অস্থিমজ্জার ক্যানসারের সঙ্গে দীর্ঘ দিন লড়াই করেছেন অভিনেত্রী। ছবি: সংগৃহীত
২০১৫ সালে অস্থিমজ্জার ক্যানসারে আক্রান্ত হন অভিনেত্রী ঐন্দ্রিলা শর্মা। তার পর ক্যানসারের সঙ্গে দীর্ঘ দিনের লড়াই। সম্প্রতি সেই লড়াইয়ে একটা দাঁড়ি পড়ল। ২৪ বছর বয়সে প্রয়াত হলেন তিনি। বিশ্বজুড়ে ক্যানসারে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা ক্রমশ ঊর্ধ্বগামী হচ্ছে। সবচেয়ে বেশি যে ক্যানসারগুলিতে আক্রান্ত হন মানুষ, তার মধ্যে অন্যতম অস্থিমজ্জার ক্যানসার।
রক্তে তিন ধরনের রক্ত কণিকা থাকে। লোহিত রক্ত কণিকা (আরবিসি), শ্বেত রক্ত কণিকা (ডব্লুবিসি) এবং অনুচক্রিকা। অস্থিমজ্জার ভিতরে এই রক্ত কণিকাগুলি তৈরি হয়ে শিরা-উপশিরা মাধ্যমে শরীরে প্রবাহিত হয়। হাড়ের ভিতরে স্পঞ্জের মতো এক প্রকার উপাদান থাকে। যাকে চিকিৎসার পরিভাষায় বলা হয় ‘স্টেম সেল’। এই কোষগুলির পরিমাণ মজ্জার ভিতরে অস্বাভাবিক হারে বাড়তে শুরু করলে অস্থিমজ্জার ক্যানসার দেখা দেয়। হাড়ের ক্যানসারের সঙ্গে একে গুলিয়ে ফেললে চলবে না। এই ক্যানসার শরীরে বাসা বেঁধেছে কি না, তা বোঝার বেশ কিছু উপসর্গ রয়েছে।
১) শারীরিক দুর্বলতা
২) বারে বারে প্রস্রাব হওয়া
৩) সব সময় তৃষ্ণার্ত থাকা
৪) শরীরের আর্দ্রতা কমে যাওয়া
৫) খিদে কমে যাওয়া
৬) মাথা ঘোরা
৭) হাড়ে ব্যথা
৮) কিডনির সংক্রান্ত সমস্যা দেখা দেওয়া
এই উপসর্গগুলি দেখা দিলে অতি অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া জরুরি। তবে এই ধরনের ক্যানসার প্রতিরোধ করতে জোর দিতে হবে স্বাস্থ্যকর খাওয়াদাওয়ার উপরে। অস্থিমজ্জার ক্যানসার থেকে সুরক্ষিত থাকতে রোজের পাতে কোন খাবারগুলি রাখতেই হবে?
সবুজ শাকসব্জি
ক্যানসার বলে নয়, যে কোনও মারণরোগ থেকে সুরক্ষিত থাকতে শাকসব্জির জুড়ি মেলা ভার। বিশেষ করে অ্যান্টিঅক্সিড্যান্ট-সমৃদ্ধ শাকসব্জি বেশি করে খাওয়া জরুরি। তবে যে সব্জিই খান না কেন, তা অল্প আঁচে এবং কম তেলে রান্না করে খেতে হবে। বিশেষ করে ক্যানসারের চিকিৎসা চললে কাঁচা সব্জি একেবারেই খাওয়া যাবে না। তাতে সংক্রমণ আরও বেড়ে যেতে পারে। এমন সব্জি খেতে হবে যেগুলি রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সক্ষম। ক্যানসার তো বটেই, সেই সঙ্গে আরও অনেক কঠিন রোগের সঙ্গেও যেন লড়তে পারে শরীর।
ফাইবার-সমৃদ্ধ খাবার
অস্থিমজ্জার ক্যানসারের সঙ্গে লড়তে ফাইবার আছে এমন খাবার বেশি করে খাওয়া প্রয়োজন। কারণ ফাইবারের ক্যানসারের অন্যতম শক্তিশালী প্রতিদ্বন্দ্বী। অনেক সময় কেমো চলার পর কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা দেখা দেয়। সে সব এড়াতে ফাইবারে ভরপুর খাবার খাওয়া অত্যন্ত জরুরি। বেদানার রস বেশি করে খেতে পারেন। এ ছাড়াও আপেল, পেয়ারা তো রয়েছেই। ওটমিল, বাদাম, বিনস্, ব্রকোলি, গাজরের মতো সব্জি বেশি করে খান। ক্যানসারে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা অনেকটাই কমবে।
ভিটামিন এবং মিনারেলস সমৃদ্ধ খাবার
শরীরে ভিটামিন এবং মিনারেলস যেন পর্যাপ্ত পরিমাণে যায়, সে দিকে লক্ষ রাখুন। ভিটামিনের ঘাটতি কিন্তু আরও অনেক কঠিন রোগ ডেকে আনতে পারে। একই ভাবে মিনারেলসও সমান জরুরি সুস্থ থাকতে। অনেকেই ভিটামিন সাপ্লিমেন্ট খান। চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া এই ধরনের পানীয় না খাওয়াই ভাল। প্রাকৃতিক ভাবে যাতে শরীরে ভিটামিনের পরিমাণ ঠিক রাখা যায়, সে দিকেও জোর দেওয়া প্রয়োজন।
এই ধরনের ক্যানসার এড়িয়ে চলতে কোন খাবারগুলি এড়িয়ে চলবেন?
পাঁঠার মাংস, অ্যালকোহল জাতীয় পানীয়, সুশি, বাইরের প্রক্রিয়াজাত খাবার, রাস্তার কাটা ফল, কাঁচা শাকসব্জি, অত্যধিক তেল-মশলাদার খাবার— সুরক্ষিত থাকতে এগুলি যথাসম্ভব এড়িয়ে চলাই ভাল। ক্যানসার মানেই মৃত্যু নয়। কিন্তু চিকিৎসা চলাকালীন যে শারীরিক এবং মানসিক যন্ত্রণার মধ্যে দিয়ে যেতে হয়, তা সব সময় সহ্য করা করা সম্ভব হয় না। তেমন অভিজ্ঞতার মুখোমুখি হতে না চাইলে বদল আনুন খাওয়াদাওয়া এবং জীবনধারায়।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy