ছবিতে দেখা যাচ্ছে স্ট্রেচিং করছেন সুস্মিতা। ছবি: সংগৃহীত।
দিন কয়েক আগে সমাজমাধ্যমের পাতায় সুস্মিতা সেনের হার্ট অ্যাটাকের খবর ছড়িয়ে প়ড়ে। দেখা মাত্রই ঘুম উড়ে যায় অনুরাগীদের। শারীরিক ভাবে এত ফিট হয়েও হৃদ্রোগ ঠেকাতে পারলেন না নায়িকা, এমনই সব প্রশ্ন ওঠে। সমাজমাধ্যমে সুস্মিতা নিজেই জানিয়েছিলেন, তাঁর অ্যাঞ্জিয়োপ্লাস্টি হয়েছে, স্টেন্ট বসেছে। সেই পোস্টের ছ’দিনের মাথায় ফের শুরু হল নায়িকাকে নিয়ে চর্চা। এ বার অন্য কারণে।
ইনস্টাগ্রামে নিজের শরীরচর্চার ছবি দিয়েছেন সুস্মিতা। সদ্য এত বড় বিপদ গেল, এর মধ্যেই শরীরের উপর এমন চাপ দেওয়া কি ঠিক? উদ্বেগে এমনই সব প্রশ্ন তুলেছেন অনুরাগীরা।
ছবিতে দেখা যাচ্ছে, স্ট্রেচিং করছেন সুস্মিতা। অ্যাঞ্জিয়োপ্লাস্টি করার সাত দিনের মধ্যে কী করে শরীরচর্চা শুরু করলেন অভিনেত্রী, প্রাণের কি ভয় নেই? এমনই সব প্রশ্ন উঠতে থাকে নানা মহলে।
অ্যাঞ্জিয়োপ্লাস্টির কত দিন পর শরীরচর্চা শুরু করা যায়?
হার্টের সমস্যা ধরা পড়ার পর কিংবা হার্ট অ্যাটাকের পরে অ্যাঞ্জিয়োপ্লাস্টি করে স্টেন্ট বসানো হবে, না কি বাইপাস সার্জারি করা হবে, তা নির্ভর করে সমস্যার ধরনের উপর। চিকিৎসকরা মনে করেন, কতগুলি ধমনীর কত শতাংশ ব্লক হয়েছে এবং রোগীর বয়স ও তাঁর শারীরিক অবস্থা কেমন, তার উপর নির্ভর করে এই সিদ্ধান্ত। ইদানীং হার্টের অসুখে ৮০ থেকে ৯০ শতাংশ রোগীর ক্ষেত্রেই অ্যাঞ্জিয়োপ্লাস্টি করে স্টেন্ট বসিয়ে দেওয়ার দিকে ঝুঁকছেন চিকিৎসকরা। বাইপাস করতে যে পরিমাণ সময় ও খরচ লাগে, তা স্টেন্ট বসানোর ক্ষেত্রে লাগে না। চিকিৎসক সুবর্ণ গোস্বামী বললেন, ‘‘অ্যাঞ্জিয়োপ্লাস্টির কত দিন পর শরীরচর্চা শুরু করা যাবে, সেটা এ রকম ধরেবেঁধে বলা যায় না। অ্যাঞ্জিয়োপ্লাস্টির আগে রোগীর কতটা ব্লক ছিল, তার সামগ্রিক শারীরিক অবস্থার উপর পুরোটাই নির্ভর করে। সুস্মিতা সেনের হার্ট অ্যাটাক হয়েছে ঠিকই, কিন্তু তিনি শারীরিক ভাবে ভীষণ ফিট ছিলেন, নিয়মিত শরীরচর্চাও করতেন। আশা করছি, চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়েই তিনি অল্পবিস্তর শরীরচর্চা শুরু করেছেন। নিয়মিত চিকিৎসকের সঙ্গে যোগাযোগে থাকলে সাত দিনের মাথায় শরীরচর্চা শুরু করা যায়। অল্প অল্প করে করলে খুব বেশি ক্ষতির আশঙ্কা নেই। রোগীর শারীরিক অবস্থা দেখেই তিনি কবে থেকে শরীরচর্চা করতে পারবেন, সে বিষয় পরামর্শ দেন চিকিৎসকরা। সেটা সাত দিনও হতে পারে, আবার কারও ক্ষেত্রে তিন মাসও হতে পারে। তবে অ্যাঞ্জিয়োপ্লাস্টির পর পরই ভারী ওজন নিয়ে শরীরচর্চা করা যাবে না। হালকা ব্যায়াম, যোগাসন দিয়ে শুরু করা ভাল। তবে বার বার বলছি, সেটা করতে হবে চিকিৎসকের অনুমতি নিয়েই।’’
কখন সতর্ক হতে হবে?
অ্যাঞ্জিয়োপ্লাস্টির পর চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে শরীরচর্চা শুরু করলেও রোগীকে খুব সাবধানে থাকতে হবে। চিকিৎসক বলেন, ‘‘শরীরচর্চার সময়ে হৃদ্স্পন্দন অত্যধিক হারে বেড়ে যাচ্ছে কি না, ইসিজির গ্রাফে বড় রকম কোনও পরিবর্তন আসছে কি না— সে দিকগুলিও নজরে রাখতে হবে। কোনও অস্বাভাবিকতা চোখে পড়লেই আবার কিছু দিন শরীরচর্চা বন্ধ রাখতে হবে।’’
অ্যাঞ্জিয়োপ্লাস্টি হওয়ার পর শরীরচর্চা ছাড়াও আর কী কী বিষয় সাবধানে থাকতে হবে?
এ ক্ষেত্রে ডায়েট ও জীবনধারায় বেশ কিছু পরিবর্তন আনতে হবে। সুবর্ণ বলেন, ‘‘অ্যাঞ্জিয়োপ্লাস্টির পর বেশি তেল-মশলাযুক্ত খাবার খাওয়া যাবে না। ডায়েটে ফ্যাটের মাত্রা একেবারেই কমিয়ে আনতে হবে। কার্বোহাইড্রেটের পরিমাণ নিয়েও বেশি সতর্ক থাকতে হবে। বেশি করে শাকসব্জি ও ফল রাখতে হবে। মানসিক চাপ থেকে দূরে থাকতে হবে। সময়ে খাওয়া, সময়ে ঘুম ভীষণ জরুরি। সিঁড়ি ভাঙা ও পাহাড়ে চড়ার ক্ষেত্রেও সতর্ক থাকতে হবে রোগীকে।’’
সুস্থ হয়ে বাড়ি ফেরার পর অনুরাগীদের জন্য বিশেষ বার্তা দেন সুস্মিতা। তিনি বলেন, “শরীরচর্চা করা সত্ত্বেও আমার হার্ট অ্যাটাক হয়েছে। তবে এটা ভাববেন না যে, ব্যায়াম করে কী হবে! তা হলে বলি, আমার খুবই বড় হার্ট অ্যাটাক হয়েছিল। ধমনীতে ৯৫ শতাংশ ব্লকেজ ছিল। নিয়মিত শরীরচর্চা করতাম বলেই এই পরিস্থিতির সঙ্গে মোকাবিলা করতে পেরেছি।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy