প্রতীকী ছবি।
মাথায় হিজাব, পরনে কালো গাউন। মুসলিম মহিলা আইনজীবীদের ভিড়ে ভর্তি দর্শকাসন। রয়েছেন যোজনা কমিশনের প্রাক্তন সদস্যা সইদা হামিদ থেকে মুসলিম মহিলা আন্দোলনের নেত্রীরা। মাথায় ফেজ টুপি, চশমা চোখে গম্ভীর মুখে হাজির অল ইন্ডিয়া মুসলিম পার্সোনাল ল’ বোর্ডের কর্তারাও। বিরল মাপের আইনি লড়াই শুনতে চলে এসেছেন বিদেশি দূতাবাসের প্রতিনিধিরাও।
সায়রা বানো, আফরিন রেহমান, গুলশন পারভিন, ইশরত জাহান, আতিয়া সাবরি— তিন তালাকের বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টে যান এই পাঁচ জন। ১৫ বছরের বিবাহিত জীবনের পরে সায়রার স্বামী তাঁকে এক কথায় তালাক দিয়ে দেন। বাকিরা কেউ দুবাই থেকে স্বামীর ফোনে, কেউ স্পিড পোস্টে পাওয়া চিঠিতে ‘তালাক, তালাক, তালাক’ বার্তা পেয়েছেন। তাঁদের সঙ্গে রয়েছে মুসলিম মহিলা আন্দোলনের বেশ কিছু সংগঠনও।
সুপ্রিম কোর্টে গরমের ছুটির মধ্যেই শুনানি শুরু হয়েছে। তবু এজলাসে পা ফেলার জায়গা ছিল না। ঢুকতে না পেরে অনেক প্রবীণ আইনজীবী বাইরে দাঁড়িয়েই খোঁজ নিয়েছেন, কোন দিকে মামলা এগোচ্ছে। শুনানি চলবে টানা সাত দিন। তিন তালাক সংবিধান স্বীকৃত কি না, বিশেষত তিন তালাক সংবিধানের মৌলিক অধিকারকে খর্ব করে কি না, মূলত এই বিষয়টিই খতিয়ে দেখবে প্রধান বিচারপতি জে এস খেহরের বেঞ্চ।
আরও পড়ুন:এজলাসে নাটক, কোথায় কারনান
অল ইন্ডিয়া মুসলিম পার্সোনাল ল’ বোর্ডের তরফে কপিল সিব্বল শুনানির শুরুতেই আপত্তি তুলেছিলেন, তিন তালাকের সঙ্গে ধর্ম পালন বা মৌলিক অধিকারের প্রশ্ন জড়িত। এটি মুসলিম ল’ বোর্ডের এক্তিয়ারে পড়ে। কাজেই আদালতের এতে নাক না গলানোই ভাল। কিন্তু তিন তালাকের বিরুদ্ধে আইনজীবী অমিত সিংহ চাড্ডা, ইন্দিরা জয়সিংহ, আনন্দ গ্রোভাররা যুক্তি দিয়েছেন, এর সঙ্গে কোরান বা ইসলামের কোনও সম্পর্ক নেই। পাকিস্তান, বাংলাদেশ, আফগানিস্তানের মতো ইসলামিক রাষ্ট্রেও তিন তালাক নিষিদ্ধ। তা ছাড়া, ল’ বোর্ড একটা বেসরকারি সংস্থা। তারা কী ভাবে এ বিষয়ে মন্তব্য করতে পারে, প্রশ্ন তোলেন ইন্দিরারা।
প্রধান বিচারপতি জে এস খেহর, রোহিনটন নরিম্যান, কুরিয়েন জোসেফ, উদয় ললিত এবং আবদুল নাজির-পাঁচ ধর্মের পাঁচ বিচারপতিকে নিয়ে বেঞ্চ গঠন হয়েছে। হিন্দু ও মুসলিম ধর্মের প্রতিনিধি, বিচারপতি ললিত ও বিচারপতি নাজির গোটা দিন মুখ খোলেননি। বিচারপতি নরিম্যান বলেন, ‘তালাক-এ-বিদ্দাত’ (তিন তালাকের সব থেকে বিতর্কিত প্রথা) আসলে বিবাহবিচ্ছেদের ‘সুপার-ফাস্ট’ চেহারা। রাতে কয়েক পাত্র মদ্যপান করে স্বামী তিনবার তালাক বলে দিলে কী হবে, তা নিয়েও প্রশ্ন তোলেন তিনি। তাঁর কথায় মাথা নেড়ে সম্মতি জানান বিচারপতি কুরিয়েন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy