চা-চক্রে বক্তৃতা দিচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। দিল্লির রেসকোর্স রোডের বাসভবনে। রবিবার। ছবি: পিটিআই
জোট যুগ তিনি শেষ করে দিতে চাইছেন না। এনডিএ শরিকদের সান্ধ্য চা-চক্রে আমন্ত্রণ জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী আজ এই বার্তা দিলেন। শরিক দল এবং বিজেপি-সহ প্রায় ৪০০ জন সাংসদের সামনে মোদী এ কথাও জানিয়েছেন যে ‘সামগ্রিক ভাবে এনডিএ এক প্রবল ইতিবাচক শক্তির জন্ম দিতে পারে’। তবে বিজেপি সূত্রের বক্তব্য, জোট নিয়ে এমন ভাবনার কথা জানালেও ভবিষ্যতে বিভিন্ন রাজ্যে একক ভাবে ক্ষমতায় আসার চেষ্টা চালিয়ে যাবেন নরেন্দ্র মোদী।
বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে ক্ষমতায় আসার পর, তাঁর সম্পর্কে এনডিএ-র শরিক দলগুলির অভিযোগ এবং আশঙ্কা তৈরি হয়। বিশেষ করে মহারাষ্ট্র এবং হরিয়ানায় শিবসেনা এবং হরিয়ানা জনহিত কংগ্রেসের সঙ্গে বন্ধন ছিন্ন করার পরে, শরিকদের উদ্বেগ আরও বেড়ে গিয়েছে। এনডিএ শরিকদের মধ্যে ধারণা সৃষ্টি হয়েছে যে, মোদী আর তাঁদের ধর্তব্যের মধ্যে আনতে চাইছেন না। তাই আজ রেসকোর্স রোডের বাসভবনে ‘দেওয়ালি মিলনের’ মাধ্যমে শরিকদের উদ্দেশে একটি ইতিবাচক বার্তা দিয়ে তাঁদের আশ্বস্ত করতে চেয়েছেন মোদী। পাশাপাশি, বিশেষ গুরুত্ব দিয়েছেন লালকৃষ্ণ আডবাণীকেও। এনডিএ-র চেয়ারম্যান পদে ছিলেন আডবাণী। মোদী ক্ষমতায় আসার পর তিনি বিশেষ কোনও গুরুত্ব না পেলেও, এই পদটি এখনও হারাননি। আজ চা-চক্রে আডবাণীকেই প্রথম বক্তৃতা দেওয়ার সুযোগ করে দিয়েছেন মোদী। পাশাপাশি, মোদী, অরুণ জেটলি, নিতিন গডকড়ী উপস্থিত সাংসদদের সামনে সরকারের বিভিন্ন প্রকল্প এবং ভবিষ্যৎ অভিমুখের বর্ণনা করেছেন।
এমন একটা সময়ে এই চা-চক্র, যখন মহারাষ্ট্রে বিজেপি এবং শিবসেনার ঠান্ডা লড়াই চলছে। আজ অবশ্য মোদীর আমন্ত্রণে সাড়া দিয়ে অনন্ত গীতের নেতৃত্বে শিবসেনার লোকসভা-রাজ্যসভা মিলিয়ে ২১ জন সাংসদ এই অনুষ্ঠানে হাজির ছিলেন। কিন্তু সাংসদদের আমন্ত্রণ জানালেও এই অনুষ্ঠানে শরিক দলের নেতাদের ডাকেননি মোদী। তাই শিবসেনা প্রধান উদ্ধব ঠাকরে অনুপস্থিত। মহারাষ্ট্রের বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতির বিচারে যা তাৎপর্যপূর্ণ বলেই মনে করা হচ্ছে।
বিজেপি সূত্রের খবর, আগামিকাল মহারাষ্ট্রে যাবেন রাজনাথ সিংহ। সেখানে এক বৈঠকে বিজেপি-র বিধায়ক দলের নেতা স্থির করা হবে। এখনও পর্যন্ত ঠিক আছে, আগামী ৩০ তারিখের মধ্যেই শপথ নেবেন নতুন মুখ্যমন্ত্রী। মহারাষ্ট্রের বিজেপি নেতা দেবেন্দ্র ফডণবীসেরই মুখ্যমন্ত্রী পদে শপথ নেওয়ার কথা। অন্য দিকে, উপ-মুখ্যমন্ত্রী পদের দাবি থেকে উদ্ধব সরে এসেছেন ঠিকই, কিন্তু মন্ত্রিসভায় ভাল পদ চাইছেন তিনি। এই নিয়ে বিজেপির সঙ্গে দরকষাকষি চলছে শিবসেনার। উদ্ধব সরাসরি কথা বলতে চাইছেন মোদীর সঙ্গে। কিন্তু মোদীর তরফ থেকে সে রকম কোনও উদ্যোগ দেখা যায়নি। মরাঠা রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত অনেকেই বলছেন, মোদী আজকের এই চা-চক্রের অনুষ্ঠানে উদ্ধবকে আমন্ত্রণ জানিয়ে বরফ গলাতে পারতেন। তা তিনি করেননি। কারণ এখনই দরকষাকষির দরজাটি বন্ধ করে দিতে চান না তিনি।
সূত্রের খবর, বিজেপি মহারাষ্ট্রে জোট শরিক নির্ধারণ করার বিষয়টি নিয়ে আদৌ তাড়াহুড়ো করতে চাইছে না। আগামী ৩০ তারিখ পর্যন্ত বিজেপি-শিবসেনা বোঝাপড়া চূড়ান্ত না হলে বিজেপি বিধায়ক দলের নেতা মুখ্যমন্ত্রী পদে শপথ নিয়ে নেবেন। কেননা, রাজ্যে সব থেকে বড় দল হিসেবে বিজেপিকেই বিধানসভায় সংখ্যাগরিষ্ঠতা প্রমাণ করার জন্য আহ্বান জানাবেন রাজ্যপাল। সে ক্ষেত্রে দরকষাকষির আরও কিছু সময় পেয়ে যাবেন বিজেপি নেতৃত্ব। আর শরদ পওয়ারের এনসিপি বাইরে থেকে বিজেপিকে নিঃশর্ত সমর্থন দিয়েই রেখেছে। যদিও এনসিপির সমর্থনে সরকার গড়া বিজেপি-র পক্ষে অস্বস্তিকর (মহারাষ্ট্র নির্বাচনের গোটা প্রচারেই এনসিপিকে ‘ন্যাচারাল করাপ্ট পার্টি’ হিসেবে বর্ণনা করে এসেছে বিজেপি)। কিন্তু শিবসেনার সঙ্গে দরকষাকষির জন্য হাতের পাঁচ হিসেবে রয়েছে এনসিপি। বিধানসভায় সংখ্যাগরিষ্ঠতা প্রমাণের সময় যদি এনসিপি কক্ষত্যাগ করে, তা হলেও বিজেপির সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেয়ে যাওয়ার সুযোগ থাকছে। ফলে বিজেপি তাড়াহুড়ো করে শিবসেনার সঙ্গে জোট গড়ার প্রক্রিয়া শেষ করতে চাইছে না। আপাতত তাদের লক্ষ্য পরিষদীয় দলের নেতাকে বেছে নেওয়ার প্রক্রিয়া শেষ করা।
এর পরেই তারা নিজেদের সুবিধাজনক শর্তে শিবসেনার সঙ্গে চূড়ান্ত দরকষাকষির আলোচনায় বসবে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy