Advertisement
২২ সেপ্টেম্বর ২০২৪
Cold water splash

সকালে উঠে মুখে ঠান্ডা জলের ঝাপটা দেন? অজান্তেই কী কী উপকার হচ্ছে জানেন?

২০০১ সালে ব্রেন টিউমারে আক্রান্ত হন নিকি। মানসিক ভাবে বিধ্বস্ত হয়ে পড়েন। নিকির কাছে জানতে চাওয়া হয়েছিল, মানসিক স্বাস্থ্য ভাল রাখার সহজ টোটকার কথা। তিনিও ঠান্ডা জলের ঝাপটার কথা বলেছেন।

‘‘শুধু ঠান্ডা জলের ঝাপটা দিয়ে আমরা আমাদের মানসিক চাপ আর উদ্বেগকে অনেকটা দূরে রাখতে পারি’’! বলছেন চিকিৎসকেরা।

‘‘শুধু ঠান্ডা জলের ঝাপটা দিয়ে আমরা আমাদের মানসিক চাপ আর উদ্বেগকে অনেকটা দূরে রাখতে পারি’’! বলছেন চিকিৎসকেরা। ছবি : সংগৃহীত।

আনন্দবাজার অনলাইন ডেস্ক
কলকাতা শেষ আপডেট: ২২ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ১৫:৫০
Share: Save:

"ছেলেবেলায় দাঁত মাজিয়ে দেওয়ার পাশাপাশি মুখে ঠান্ডা জলের ঝাপটাও দিয়ে দিতেন বাবা-মা। চোখে-মুখে বুলিয়ে দিতেন ঠান্ডা জলে ভেজানো হাত। একটু বড় হয়ে যখন সকালে উঠে বই নিয়ে বসতে হত, তখন মনে হত অভ্যাসটা আসলে তৈরি করা হয়েছিল সদ্য জেগে ওঠা চোখ থেকে ঘুম তাড়ানোর জন্য। ঘুম চোখে জলের ঝাপটা দিতে গায়ে জ্বর আসত তখন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত বড় হওয়ার পরও অভ্যাসটা রয়ে গিয়েছে। আর এত দিন পরে জানতে পারছি, ছোটবেলায় ওই অভ্যাস তৈরি করে কতটা উপকার করেছিলেন বাবা-মা", বলছিলেন, বেসরকারি সংস্থায় কর্মরত দেবযানী বন্দ্যোপাধ্যায়। সম্প্রতি একটি পডকাস্টে চিকিৎসক বিশাখা শিবদাসনির পরামর্শ শুনে তিনি অবাক। দেবযানী বলছেন, "বুঝতেই পারিনি, অজান্তেই নিজের কতটা উপকার করেছি!"

বিশাখা ওই পডকাস্টে আলোচনা করেছেন, সকালে উঠে চোখে মুখে ঠান্ডা জলের ঝাপটা দেওয়ার উপকারিতা নিয়ে। বিশাখা বলেছেন, ‘‘সকালে মুখে শুধু ঠান্ডা জলের ঝাপটা দিয়ে আমরা আমাদের মানসিক চাপ আর উদ্বেগকে অনেকটা দূরে রাখতে পারি!’’

বিশাখার কথার সঙ্গে মিলে গিয়েছে যাপন সহায়ক এবং লেখিকা নিকি রসকোর বক্তব্যও। ২০০১ সালে ব্রেন টিউমারে আক্রান্ত হন ব্রিটেনের বাসিন্দা নিকি। মানসিক ভাবে বিধ্বস্ত হয়ে পড়েন। সেই জায়গা থেকে ফিরে এসে নিজেকে একজন যাপন সহায়ক হিসাবে প্রতিষ্ঠিত করেন। জীবনযুদ্ধে যাঁরা ঝড়ের মুখোমুখি হচ্ছেন, তাঁদের পাশে দাঁড়িয়ে এগিয়ে যেতে সাহায্য করেন। বইও লিখেছেন এ নিয়ে। এক সাক্ষাৎকারে নিকির কাছে জানতে চাওয়া হয়েছিল, মানসিক স্বাস্থ্য ভাল রাখার জন্য কোনও একটা জিনিস বলুন, যা থেকে সবাই উপকার পেতে পারেন। নিকি একবাক্যে জানিয়েছেন, ‘‘এক মুহূর্তে মেজাজ ঠিক করার জন্য টোটকা হল মুখে ঠান্ডা জলের ঝাপটা দেওয়া। এতে আপনার দৈনন্দিন মানসিক চাপ যেমন নিয়ন্ত্রণ সম্ভব, একই সঙ্গে এটি মনকে শান্ত করে যে কোনও সমস্যার মোকাবিলা করার শক্তিও জোগায়।’’

মুখে ঠান্ডা জলের ঝাপটা যে উপকারী, তার বৈজ্ঞানিক প্রমাণও রয়েছে।

মুখে ঠান্ডা জলের ঝাপটা যে উপকারী, তার বৈজ্ঞানিক প্রমাণও রয়েছে। ছবি: শাটারস্টক।

মুখে ঠান্ডা জলের ঝাপটা যে উপকারী, তার বৈজ্ঞানিক প্রমাণও রয়েছে। ইংল্যান্ডের ন্যাশনাল হেল্থ সার্ভিস-এর গবেষকেরা মুখে ঠান্ডা জলের ঝাপটার উপকারিতা নিয়ে একটি গবেষণা শুরু করেছিলেন ২০২২ সালে। প্রায় এক বছর ৫ মাস ধরে চলে সেই গবেষণা। লন্ডনের ব্রেন্ট রিসার্চ এথিক্স কমিটির দ্বারা অনুমোদন প্রাপ্ত সেই গবেষণাপত্র বলছে, ‘‘মুখে ঠান্ডা জলের ঝাপটা নিঃসন্দেহে মানব স্নায়ুতন্ত্রের দীর্ঘতম স্নায়ু ভেগাসকে সক্রিয় করে তোলে। যে স্নায়ু মনকে শান্ত রাখতে সাহায্য করে। উদ্বিগ্ন হলে বা মানসিক চাপ তৈরি হলে বা বিপদে পড়লে মানব শরীরের যে সমস্ত প্রতিক্রিয়া হয়, ভেগাস সক্রিয় হয়ে সেই সব কিছু শান্ত করতে পারে।’’

ঠিক কী ভাবে কাজ হয় ঠান্ডা জলের ঝাপটায়?

১। ভেগাসকে সক্রিয় করে: রয়্যাল সাসেক্স কাউন্টি হাসপাতাল গবেষণা করেছে ঠান্ডা জলে স্নানের মানসিক প্রভাব নিয়ে। গবেষোণা জানাচ্ছে, মুখে ঠান্ডা জলের স্পর্শ স্নায়ুতন্ত্রের ‘প্যারাসিমপ্যাথেটিক’ আচরণকে সক্রিয় করে তোলে। ভেগাস ওই কাজে সহায়ক। এতে দ্রুত হৃদস্পন্দন কমে। রক্তবাহিকাগুলিকে প্রশস্ত হয়, হজমে সহায়ক উৎসেচকের ক্ষরণ বৃদ্ধি করে, পেশিও শিথিল হয়। স্বাচ্ছন্দ্যবোধ আসে।

২। হরমোন ক্ষরণে প্রভাব: মুখে ঠান্ডা জলের স্পর্শ কিছু কিছু হরমোনের ক্ষরণ কমাতে পারে। ত্বকে অতিরিক্ত ঠান্ডা জলের স্পর্শ কর্টিসলের ক্ষরণ কমাতে পারে বলে মনে করছে বেশ কিছু গবেষণা। কর্টিসল হল ‘স্ট্রেস হরমোন’। যার প্রভাবে মানসিক চাপ অনুভূত হয়। আবার কিছু গবেষণা এ-ও বলছে যে, মানুষের মেজাজ নিয়ন্ত্রণকারী ভাল হরমোন ডোপামিনের ক্ষরণ বে়ড়েছে ত্বক ঠাণ্ডা জলের সংস্পর্শে আসার পরে।

মুখে ঠান্ডা জলের ঝাপটা দিন বা বরফ-ঠান্ডা জলে মুখ ডুবিয়ে নিন।

মুখে ঠান্ডা জলের ঝাপটা দিন বা বরফ-ঠান্ডা জলে মুখ ডুবিয়ে নিন। ছবি: শাটারস্টক

কখন কী ভাবে দিতে পারেন?

ঘুম থেকে উঠে প্রথমেই ঠান্ডা জলের ঝাপটা দিতে পারেন মুখে। কোথাও যাওয়ার আগে যদি সম্ভব হয় তবে কয়েক মিনিট সময় নিয়ে প্রথমে তিন বার গভীর শ্বাস নিন (নাক দিয়ে) এবং ছাড়ুন (মুখ দিয়ে)। তার পরে মুখে ঠান্ডা জলের ঝাপটা দিন বা বরফ-ঠান্ডা জলে মুখ ডুবিয়ে নিন। একটি স্প্রে করার বোতলে ঠান্ডা জল সঙ্গে রাখতে পারেন। দরকার মতো মুখে স্প্রে করতে পারেন সেই জল। তবে বাইরে থাকলে আর মুখে মেক আপ থাকলে মাথায় রখবেন যাতে মেকআপ ওয়াটারপ্রুফ হয়।

সতর্কতা

যদি হার্টের রোগ থাকে বা অন্য কোনও রোগজনিত সমস্যা থাকে, তবে চিকিৎসকের পরামর্শেই ঠান্ডা জলের ঝাপটা দিন। কারণ, মুখে ঠান্ডা জলের ঝাপটা মনকে শান্ত করার প্রক্রিয়ায় হৃদ্‌স্পন্দন কমাতে সাহায্য করে। রক্ত সঞ্চালনও বৃদ্ধি করে। হার্টের রোগী বা নির্দিষ্ট কিছু রোগের ক্ষেত্রে যা এড়িয়ে চলাই ভাল।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Cold water splash Mental Health stress management
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE