ম্যাডিসন স্কোয়ারের মঞ্চে দাঁড়িয়ে মোহনদাস কর্মচন্দ গাঁধীর নাম ভুল বলে এক প্রস্ত বিতর্কের মুখে পড়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। এ ব্যাপারে কংগ্রেসের মতো বিরোধী দলগুলি তাঁকে কটাক্ষ করতে ছাড়েনি। এ বার গাঁধীর লেখা একটি বইয়ের নতুন মলাট নিয়েও প্রধানমন্ত্রীকে বিতর্কের মধ্যে জড়াচ্ছেন কংগ্রেস নেতৃত্ব। অভিযোগ, ‘গীতা, অ্যাকর্ডিং টু গাঁধী’ নামের যে বইটি মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামাকে উপহার দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী, তাঁর মলাট বিকৃত করা হয়েছে। বইটির পুরনো সংস্করণের মলাটে ছবি ছিল অন্য। কিন্তু নতুন মুদ্রণের পর যে বইটি ওবামার হাতে তুলে দিয়েছেন মোদী, সেখানে সুদর্শন চক্র হাতে শ্রীকৃষ্ণের ছবি রয়েছে। কংগ্রেসের বক্তব্য, গাঁধীর বইয়েও হিন্দুত্বের মোড়ক দিতে চাইছে বিজেপি।
সংশ্লিষ্ট বইটি নতুন করে ছেপেছে গুজরাতের নবজীবন ট্রাস্ট। যার অছি পরিষদের প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন গাঁধীজি। নবজীবন ট্রাস্টের পাশাপাশি গুজরাত বিদ্যাপীঠও স্থাপন করেছিলেন তিনি। বইটি নতুন করে ছাপার সময় থেকেই অসন্তোষ প্রকাশ করছিলেন গুজরাত বিদ্যাপীঠের উপাচার্য সুদর্শন আয়েঙ্গার। আর সেই বইটিই প্রধানমন্ত্রী মার্কিন প্রেসিডেন্টকে উপহার দেওয়ায় এখন প্রকাশ্যে অসন্তোষ জানাতে শুরু করেছেন তিনি। তাঁর কথায়, “গাঁধী অহিংসার কথা প্রচার করেছিলেন। ভাগবত গীতাকে আত্ম-সংস্কার ও শৃঙ্খলার বার্তা হিসেবেই দেখেছেন মহাত্মা। মূল বইয়ে হিন্দুত্বের কোনও প্রতীক ছিল না। ফলে তাঁর বইয়ে হিন্দুত্বের প্রতীক ব্যবহার করা অন্যায়।” শুধু তাই নয়, গুজরাত বিদ্যাপীঠে নতুন বইটি রাখা হবে না বলেও জানিয়ে দিয়েছেন আয়েঙ্গার।
নবজীবন ট্রাস্ট কর্তৃপক্ষ যদিও গৈরিকীকরণের অভিযোগ উড়িয়েছেন। সেই সঙ্গে তাঁদের বক্তব্য, কেউ সুদর্শন চক্র হাতে শ্রীকৃষ্ণের ছবি ছাপাকে হিংসাকে প্রশ্রয় দেওয়া বলে ভাবলে, সেটা তাঁর ব্যক্তিগত ভাবনা হতে পারে। তবে মলাট বদলের প্রশ্নই নেই।
কিন্তু এই ঘটনাকে নিয়ে এখন বিজেপিকে নিশানা করছে কংগ্রেস। রাজ্যের কংগ্রেস নেতা শক্তিসিন গোহিল বলেন, “গুজরাতে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলির গৈরিকীকরণের প্রক্রিয়া আগেই সেরে ফেলেছে বিজেপি। এখন তাঁরা মহাত্মা গাঁধীর দর্শনও বিকৃত করতে উদ্যত।” তাঁর অভিযোগ, প্রধানমন্ত্রীর আমেরিকা সফরের আগে নতুন করে বইটি ছাপার পিছনেও বিজেপির হাত রয়েছে।
বিজেপি তথা মোদী সরকারের বিরুদ্ধে গৈরিকীকরণের অভিযোগ নিয়ে কংগ্রেস এখানেই থেমে নেই। বিজয়া দশমীর দিন আরএসএস-প্রধান মোহন ভাগবতের বক্তৃতা দূরদর্শনে সরাসরি সম্প্রচার করা নিয়েও সরকারের সমালোচনায় নেমেছে কংগ্রেস। কারণ, ওই বক্তৃতায় হিন্দুত্বকে জাতীয় পরিচিতি বলে বর্ণনা করেছিলেন ভাগবত।
এ ব্যাপারে কংগ্রেস মুখপাত্র রশিদ অলভি বলেন, “সাম্প্রদায়িক দর্শন প্রচারের জন্য আরএসএস-কে এক সময় নিষিদ্ধ করা হয়েছিল। অথচ মেরুকরণের রাজনীতি করতে সেই প্রতিষ্ঠানের প্রধানের বক্তৃতা দূরদর্শনে প্রচার করা হচ্ছে। তা-ও আবার সরকারি নির্দেশে।”
যদিও এই অভিযোগ অস্বীকার করেছেন কেন্দ্রীয় তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী প্রকাশ জাভড়েকর। তাঁর দাবি, সঙ্ঘ প্রধানের বক্তৃতা সরাসরি সম্প্রচারের জন্য কোনও নির্দেশ দূরদর্শনকে দেওয়া হয়নি। তা ছাড়া দূরদর্শন কর্তৃপক্ষও দাবি করেছেন, এ নিয়ে মন্ত্রক থেকে কোনও চাপ ছিল না। সংবাদ হিসেবেই ভাগবতের বক্তৃতা দেখানো হয়েছে। কিন্তু মন্ত্রক সূত্রে জানা যাচ্ছে, বক্তৃতা সরাসরি সম্প্রচারের ব্যাপারে তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রকে রীতিমতো বৈঠক হয়েছিল। এ ব্যাপারে জাভড়েকরই সবুজ সংকেত দিয়েছিলেন।
কংগ্রেসের অভিযোগ, কেন্দ্রে একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা পাওয়ায় বিজেপি এখন গোটা দেশে হিন্দুত্বের হাওয়া তুলতে চাইছে। তাই তারা উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ভাবেই এ সব করছে। আর সঙ্ঘের অনেকেই মনে করছেন, এ নিয়ে কংগ্রেস যত মুখর হবে, ততই হিন্দুত্বের আবেগ তথা সংখ্যাগরিষ্ঠের মেরুকরণ আরও জোরদার হবে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy