Advertisement
২২ নভেম্বর ২০২৪
Aindrila Sharma Death

দু’বার ক্যানসারে আক্রান্ত হয়েছিলেন ঐন্দ্রিলা, কেন ফিরে আসে ক্যানসার? বোঝার উপায়ই বা কী?

ক্যানসারের সঙ্গে দু’বার লড়াইয়ের পর প্রয়াত হলেন অভিনেত্রী ঐন্দ্রিলা শর্মা। প্রথম বার ক্যানসার থেকে সুস্থ হয়ে ওঠার পরেও দ্বিতীয় বার ক্যানসার ফিরে আসার আশঙ্কা ঠিক কতটা?

এত সহজে ঐন্দ্রিলা লড়াইয়ের মাঠ ছেড়ে যাওয়ার পাত্রী কিন্তু ছিলেন না।

এত সহজে ঐন্দ্রিলা লড়াইয়ের মাঠ ছেড়ে যাওয়ার পাত্রী কিন্তু ছিলেন না। ছবি: সংগৃহীত

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ২০ নভেম্বর ২০২২ ১৩:৩৬
Share: Save:

২০১৫ সাল, ৫ ফেব্রুয়ারি। ঐন্দ্রিলা তখন একাদশ শ্রেণির ছাত্রী। জন্মদিনের দিন প্রথম জানতে পারেন, তাঁর শরীরে বাসা বেঁধেছে মারণরোগ। অস্থিমজ্জায় ধরা পড়ে ক‍্যানসার। লড়াইয়ের সেই শুরু। দিল্লির ‘এমস’-এ শুরু হয় চিকিৎসা। কেমোর পর কেমো, ইঞ্জেকশন, কেমোর কারণে চুল পড়ে যাওয়া। বাড়ির ছোট মেয়েকে সুস্থ করে তুলতে কোনও ঝুঁকি না নিয়ে যাওয়া হয় দিল্লিতে। সেখানেও কিছু দিন চিকিৎসা চলার পর চিকিৎসকরা এক রকম জবাব দিয়েই দিয়েছিলেন। কিন্তু এত সহজে ঐন্দ্রিলা যে লড়াইয়ের মাঠ ছেড়ে যাওয়ার পাত্রী নন। টানা দেড় বছর চিকিৎসা চলার পর ২০১৬ সালে সুস্থ হয়ে ওঠেন অভিনেত্রী।

ধীরে ধীরে স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে থাকেন ঐন্দ্রিলা। ধারাবাহিকে কাজ শুরু করেন। কিন্তু ফের ছন্দপতন ঘটে ২০২১ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারি। ডান দিকের কাঁধে আচমকা শুরু হয় যন্ত্রণা। প্রাথমিক ভাবে অবশ্য সকলে ভেবেছিলেন শোয়ার কারণেই এমন হয়েছে। কিন্তু যত সময় গড়ায়, ব্যথা তত বাড়তে থাকে। আর ফেলে রাখা ঠিক হবে না ভেবে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার। সেখানে গিয়ে জানতে পারেন, তাঁর ডান দিকে ফুসফুসে একটি ১৯ সেন্টিমিটারের টিউমার আছে। ফের ঐন্দ্রিলাকে নিয়ে যাওয়া হয় দিল্লিতে। কেমো, রেডিয়েশন, অস্ত্রোপচার— আবার সেই এক নরকযন্ত্রণার মধ্যে দিয়ে যেতে হয় অভিনেত্রীকে। আবার লড়াই করে ফিরে এসেছিলেন বটে। তবে এ বার সেই দীর্ঘ লড়াইয়ে দাঁড়ি পড়ল। প্রথম বার ক্যানসার থেকে সুস্থ হয়ে ওঠার পরেও দ্বিতীয় বার ক্যানসার ফিরে আসার আশঙ্কা ঠিক কতটা? তা জানতে আনন্দবাজার অনলাইন যোগাযোগ করেছিল চিকিৎসক অদ্রিজা রহমান মুখোপাধ্যায়ের সঙ্গে।

 ক‍্যানসার থেকে সুস্থ হয়ে ওঠার পর পুরোদমে কাজ শুরু করেছিলেন ঐন্দ্রিলা।

ক‍্যানসার থেকে সুস্থ হয়ে ওঠার পর পুরোদমে কাজ শুরু করেছিলেন ঐন্দ্রিলা। ছবি: সংগৃহীত

অদ্রিজা বলেন, ‘‘শরীরের কোন অংশে ক্যানসার হয়েছে এবং কোন পর্যায়ে ধরা পড়েছে, তার উপর নির্ভর করে চিকিৎসা কত দূর হতে পারে এবং আবার তা ফিরে আসতে পারে কি না। ক‍্যানসারের চিকিৎসা মূলত তিন ভাবে হয়। সার্জারি, কেমোথেরাপি এবং রেডিয়োথেরাপি। ক‍্যানসারের চিকিৎসার ক্ষেত্রে একটি শব্দ আমরা ব‍্যবহার করে থাকি, তা হল ‘রেজিম’। এর অর্থ হল, কোনও ক‍্যানসারে শুধুই রে দেওয়া হবে, কোনও ক‍্যানসারে রে এবং অস্ত্রোপচার করা হবে। কোনও ক‍্যানসারের ক্ষেত্রে শুধু কেমোথেরাপি করা হবে। আবার কিছু ক‍্যানসারের ক্ষেত্রে তিনটিই করা হয়। এবং এই প্রত‍্যেকটি চিকিৎসা পদ্ধতির একটি করে নির্দেশিকা রয়েছে। বেশির ভাগ ক‍্যানসারে একাধিক জিনিস ব‍্যবহার করা হয়। ক‍্যানসারের প্রাথমিক পর্যায়ে অনেক সময়ে অস্ত্রোপচার করলেও হয়ে যায়। কিন্তু ক‍্যানসার যত ছড়িয়ে যেতে থাকে, তখনই কেমো দেওয়ার প্রয়োজন পড়ে। ক‍্যানসারের চিকিৎসা শেষ হওয়ার নির্দিষ্ট কোনও সময়সীমা থাকে না। কোনও ক্ষেত্রে এক মাস লাগতে পারে। আবার এক বছরও লাগতে পারে। রোগী প্রাথমিক ভাবে সুস্থ হয়ে উঠলেও আমরা একটি পর্যবেক্ষণে রাখি এটা দেখার জন‍্য যে, ক‍্যানসার আবার ফিরে আসছে কি না। এ ক্ষেত্রে ক‍্যানসার ভেদে আল্ট্রাসোনোগ্রাফি, রক্ত পরীক্ষা করা হয়। প্রস্টেট ক‍্যানসার, জরায়ুর ক‍্যানসারের ক্ষেত্রে মারণরোগ ফিরে আসছে কি না, তা বোঝার জন‍্য কিছু রক্ত পরীক্ষা করা হয়। ক‍্যানসারে আক্রান্ত হওয়ার পাঁচ থেকে দশ বছর পর্যন্ত এই পর্যবেক্ষণে রোগীকে রাখা হয়। তার পর হয়তো রোগীকে ক‍্যানসার মুক্ত ঘোষণা করা হয়। তার পাশাপাশি কঠোর ভাবে বলে দেওয়া হয় যে, নতুন কোনও উপসর্গ বা শারীরিক কিছু সমস‍্যা দেখা দিলে চিকিৎসকের সঙ্গে যোগাযোগ করতে হবে।’’

প্রথম বার ক্যানসার থেকে সুস্থ হয়ে ওঠার পরেও দ্বিতীয় বার ক্যানসার ফিরে আসার আশঙ্কা ঠিক কতটা? 

প্রথম বার ক্যানসার থেকে সুস্থ হয়ে ওঠার পরেও দ্বিতীয় বার ক্যানসার ফিরে আসার আশঙ্কা ঠিক কতটা?  ছবি: সংগৃহীত

প্রথম বার ক‍্যানসার থেকে সুস্থ হয়ে ওঠার পর পুরোদমে কাজ শুরু করেছিলেন ঐন্দ্রিলা। ধারাবাহিকের মুখ‍্য চরিত্রেও দেখা গিয়েছিল তাঁকে। সেই সঙ্গে মডেলিং, ফোটোশুটও করছিলেন। অতিরিক্ত পরিশ্রম কি ক‍্যানসার ফিরে আসার কোনও কারণ হতে পারে? অদ্রিজার কথায়, ‘‘পরিশ্রমের কারণে কিছু হওয়ার নয়। ঐন্দ্রিলার যেহেতু বোনম‍্যারো ক‍্যানসার ছিল। এ ক্ষেত্রে অস্ত্রোপচার করা যায় না। কেমো, রেডিয়েশন এই রোগের একমাত্র চিকিৎসা। ক‍্যানসারের খারাপ এবং ভাল দু’রকম কোষই থাকে। কেমোথেরাপি খারাপ কোষগুলি নষ্ট করে দেয়। আর ভাল কোষগুলিকে বাঁচিয়ে রাখে। এ বার এই যে দীর্ঘ সময় ধরে চিকিৎসা চলে, সেই সময়েই কোনও ভাবে কিছু খারাপ কোষ ঘাপটি মেরে বসে থাকে। যেগুলি কেমোথেরাপিতেও মরেনি। এ বার সেই কোষগুলির রক্তস্রোতে প্রবাহিত হয়ে ফুসফুস, মস্তিষ্ক এবং দেহের অন‍্যান‍্য অংশে ছড়িয়ে পড়ে। ক‍্যানসার যখন প্রথম ধরা পড়ে, তখনই আমরা একটি পরীক্ষা করি তার নাম হল, ‘সিএটি স্ক‍্যান’। এর দ্বারা বোঝা যায় ক‍্যানসার শরীরের আর কোথায় কোথায় আছে। কিন্তু বোনম‍্যারো ক‍্যানসারের ক্ষেত্রে সব সময়ে এটা বোঝা যায় না। কারণ বোনম‍্যারো থেকে তো সারা দেহে রক্ত প্রবাহিত হচ্ছে। ফলে যদি আগেই কোনও খারাপ কোষ লুকিয়ে বসে থাকে, সেটা বোঝাটা একটু অসুবিধাজনক। এ বার সুস্থ হয়ে ওঠার পরে অনেকেই স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে শুরু করেন। কিন্তু সেই আড়ালে থাকা বিপজ্জনক কোষগুলি আবার কী খেলা দেখাতে শুরু করবে, তা আগে থেকে জানা সম্ভব নয়।’’

এক বার ক‍্যানসার মুক্ত হওয়ার পর দ্বিতীয় বার যাতে মারণরোগ শরীরে বাসা না বাঁধছে কি না, কোন উপসর্গগুলি দেখলে তা বোঝা যাবে? চিকিৎসক বলেন, ‘‘শারীরিক কোনও উপসর্গ দেখা দিলে সেগুলি অবহেলা না করা। যেখানে ক‍্যানসার হয়েছিল, সেখানকার হাড়ে কোনও ব‍্যথা হচ্ছে কি না। এমন কিছু হলে ত‍ৎক্ষণাৎ চিকিৎসকের পরামর্শ। এ ছাড়াও ওজন কমে যাওয়া, খিদে চলে যাওয়ার মতো লক্ষণগুলিও এড়িয়ে যাওয়ার মতো নয়। মাথা, লিভার এবং ফুসফুস মূলত এই তিনটি অঙ্গে ছড়িয়ে পড়ে ক‍্যানসার। ফলে অসহ‍্য মাথাব‍্যথা, কাশির সঙ্গে রক্ত বার হওয়া, নিশ্বাস নিতে কষ্ট হওয়ার মতো উপসর্গগুলি ক‍্যানসার ফিরে আসার লক্ষণ হতে পারে।’’

অন্য বিষয়গুলি:

Aindrila Sharma Death Cancer Tollywood Actor
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy