“গলার অবস্থা ভাল না, তাই খাচ্ছি।” মঙ্গলবার বিকেলে সোদপুর রাসমণি মাঠে প্রচারসভাটা একটু অন্য ভাবেই শুরু করলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। কথা বলতে গিয়ে মুখ্যমন্ত্রীর ভাষণ যখন চড়ায় উঠছে, বাদ সাধল মাইক। থামলেন মমতা। বললেন, “আর কী? আমিও সারা দিন রোদে রোদে ঘুরছি। আমার ছুটি হয়ে গেল।” ছবি: সুমন বল্লভ
বিজেপিকে ঠেকাতে বাম ও তৃণমূল এক মঞ্চে আসতে পারে কি না, সেই বিতর্ক উস্কে দিলেন প্রবীণ সিপিআই নেতা এ বি বর্ধন। তিনি বলেন, নরেন্দ্র মোদীকে প্রধানমন্ত্রীর গদি থেকে দূরে রাখতে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তথা তৃণমূলের সঙ্গে এক মঞ্চে আসার কথা ভাবতেও তাঁর সমস্যা নেই। তাঁর কথায়, “আসল লক্ষ্য, সম্ভব হলে মোদীকে ক্ষমতা থেকে দূরে রাখা। তার জন্য মমতার মতো সব সম্ভাবনা নিয়েই কথা হবে।”
নির্বাচনের পরে ধর্মনিরপেক্ষ দলগুলিকে নিয়ে বিকল্প জোট তৈরির পরিকল্পনা রয়েছে বাম নেতৃত্বের। তার জন্য আগে থেকেই সাম্প্রদায়িকতা বিরোধী মঞ্চ তৈরির চেষ্টা চলছে। কিন্তু সেই জোটে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যোগ দেননি। মমতা আলাদা ভাবে ফেডেরাল ফ্রন্ট তৈরির চেষ্টা করেছেন। বর্ধনের এই মন্তব্যে প্রশ্ন উঠেছে, তা হলে কি বামেদের বিকল্প জোটে মমতাই মধ্যমণি হয়ে উঠবেন? বর্ধন মন্তব্য করেছেন, “মমতা কেন জোটের মধ্যমণি হবেন? অনেকেই আছেন যাঁদের বিকল্প নীতি রয়েছে এবং যাঁরা কংগ্রেস ও বিজেপি-র বিরোধী।”
বাম নেতারা মনে করছেন, তত্ত্বগত ভাবে বর্ধনের যুক্তিতে ভুল নেই। কিন্তু ভোটের মধ্যে এ কথা বলায় বামেদের ক্ষতি হতে পারে। পশ্চিমবঙ্গে মমতার সঙ্গেই তাদের আসল লড়াই। সেখানে বাম নেতারাই যদি ভোটের পরে মমতার সঙ্গে এক মঞ্চে যাওয়ার কথা বলেন, তা হলে বামেদেরই বিপদ হবে। বর্ধনের ওই মন্তব্যে সিপিএম তথা অন্য বাম দলগুলির মধ্যেও আপত্তি ওঠে। সেই কারণেই আজ নিজের বক্তব্যের ব্যাখ্যা দিয়েছেন বর্ধন। তিনি বলেন, “এটা নিয়ে কোনও সংশয় নেই যে পশ্চিমবঙ্গে বামেরা তৃণমূলের বিরুদ্ধে লড়াই করছে।” সিপিআইয়ের কেন্দ্রীয় সম্পাদকমণ্ডলীর তরফে দাবি করা হয়েছে, অ-কংগ্রেসি, অ-বিজেপি জোট নিয়ে সিপিআই নেতাদের মন্তব্যের ভুল ব্যাখ্যা হচ্ছে। সিপিআই স্পষ্ট করে দিতে চায় যে মমতা আসলে পশ্চিমবঙ্গে বিজেপিকেই ভোটের মেরুকরণে সাহায্য করছেন। তিনি যে বিজেপিকে আক্রমণ করছেন, সেটা পুরোটাই লোক দেখানো। আসলে ‘গট-আপ’ খেলা চলছে।
ঘরোয়া আলোচনায় বাম নেতাদের ব্যাখ্যা, লোকসভা নির্বাচনের পরেও বামেদের সঙ্গে তৃণমূলের জোট বাঁধা বা হাত মেলানোর কোনও সম্ভাবনা নেই। মমতাও যেমন সেই পথে হাঁটবেন না, তেমন বামেরাও সে কথা ভাবছেন না। কিন্তু এমন পরিস্থিতি তৈরি হতেই পারে, মমতা কোনও সরকারে যোগ দিয়েছেন বা বাইরে থেকে সমর্থন করছেন ও বিজেপিকে ক্ষমতা থেকে দূরে রাখতে বামেদেরও সেই সরকারকে সমর্থন করতে হল। শুধু মমতা সেই সরকারে রয়েছেন বলেই বামেরা সেই মঞ্চে যাবেন না, এটা যুক্তি হতে পারে না। ১৯৮৯-এ কংগ্রেসকে দূরে রাখতে বাম-বিজেপি ভি পি সিংহ সরকারকে বাইরে থেকে সমর্থন দিয়েছিল। রাজ্যে বিবদমান শক্তি হলেও ইউপিএ সরকারকে বাইরে থেকে মায়াবতী ও মুলায়ম, দু’জনেই সমর্থন দিয়েছেন। কাজেই ভোটের ফল বেরোলে বামেদেরও এমন পরিস্থিতির সামনে পড়তে হতে পারে। জোট রাজনীতির হিসেবে বর্ধন সে ক্ষেত্রে সব সম্ভাবনা নিয়ে আলোচনা করার কথাই বলেছিলেন। কিন্তু ভোটের রাজনীতির দায়ে পড়ে তাঁকে নিজের কথাই গিলতে হল।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy