ভোট কেনার লক্ষ্যে কোনও ক্রমে তার টেনে বাড়ি বাড়ি বিদ্যুৎ এনে দেওয়ার নীতিতে কুঠারাঘাত করল নরেন্দ্র মোদী সরকার।
এত দিন গ্রামীণ বিদ্যুদয়ন বলতে এই কাজটুকুই বোঝাত। সেই প্রকল্পের গালভরা নাম ছিল ‘রাজীব গাঁধী গ্রামীণ বিদ্যুৎ যোজনা’। মোদী সরকার শুধু যে প্রকল্পটির নাম বদলে দিয়েছে তা-ই নয়, দেশের সর্বত্র বিদ্যুৎ সরবরাহের উপযুক্ত পরিকাঠামো তৈরির জরুরি বিষয়টিও প্রকল্পে অর্ন্তভুক্ত করেছে। এ জন্য ৪৩ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ করেছেন নরেন্দ্র মোদী। নতুন এই প্রকল্পের নাম দেওয়া হয়েছে ‘দীনদয়াল উপাধ্যায় গ্রাম জ্যোতি যোজনা’। কেন্দ্র চায় এই প্রকল্পে প্রতিটি রাজ্য পেশাদারি মনোভাব নিয়ে কাজ করুক।
নতুন এই প্রকল্পটি নিয়ে সম্প্রতি পশ্চিমবঙ্গ-সহ বিভিন্ন রাজ্যের বিদ্যুৎ কর্তাদের সঙ্গে কেন্দ্রীয় বিদ্যুৎ মন্ত্রকের সবিস্তার আলোচনা হয়েছে। তার পরেই রাজ্যের মুখ্যসচিব সঞ্জয় মিত্রকে চিঠি দিয়ে মন্ত্রকের যুগ্মসচিব বি এন শর্মা সাফ জানিয়ে দিয়েছেন গ্রামীণ বিদ্যুদয়ন প্রকল্পে কেন্দ্রীয় অনুদান পেতে এ বার পরিকাঠামো উন্নয়নে নজর দিতে হবে। নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে প্রকল্প রূপায়ণ করতে পারলে অর্থের অভাব হবে না।
দিল্লির চিঠি পেয়ে রাজ্য বিদ্যুৎ বণ্টন সংস্থার কর্তারা পরিকাঠামো উন্নয়নের জন্য বেশ কয়েকটি বড় প্রকল্পের সবিস্তার প্রকল্প রিপোর্ট বা ডিপিআর তৈরির কাজেও হাত দিয়েছে। নিগমের ম্যানেজিং ডিরেক্টর নারায়ণস্বরূপ নিগম বলেন, “কেন্দ্রের কাছে মোট ৫০০০ কোটি টাকার প্রকল্পের ডিপিআর তৈরি করা হচ্ছে।” তাঁর কথায়, আগে গ্রামীণ বিদ্যুদয়ন প্রকল্পের মূল উদ্দেশ্য ছিল বিপিএল পরিবারগুলিকে কোনও ক্রমে বিদ্যুৎ সংযোগ দিয়ে দেওয়া। বিদ্যুৎ সরবরাহের পরিকাঠামো উন্নয়নের জন্য কোনও প্রকল্প ছিল না। ফলে গ্রামাঞ্চলের বহু বাড়িতে বিদ্যুৎ পৌঁছলেও ভোল্টেজ নিয়ে নানা অভিযোগ আসত। নতুন প্রকল্পে পরিকাঠামোর দিকে নজর দেওয়ায় সে সমস্যা মিটবে।
কী কাজ করতে বলছে কেন্দ্রীয় বিদ্যুৎ মন্ত্রক?
রাজ্যকে পাঠানো চিঠিতে বলা হয়েছে, গ্রামাঞ্চলে কৃষিকাজের জন্য বিদ্যুৎ সরবরাহ লাইনের থেকে গ্রাহকদের ঘরোয়া পরিষেবার লাইন সম্পূর্ণ আলাদা করে দিতে হবে। অর্থাৎ, যে লাইন দিয়ে শ্যালো পাম্প চালানো বা সেচের বিদ্যুৎ দেওয়া হচ্ছে, সেই একই হাইটেনশন তার দিয়ে গ্রাহকদের ঘরোয়া পরিষেবা দেওয়া যাবে না। এ জন্য আলাদা ‘ফিডার’ করতে হবে। পাশাপাশি নতুন সাবস্টেশন তৈরি করতে হবে, বসাতে হবে ট্রান্সফর্মার, গ্রাহকদের দিতে হবে নতুন ইলেকট্রনিক মিটারও। আবার চুরিপ্রবণ এলাকায় হুকিং, ট্যাপিং বন্ধ করার জন্য উন্নত প্রযুক্তির সাহায্য নিতে হবে, যাতে সরকারি বিদ্যুৎ বণ্টন সংস্থাগুলির আর্থিক লোকসান কমে।
বিদ্যুৎ মন্ত্রকের এক কর্তা জানান, অধিকাংশ রাজ্যে গ্রামীণ বিদ্যুদয়ন প্রকল্পে খাতায় কলমে বাড়ি বাড়ি বিদ্যুৎ পৌঁছে গেলেও কাজের কাজ কিছু হচ্ছে না। লো-ভোল্টেজের জন্য গরমে পাখা ঘোরে না, আলো জ্বলে টিমটিম করে। বহু এলাকায় বিদ্যুৎ থাকলেও টিভি চালাতে হয় ব্যাটারিতে। পরিকাঠামোগত দুর্বলতাই এর কারণ। সাধারণ ভাবে গ্রামাঞ্চলে সাবস্টেশন, ট্রান্সফর্মার, হাইটেনশন লাইনের ঠিকমতো দেখভাল হয় না। যে হাইটেনশন লাইন দিয়ে বিদ্যুৎ যায়, তা মান্ধাতা আমলের হওয়ায় মাঝপথেঅনেকটা শক্তি হারিয়ে যায়। বিদ্যুৎ কর্তারা বলছেন, তার থেকেই যত বিপত্তি।
দীনদয়াল উপাধ্যায় গ্রাম জ্যোতি যোজনা প্রতিটি রাজ্যে যাতে যথাযথ রূপায়িত হয়, সে জন্য নজরদারি চালাতে কেন্দ্রীয় সংস্থা রুরাল ইলেকট্রিফিকেশন কর্পোরেশন-কে নোডাল এজেন্সি হিসেবে নিয়োগ করা হয়েছে। কোনও রাজ্যের প্রকল্প বিদ্যুৎ মন্ত্রক অনুমোদন করলে সংশ্লিষ্ট রাজ্য সরকার, ওই রাজ্যের বণ্টন সংস্থা এবং নোডাল এজেন্সির মধ্যে ত্রিপাক্ষিক চুক্তি হবে। কেন্দ্র জানিয়েছে, রাজ্যের প্রকল্পে ৬০% অর্থ অনুদান হিসাবে দেওয়া হবে। বণ্টন সংস্থাগুলিকে দিতে হবে মোট খরচের ১০%। বাকি ৩০% অর্থ বিভিন্ন ব্যাঙ্ক বা আর্থিক সংস্থা ঋণ হিসেবে দেবে। কেন্দ্রের প্রস্তাব, সময়ের মধ্যে প্রকল্পের কাজ শেষ করতে পারলে রাজ্যগুলি ৩০% ঋণের অর্ধেক অর্থ অনুদান হিসাবে পাবে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy