ার ঘটনা ঘিরে আদালত চত্বরেই তীব্র বিবাদ শুরু হয় শিশুটির বাবা এবং মায়ের আত্মীয়দের মধ্যে। যার জেরে রায় ঘোষণার পরেও আবার বসে আদালত।
মঙ্গলবার দুপুর আড়াইটে নাগাদ শিশুটির দায়িত্ব বাবাকে দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছিলেন বম্বে হাই কোর্টের বিচারপতি এএস গড়কড়ি এবং বিচারপতি পিডি নায়েকের ডিভিশন বেঞ্চ। তার কিছু ক্ষণ পরে শিশুটির বাবা তাকে নিজের গাড়িতে তোলার চেষ্টা করতেই শিশুটি বাধা দেয়। বাবার হাত ছাড়িয়ে ছুটে যায় আদালতের মূল ভবনের দিকে। শিশুর আপত্তির কথা জানিয়ে এর পর দু’পক্ষই ফিরে যান আদালতে। আদালত অবিলম্বে মামলাটির আবার শুনানির নির্দেশ দেয়।
শিশুটির মামারবাড়ির তরফের আইনজীবী ঘটনাটির ভিডিয়ো আদালতকে দেখানোর প্রস্তাব দেয়। কিন্তু আদালত সে ব্যাপারে কোনও আগ্রহ না দেখিয়ে ওই আইনজীবীকে পাল্টা তিরস্কার করে। দুই বিচারপতির বেঞ্চ পর্যবেক্ষণ করে, ওই আইনজীবী আদালতের নির্দেশ অমান্য করে তাঁর মক্কেলকে ভুল পরামর্শ দিচ্ছে। আদালতকে অগ্রাহ্য করার এই প্রবণতা নিয়ে তাঁকে সতর্ক করে আদালত আরও একবার জানিয়ে দেয় শিশুটির দায়িত্ব তার বাবাকেই দিতে হবে।
এই মামলায় এর আগেও শিশুটির বাবা অভিযোগ করেছিলেন, তাঁর সন্তানকে ভুল বুঝিয়ে তাঁর কাছে আসতে দিচ্ছেন না তাঁর প্রয়াত স্ত্রীর আত্মীয়েরা। মঙ্গলবার সে ব্যাপারে কিছু না বললেও আদালত শিশুটির দায়িত্ব হস্তান্তরের নির্দেশ দেয় শিশুটির মামারবাড়ির সদস্যদের। মুম্বইয়ের কস্তুরবা মার্গ থানায় শিশুটির দায়িত্ব হস্তান্তর করার নির্দেশ দেওয়া হয়। এ ব্যাপারে শিশুটির বাবার আইনজীবী হস্তান্তরের প্রক্রিয়াটি তাঁর মক্কেলের বাড়ির নিকটবর্তী থানায় করার আর্জি জানালে আদালত তাকেও ভর্ৎসনা করে। বিচারপতিরা বলেন, ‘‘হয় শিশুটির বাবা কোর্টের নির্দেশ যেমন রয়েছে ঠিক সেই ভাবেই মানুন, নয়তো পুরোপুরি ছেড়ে দিন।’’ আদালতের এই নির্দেশের পর আর বিতর্ক গড়ায়নি। তবে আদালতের শুনানি কক্ষের বাইরের এই ঘটনা নাটকীয়তায় যে আদালত কক্ষের নাটক এমনকি, বহু সিনেমার টানটান মুহূর্তের উত্তেজনাকে টেক্কা দিয়েছে, তা মেনে নিয়েছেন প্রত্যক্ষদর্শীরা।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy