Advertisement
০৫ নভেম্বর ২০২৪
Period Delay Tablet

পুজোর মধ্যেই ঋতুস্রাবের দিন? ওষুধ খেয়ে পিছিয়ে দেওয়া কি ঠিক? কী বলছেন চিকিৎসকেরা?

ক্যালেন্ডারে ঋতুস্রাবের দিনটি নিয়েই বড় চিন্তা। হয়তো কোনও অনুষ্ঠান রয়েছে, কিংবা মধুচন্দ্রিমার বেড়ানো রয়েছে, অথবা উৎসব-পার্বণে যোগ দেবেন ভাবছেন, ঠিক সেই সময়টিতেই ঋতুস্রাবের দিন পড়লে উদ্বেগে ভোগেন অনেকেই।

Side effects of taking medicine to delay periods

ঋতুস্রাব পিছোনোর ওষুধ নিয়ে কী পরামর্শ দিলেন চিকিৎসকেরা? গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ।

আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ০১ অক্টোবর ২০২৪ ১৩:৩৭
Share: Save:

ঋতুস্রাব নিয়ে কমবেশি অনেকেই নাজেহাল। মাসের ওই চার থেকে পাঁচটা দিন যেন বড় যন্ত্রণার। কারও মেজাজ বিগড়ে যায় ঘন ঘন, কেউ আবার পেট-কোমরের ব্যথায় কাতর হন। ক্যালেন্ডারে ঋতুস্রাবের দিনটি নিয়েই বড় চিন্তা। হয়তো কোনও অনুষ্ঠান রয়েছে, কিংবা মধুচন্দ্রিমার বেড়ানো রয়েছে, অথবা উৎসব-পার্বণে যোগ দেবেন ভাবছেন, ঠিক সেই সময়টিতেই ঋতুস্রাবের দিন পড়লে উদ্বেগে ভোগেন অনেকেই। ঝক্কি এড়াতে ঋতুস্রাব পিছিয়ে দেওয়ার কথাও ভাবেন। এমন অনেককেই বলতে শুনবেন, গুটি কয়েক ওষুধ খেয়ে যদি ঋতুস্রাবের দিনটি ইচ্ছামতো পিছিয়ে দেওয়া যায়, তা হলে আর ক্ষতি কী!

গোলমালটা হয় সেখানেই। ঋতুস্রাব পিছোনোর ওষুধ খাওয়া ভাল না খারাপ, তা না জেনেই ইন্টারনেট ঘেঁটে এমন অনেক রকম ওষুধ খেয়ে ফেলেন মেয়েরা বা ঘরোয়া টোটকা প্রয়োগ করতে শুরু করেন, যার পরিণতি পরবর্তী সময়ে গিয়ে ভয়ঙ্কর হয়ে ওঠে। ঋতুস্রাব পিছোনোর নির্দিষ্ট কিছু ব্র্যান্ডের ওষুধ সব সময় নিজের সংগ্রহে রাখতেন তথ্যপ্রযুক্তি কর্মী মোনালিসা চট্টোপাধ্যায়। সময় মতো তা খেয়েও যেতেন। আর এই করতে গিয়েই ঋতুকালীন চক্রই অনিয়মিত হয়ে যায় মোনালিসার। তিনি বলছেন, “ঋতুস্রাব হলে এখনও বেশির ভাগ বাঙালি ঘরেই পুজো-পার্বণে অংশ নিতে দেওয়া হয় না। এমনকি, ঠাকুরঘরে অবধি ঢোকা নিষেধ থাকে অনেকের। তাই পুজোর দিনগুলিতে ঋতুস্রাবের দিন পড়লে আগে থেকেই ওষুধ খেতে শুরু করতাম। প্রথম প্রথম খুব বেশি সমস্যা হয়নি, কিন্তু পরে গিয়ে দেখা গেল, ঋতুস্রাব আর ঠিকমতো হতই না। ভয় পেয়ে তখন চিকিৎসকের কাছে যেতে হয়।” অনেক মেয়েকেই এই সমস্যার মুখোমুখি খেতে হয়েছে।

এই বিষয়ে স্ত্রীরোগ চিকিৎসক মল্লিনাথ মুখোপাধ্যায় আনন্দবাজার অনলাইনকে বলেন, “ঋতুস্রাব স্বাভাবিক প্রাকৃতিক প্রক্রিয়া। এর সঙ্গে নানা সংস্কার ও কুসংস্কার জুড়ে গিয়েছে বলেই এত রকম সমস্যা হচ্ছে। মলমূত্র ত্যাগের মতো প্রাকৃতিক প্রক্রিয়াকে আটকানোর বা পিছিয়ে দেওয়ার চেষ্টা কি হয়? তা হলে ঋতুস্রাবের বেলাতেই বা হবে কেন? ঋতুস্রাব নিয়ে মহিলাদের এখনও নানা জায়গায় বিড়ম্বনায় পড়তে হয়, তার থেকেই এই পিছিয়ে দেওয়ার ভাবনা এসেছে। এবং গাদা গাদা ওষুধ খেয়ে মারাত্মক সব শারীরিক সমস্যা দেখা দিচ্ছে।”

ঋতুস্রাব পিছনোর ওষুধ খেলে কী হতে পারে?

বিভিন্ন ব্র্যান্ডের ওষুধ পাওয়া যায়। দামও বেশি নয়। আবার কিছু রকম গর্ভনিরোধক ওষুধও আছে। মল্লিনাথের কথায়, ওষুধ যা-ই হোক না কেন, তার পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হবেই। ঋতুস্রাব মানে মাসের চার থেকে পাঁচ দিন কেবল রক্তপাত হওয়া নয়, এর সঙ্গে হরমোনের ওঠানামাও জড়িত। সবটাই হয় শারীরবৃত্তীয় প্রক্রিয়া মেনেই। তাই ঋতুস্রাব বন্ধ করতে বা পিছিয়ে দিতে চাইলে, পুরো শারীরবৃত্তীয় প্রক্রিয়াকেই থামিয়ে দিতে হবে। ফলে হরমোনের ওঠানামাও নিয়ম মেনে হবে না। ঋতুকালীন চক্র যদি পিছিয়ে যায়, তা হলে অন্যান্য শারীরবৃত্তীয় চক্রও উল্টো নিয়মে চলতে শুরু করবে। তখনই সমস্যা শুরু হবে।

সাধারণত ঋতুস্রাব যে দিন থেকে শুরু হবে, তার দুই থেকে তিন আগে ওষুধ খাওয়া শুরু করতে হয়। ঋতুস্রাব যত দিন পিছোতে চাইছেন, তত দিন ওষুধ খেয়ে যেতে হবে। ওষুধ খাওয়া বন্ধ করার তিন থেকে চার দিনের মাথাতেই ঋতুচক্র শুরু হবে। এই যে একটানা ঋতুকালীন চক্রকে থামিয়ে রাখার পক্রিয়া তাতেই হরমোনের ভারসাম্য নষ্ট হয়ে মাসিক চক্রে ব্যাঘাত ঘটাতে পারে। অনিয়মিত রক্তপাত, শরীরের বিভিন্ন গ্রন্থি ফুলে ওঠা, অনিয়ন্ত্রিত রক্তচাপ, মাইগ্রেন, হাঁপানির সমস্যা, মস্তিষ্কে ও ফুসফুসে রক্ত জমাট বাঁধার মতো লক্ষণও দেখা দিতে পারে। হজমের গন্ডগোল শুরু হবে, ওজন বাড়তে পারে, স্তনে শক্ত পিণ্ড বা টিউমারও তৈরি হতে পারে। কী ধরনের ওষুধ খেয়েছেন, তার উপরেই নির্ভর করবে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া কতটা মারাত্মক হবে।

ঋতুস্রাব নিয়ে কোনও দিনই ছুতমার্গ ছিল না বলেই জানালেন ইন্ডিয়ান কাউন্সিল অফ মেডিক্যাল রিসার্চের প্রাক্তন বিজ্ঞানী ও জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ দীপিকা সুর। তাঁর কথায়, “কখনও মনেই হয়নি পুজোয় আনন্দ করব বলে বা পুজো দেব বলে ঋতুস্রাবের দিন পিছিয়ে দেব। ঋতুকালীন চক্রের সঙ্গে মহিলাদের প্রজননের সম্পর্ক রয়েছে। এই প্রক্রিয়াকে তার স্বাভাবিক নিয়মে চলতে না দিলে, জনন প্রক্রিয়াও ব্যাহত হবে। ভবিষ্যতে সন্তানধারণে জটিলতা আসতে পারে।” কোন ওষুধের কী প্রতিক্রিয়া তা সাধারণ মানুষের পক্ষে জানা সম্ভব নয়। তাই দোকান থেকে যেমন খুশি ওষুধ কিনে খেয়ে ফেললে তার খারাপ প্রভাব তো পড়বেই। এমনও দেখা গিয়েছে, ঋতুস্রাব শুরু হয়ে যাওয়ার পরেও তাকে থামাতে গর্ভনিরোধক ওষুধ খেয়ে বিপদ ঘটিয়ে ফেলেছেন কেউ কেউ। রক্ত জমাট বাঁধার লক্ষণ দেখা গিয়েছে তাঁদের শরীরে। তাই এমন অঘটন না ঘটানোরই পরামর্শ দিচ্ছেন চিকিৎসকেরা।

ঋতুস্রাব লুকিয়ে রাখারও নয়, লজ্জারও নয়। এই জৈব প্রক্রিয়াকে পিছোনোর চেষ্টা না করে বরং ঋতুকালীন সময়ে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার চেষ্টাই করা উচিত। ছোট থেকেই ঋতুস্রাব নিয়ে মেয়েদের মধ্যে একটা ধারণা তৈরি করে দেওয়া প্রয়োজন। তাতে ঋতুস্রাবকালীন সময়ে পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখা ও সংক্রমণ প্রতিরোধ করা অনেক বেশি সহজ হয়ে যাবে।

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE