বেঙ্গালুরুতে স্ট্যান স্বামীর স্মরণে প্রার্থনাসভা। বুধবার। ছবি পিটিআই।
ফাদার স্ট্যান স্বামীর মৃত্যুকে ‘সুপরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড’ আখ্যা দিয়ে এনআইএ-র কয়েক জন অফিসার এবং প্রাক্তন জেল সুপারের কঠোর শাস্তি চেয়ে বুধবার সারা দিন অনশন পালন করলেন তালোজা কারাগারে বন্দি এলগার পরিষদ মামলার ১০ জন অভিযুক্ত। স্বজনদের মাধ্যমে তাঁরা এই খবর ও একটি বিবৃতি কারাগারের বাইরে পাঠিয়েছেন।
ভীমা কোরেগাঁওয়ে ২০১৮-র ১ জানুয়ারির অনুষ্ঠানে ‘উস্কানিমূলক’ বক্তৃতা দেওয়ার অপরাধে ‘শহুরে মাওবাদী’ তকমা নিয়ে এই মুহূর্তে নবি মুম্বইয়ের তালোজা জেলে বন্দি রয়েছেন ১০ জন, সামাজিক ন্যায় ও মানবাধিকার কর্মী হিসেবে যাঁরা পরিচিত। ঝাড়খণ্ডের আদিবাসীদের সমস্যা নিয়ে কাজ করা ৮৪ বছরের ফাদার স্ট্যান স্বামীও ছিলেন এই জেলেই। রবিবার অসুস্থ অবস্থায় তাঁকে হাসপাতালে নিয়ে গিয়ে ভেন্টিলেটরে দেওয়ার পরে সোমবার দুপুরে তিনি মারা যান। জামিন না-পেয়ে ৯ মাস জেলে অবর্ণনীয় পরিস্থিতিতে বন্দি থাকার পরে অশীতিপর, অসুস্থ, অশক্ত ফাদারের এই মৃত্যুতে গোটা দুনিয়ায় নিন্দার ঝড় উঠেছে। তালোজা জেলে বন্দি এলগার পরিষদ মামলার ১০ জন অভিযুক্ত রোনা উইলিয়মস, সুরেন্দ্র গাডলিং, সুধীর ধাওয়ালে, মহেশ রাউত, অরুণ ফেরেইরা, ভার্নন গনজ়ালভেস, গৌতম নবলখা, আনন্দ তেলতুম্বডে, রমেশ গাইচর এবং সাগর গোর্খে বিবৃতিতে জানিয়েছেন, ফাদারের মৃত্যু যে ‘সুপরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড’— এ বিষয়ে তাঁদের বিন্দুমাত্র সন্দেহ নেই। ‘জেল কর্তৃপক্ষের অবহেলা, উদাসীন আদালত এবং তদন্তকারী এনআইএ অফিসারদের বদমাইসির ফলে’ এ ভাবে মারা যেতে হল সারা জীবন শান্তির বাণী প্রচার করা জেসুইট পাদ্রী স্ট্যান স্বামীকে। তালেজা জেলের প্রাক্তন সুপার কৌস্তুব কার্লেকর এবং এলগার পরিষদ মামলার তদন্ত করা এনআইএ-র অফিসারেরা বর্ষীয়ান ফাদারকে হেনস্থার বিন্দুমাত্র সুযোগ কখনও হাতছাড়া করেননি। পার্কিনসন রোগে অসুস্থতার কারণে তাঁর খাবার তরল করে খাওয়ার জন্য অত্যাবশ্যক যে ‘সিপার’, সে’টি পর্যন্ত এঁরা ব্যবহার করতে দিতেন না। এর জন্যও আইনি লড়াই করে আদালতের অনুমতি নিতে হয়েছে ফাদারকে। মানুষ খুনের আইনি ধারা (৩০২)-য় মামলা দায়ের করে এই মৃত্যুর বিচারবিভাগীয় তদন্তের দাবি জানিয়েছেন ফাদারের সহ-বন্দিরা।
বিবৃতিতে বলা হয়েছে— যদিও কারাগারের অন্য অংশে থাকেন, তবু ফাদারের মৃত্যুতে তাঁরা এক বার জড়ো হয়ে দু’মিনিট নীরবতা পালন করেছেন। জেলের মধ্যেই ছোট আকারে স্মরণসভাও করেছেন একটা। মামলায় তিন মহিলা অভিযুক্ত সোমা সেন, সুধা ভরদ্বাজ এবং জ্যোতি জগতাপকে সম্প্রতি সরিয়ে মুম্বইয়ের বাইকুল্লা আদালতে রাখা হয়েছে।
পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এ দিন স্ট্যান স্বামীর মৃত্যু নিয়ে সরব হয়েছেন। তিনি বলেন, “স্ট্যান স্বামী যে ভাবে মারা গেলেন, তা খুব দুর্ভাগ্যজনক। যথাসময়ে চিকিৎসাটুকুও তিনি পাননি।” এলগার পরিষদ মামলার অভিযুক্তদের বিষয়ে মমতা বলেন, “আমরা সবাই মিলে রাষ্ট্রপতিকে চিঠি লিখেছি। নির্দিষ্ট কিছু রাজনৈতিক কারণে এঁদের নিশানা করা হয়েছে। ছেড়ে দেওয়া উচিত এঁদের। ৬০ বা ৬৫ বছরের বেশি বয়স্ক যাঁরা জেলে রয়েছেন, এই অতিমারির সময়ে তাঁদের সকলকেই ছেড়ে দেওয়া উচিত।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy