Advertisement
০৬ নভেম্বর ২০২৪

কাছাড়ে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের শাখা থেকে উধাও গ্রাহকদের টাকা

বেসরকারি অর্থলগ্নি সংস্থা নয়, এ বার রাষ্ট্রায়ত্ত একটি ব্যাঙ্কে টাকা রেখেও সব হারানোর আশঙ্কায় ভুগছেন কাছাড়ের জালালপুরে ওই ব্যাঙ্কের শাখার গ্রাহকরা। সম্প্রতি ব্যাঙ্কের শাখার প্রধান হিসেবরক্ষকের (ক্যাশিয়ার) বিষ খেয়ে আত্মহত্যার চেষ্টার খবরে জল্পনা ছড়ায়।

নিজস্ব সংবাদদাতা
শিলচর শেষ আপডেট: ০১ মে ২০১৪ ০৪:৪০
Share: Save:

বেসরকারি অর্থলগ্নি সংস্থা নয়, এ বার রাষ্ট্রায়ত্ত একটি ব্যাঙ্কে টাকা রেখেও সব হারানোর আশঙ্কায় ভুগছেন কাছাড়ের জালালপুরে ওই ব্যাঙ্কের শাখার গ্রাহকরা।

সম্প্রতি ব্যাঙ্কের শাখার প্রধান হিসেবরক্ষকের (ক্যাশিয়ার) বিষ খেয়ে আত্মহত্যার চেষ্টার খবরে জল্পনা ছড়ায়। এরপরই অনেক গ্রাহক সেখানে খোঁজ নিতে যান। তাঁদের অভিযোগ, কারও কারও টাকা ব্যাঙ্কে জমাই পড়েনি। অনেক গ্রাহকের পাসবইয়ের সঙ্গে জমা টাকার মিল নেই।

সুরাহা চেয়ে জেলাশাসক, পুলিশ সুপার এবং ব্যাঙ্কের আঞ্চলিক অফিসে ভিড় জমাচ্ছেন গ্রাহকরা। ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন, যাঁদের কাছে টাকা জমা দেওয়ার রসিদ রয়েছে, তাঁরা পুরো টাকা ফেরত পাবেন। প্রাথমিক ভাবে প্রায় ২ কোটি টাকার হিসেব মিলছে না।

গ্রাহকদের অভিযোগ, দীর্ঘদিন ধরে ওই ব্যাঙ্কের শাখায় জালিয়াত চক্র গড়ে উঠেছিল। ব্যাঙ্ক সূত্রের খবর, গত বছর নভেম্বর মাসে ওই শাখার ম্যানেজার হিসেবে দায়িত্ব নেন একরাম হোসেন মজুমদার। তিনি দায়িত্ব নিয়েই শাখার সব কাজকর্ম কম্পিউটারের মাধ্যমে করানোর উদ্যোগ নেন। গ্রাহকদের অ্যাকাউন্টগুলি ‘কোর ব্যাঙ্কিং’য়ের আওতায় আনার কাজও শুরু করেন। কর্মীদের একাংশ তাতে আপত্তি তোলেন। নানা অজুহাতে প্রক্রিয়াটি পিছিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করা হয়। ম্যানেজারও অনঢ় ছিলেন। ওই পরিস্থিতিতেই ১৯ এপ্রিল বিষ খেয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা করেন হিসেবরক্ষক রবীন্দ্র দাস। এখনও তিনি শিলচর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। হুঁশ পুরোপুরি ফেরেনি। ভাল ভাবে কথাও বলতে পারছেন না। খবর পেয়েই গ্রাহকদের অনেকে ব্যাঙ্কে যান। অ্যাকাউন্টের হিসেব পরীক্ষা করে দেখেন, প্রায় সবারই টাকা উধাও। কারও ২ লক্ষ, কারও ২০ বা ৫০ হাজার টাকা। ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষ, পূর্বতন ম্যানেজার রাতুল দত্ত এবং রবীন্দ্র দাসের বিরুদ্ধে প্রতারণার মামলা দায়ের করা হয়।

জেলার পুলিশ সুপার দিগন্ত বরা জানিয়েছেন, তদন্ত শুরু হয়েছে। তিন জনকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। মূল অভিযুক্ত রবীন্দ্র দাস অসুস্থ থাকায় তদন্তে কিছুটা সমস্যা হচ্ছে।

আজ গ্রাহক সুরক্ষা সমিতির প্রতিনিধি দল প্রতারিত গ্রাহকদের নিয়ে জেলাশাসক গোকুলমোহন হাজরিকার সঙ্গে দেখা করেন। জেলাশাসক জানান, প্রতারিত গ্রাহকদের কাছ থেকে তিনি একটি তালিকা চেয়েছেন। ওই ব্যাঙ্কের শাখায় কার কত টাকা জমা রয়েছে, তা তাতে উল্লেখ করতে বলা হয়েছে। একই সঙ্গে ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষের কাছেও সমস্ত অ্যাকাউন্টের বিষয়ে জানতে চেয়েছেন।

এ নিয়ে উপযুক্ত ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানিয়েছেন স্থানীয় বিধায়ক আতাউর রহমান মাঝারভুইয়া।

এলাহাবাদ ব্যাঙ্কের গুয়াহাটি আঞ্চলিক অফিসের প্রধান ম্যানেজার বিবি প্রসাদ জানিয়েছেন, তাঁরা জেলাশাসকের সঙ্গে যোগাযোগ রেখে চলেছেন। ব্যাঙ্কের পক্ষ থেকেও তদন্ত শুরু করা হয়েছে। আজই শিলচরে পৌঁছেছেন ব্যাঙ্কের উচ্চপদস্থ আধিকারিক জে সি পান্ডে। তাঁর সঙ্গে রয়েছেন সিনিয়র ম্যানেজার স্বপন সরকার। ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, যাঁদের কাছে টাকা জমা দেওয়ার রসিদ রয়েছে, তাঁরা টাকা ফেরত পাবেন।

কিন্তু অনেক গ্রাহকের কাছেই সমস্ত রসিদ নেই। অনেকের পাসবই রবীন্দ্র দাস নিজের কাছেই রেখে দিতেন। তাঁদের টাকা উদ্ধার কী ভাবে হবে? জেলাশাসক হাজরিকা বলেন, “কোনও প্রমাণপত্র ছাড়া কি ব্যাঙ্কের টাকা দেওয়া সম্ভব? তা হলে তো যে যার মতো টাকার দাবি জানাবে!”

প্রাথমিক তদন্তে পুলিশ সুপার বরা এবং চিফ ম্যানেজার প্রসাদ, রবীন্দ্রবাবুকেই জালিয়াত চক্রের পাণ্ডা হিসেবে চিহ্নিত করছেন। রবীন্দ্রবাবুর স্ত্রী চিনু দাস অবশ্য অভিযোগ মানতে নারাজ। চিনুদেবীর বক্তব্য, তাঁরা স্বামী-স্ত্রী দু’জনই চাকরি করেন। একটি মাত্র সন্তান। তাঁর স্বামীর লক্ষ লক্ষ টাকা প্রতারণা করার কোনও প্রশ্নই ওঠে না। তাঁকে ফাঁসানো হয়েছে। চিনুদেবীও এই ঘটনার তদন্ত দাবি করেছেন। পূর্বতন ম্যানেজার রাতুলবাবুও গ্রাহক জালিয়াতিতে জড়িত থাকার অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।

অন্য বিষয়গুলি:

money laundering bank cachar
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE