পুজোয় পেটপুজো বাদ দেবেন না হার্টের রোগীরা, শুধু কিছু নিয়ম মানুন। প্রতীকী ছবি।
হার্টের অসুখ ধরা পড়লেই হিমশিম দশা হয় রোগীর। এটা করা বারণ, তো ওটাতে মানা। পছন্দের খাবারে তো কড়া নিষেধাজ্ঞা জারি হয়ে যায়। আর যদি হার্টে অস্ত্রোপচার হয়, তা হলে কথাই নেই। বাইরে পা রাখাই বারণ হয়ে যাবে। কিন্তু পুজোর সময়ে কি দুয়ারে খিল এঁটে ঘরে বসে থাকা যায়! একেবারেই নয়। যতই অসুখ ঘাপটি মেরে থাক না কেন, পুজোর সময়ে হৃদয়কে কষ্ট দিয়ে লাভ নেই।
ঠাকুর দেখতে যাওয়ার আনন্দের শরিক হতে বাধা নেই হার্টের রোগীদেরও, এমনটাই জানালেন হৃদ্রোগ চিকিৎসক দিলীপ কুমার। তিনি বললেন, “হার্টের অসুখ নিয়ন্ত্রণে রেখে ঠাকুর দেখতে বেরোন একটু সকাল সকাল। রাত বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ভিড় বাড়ে। যত ভিড় এড়িয়ে চলবেন, ততই ভাল। হার্টের অসুখ থাকলে একটা কথা ভুললে চলবে না, যে কোনও রকম শারীরিক অস্বস্তি হলে কালবিলম্ব না করে বাড়ি ফিরে এসে বিশ্রাম নিতে হবে।”
পুজো মানেই রাত জেগে ঠাকুর দেখা, ভূরিভোজ, বাহারি খাবারের স্বাদ নেওয়া। পুজোর চার দিন অনিয়মই সঙ্গী। চিকিৎসক বলছেন, চাইলেও পুজোর সময়ে বেশি বিধি-নিষেধ কেউ মানেন না। মানতেও চান না। তাই আনন্দ করুন, কিন্তু নিয়ম মেনে। বাইরে খাওয়া আর হুল্লোড়ের মাঝেও শরীরের যত্ন নেওয়ার কথা ভুলে গেলে চলবে না। বিশেষত হার্টের সমস্যা যাঁদের রয়েছে, উৎসবের মরসুমেও তাঁদের নিয়ম না মেনে উপায় নেই। হার্টের অসুখ থাকলে বা আগে অস্ত্রোপচার হয়ে থাকলে, যে কঠিন নিয়ম মেনে চলতে হয়, পুজোর সময় তা খানিকটা শিথিল হতে পারে বটে। কিন্তু নিয়ম থেকে দূরে গিয়ে কোনও কিছুই করা ঠিক নয়। চিকিৎসকের পরামর্শ, “হার্টে যদি অ্যাঞ্জিওপ্লাস্টি হয়ে থাকে বা স্টেন্ট বসে, তা হলে বেশি তেলমশলা দেওয়া খাবার, ধূমপান-মদ্যপান থেকে দূরে থাকতে হবে। পছন্দের খাবার খেতে ইচ্ছে হলে খান, কিন্তু পরিমিত। এক দিন একটু ভারী খেয়ে ফেললে, পর দিন একদম হালকা স্যুপ জাতীয় জিনিস খান। নরম পানীয় একেবারেই চলবে না। আর পর্যাপ্ত বিশ্রাম নিতে হবে। রাত জেগে ঠাকুর দেখার ইচ্ছে হলে, সে লোভ ত্যাগ করাই ভাল।”
উৎসব-অনুষ্ঠানে আনন্দ বা হুল্লোড় মানে তার সঙ্গে খাওয়াদাওয়ার ব্যাপারটাও জড়িয়ে। আর বাঙালি মানেই ঝালে-ঝোলে-অম্বলে। সে হার্টের অসুখ হোক বা গ্যাস-অম্বলের সমস্যা, বাঙালি খাবেই। তাই হার্টের রোগীদের যে বিষয়টা নিয়ে সবচেয়ে বেশি চিন্তা, তা হল পুজোর ভূরিভোজ। চিকিৎসক লাল সতর্কতা জারি করেছেন বলেই যে পুজোর প্রতি দিনই সাদামাঠা খেতে হবে, তা কিন্তু নয়। এই বিষয়ে পুষ্টিবিদ শম্পা চক্রবর্তী আনন্দবাজার অনলাইনকে বললেন, “হার্টের রোগীদের লিপিড প্রোফাইল দেখেই ডায়েট দেওয়া হয়। যদি রক্তে খারাপ কোলেস্টেরল (এলডিএল), ট্রাইগ্লিসারাইড বেশি থাকে, তা হলে ভাজাভুজি একেবারেই বন্ধ। কিন্তু পুজোর ক’টা দিন একটু আনন্দই করুন। অষ্টমীর সকালে লুচিও খান, আবার বাইরে বেরিয়ে মুরগির মাংস খেতে ইচ্ছে হলেও খান। তবে কিছু নিয়ম মানুন।”
কী কী নিয়ম মানবেন?
ছাঁকা তেলে ডোবানো ভাজাভুজিটা খাবেন না। চিকেন পকোড়ার বদলে চিকেন তন্দুরি বা কবাবের পদ খেতেই পারেন। তবে পাঁঠার মাংস না খাওয়াই ভাল। চিকেনেরই নানা রকম পদ খান না, ক্ষতি কী!
পুজোর চারটে দিন বাড়িতে রসেবশে রান্না তো হবেই। ছোট মাছের ঝাল, অম্বল খেতেই পারেন। ইলিশে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন ডি, ওমেগা থ্রি ফ্যাটি অ্যাসিড থাকে। তাই ইলিশ খেলে সমস্যা নেই। তবে পরিমিত খেতে হবে। এক দিন দু’পিস খেলে পরদিন পেটকে বিশ্রাম দিন। পমফ্রেট মাছও খুব উপকারী। কম তেলে অল্প মশলায় পমফ্রেট খেলে কোনও ক্ষতি নেই।
রেস্তরাঁয় গিয়ে বিরিয়ানি না হয় না-ই বা খেলেন, নান বা তন্দুরি রুটি দিয়ে চিকেনের কোনও পদ খান। পনিরের নানা রকম পদ খেতেই পারেন। সঙ্গে যেন স্যালাড অবশ্যই থাকে। আর নুন কম খেতে হবে।
পুষ্টিবিদের পরামর্শ, যে দিন রেস্তরাঁয় খেলেন, তার পরদিন বাড়িতেই হালকা রান্না খাবার খান। সবুজ শাকসব্জি, ফল খেয়ে নিন। এতে শরীরে ফাইবার ঢুকে ভারসাম্য বজায় রাখবে। তবে যদি বেশি পটাশিয়ামে বারণ থাকে, তা হলে শাক বা সব্জি জলে ভিজিয়ে রাখুন কিছু ক্ষণ। জলে দ্রাব্য পটাশিয়াম সহজেই বেরিয়ে যাবে।
অষ্টমীর সকালের ফুলকো লুচিটা না হয় খেলেনই। তবে এর সঙ্গে মিষ্টিটা বাদ দিন। আর সে দিন দুপুরে পোলাওয়ের সঙ্গে মাংস এক টুকরোই খান। রসনাকে কষ্ট দিয়ে রোগ সারানো যায় না। বরং পরিমিত খেয়ে এবং নিয়ম মেনেই সব কিছু নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy