কাশি শুরু হলে থামবে না। সেই সঙ্গেই শুরু হবে শ্বাসকষ্ট। খাবার খাওয়া, এমনকি জল খেতে গেলেও কষ্ট হবে। শ্বাসনালিতে ঢুকে যেতে পারে খাবারের কণা। ফুসফুসের এমনই এক সংক্রামক রোগ ক্রমশ বাড়ছে। আক্রান্ত ৫ থেকে ১০ বছরের শিশুরাই। ইন্ডিয়ান অ্যাকাডেমি অফ পেডিয়াট্রিক্স--এর (আইএপি) সমীক্ষা বলছে, দেশে শিশুদের মধ্যে হুপিং কাশি চিন্তার কারণ হয়ে উঠছে। এই সংক্রমণে শিশুমৃত্যুর হারও বেশি। একমাত্র প্রতিষেধকই ঠেকাতে পারে এই সংক্রমণ। তাই দেশের সব জায়গায় শিশুরা হুপিং কাশির প্রতিষেধক ঠিকমতো পাচ্ছে কি না, সে নিয়ে ভাবনাচিন্তা শুরু হয়েছে।
হুপিং কাশি কী? কেন বেশি ভুগছে শিশুরা?
হুপিং কাশি ফুসফুসের সংক্রমণজনিত রোগ। চিকিৎসাবিজ্ঞানে রোগটিকে বলা হয় ‘পার্টুসিস’। এটি মূলত বর্ডেটেল্লা পার্টুসিস নামক ব্যাক্টেরিয়া থেকে ছড়ায়। এই ব্যাক্টেরিয়া ফুসফুসে বাসা বাঁধলে, মারাত্মক কাশি শুরু হয়। এই বিষয়ে শিশুরোগ চিকিৎসক প্রিয়ঙ্কর পাল জানাচ্ছেন, রোগটির অনেকগুলি পর্যায় আছে। শুরুতে নাক দিয়ে জলা পড়া, হাঁচি, অ্যালার্জির মতো সমস্যা দেখা যায়। একে সাধারণ সর্দি-কাশি ভেবে এড়িয়ে যান অনেক অভিভাবকই। এক সপ্তাহের মধ্যে শুকনো কাশি শুরু হয়ে যায়। সেই সঙ্গে শ্বাস নিতে কষ্ট হয়। ঢোঁক গিলতে কষ্ট হয়। স্লিপ অ্যাপনিয়ার সমস্যা শুরু হয় শিশুদেরও। খাবার খেলেই বমি হয়ে যায়। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে শারীরিক অবস্থা আরও খারাপের দিকেই যায়।
আরও পড়ুন:
চিকিৎসকের কথায়, যে হারে দূষণ বাড়ছে তাতে ফুসফুসের নানা রোগ বেড়েই চলেছে। বাতাসে ভাসমান ধূলিকণার গড় পরিমাণের (পিএম ২.৫ মাত্রা বেড়ে গেলে শ্বাসজনিত সমস্যা, সর্দি-কাশি, হাঁপানির সমস্যা বাড়ে। দূষিত বাতাসের সঙ্গে ব্যাক্টেরিয়াও ঢুকে পড়ে শ্বাসনালিতে এবং খুব দ্রুত সংখ্যায় বেড়ে ফুসফুসে ছড়িয়ে পড়ে। আইপিএ-র সমীক্ষা বলছে, ৫ বছরের নীচে গড়ে প্রতি হাজার জন শিশুর মধ্যে ১১৫ জন আক্রান্ত হয় প্রতি বছর, আর ১০ বছরের নীচে সেই সংখ্যা ৮৫ বা তার বেশি। ৬ মাস বা তার কমবয়সি শিশুদের মধ্যেও সংক্রমণ বাড়ছে।
প্রতিরোধের উপায় কী?
দূষণের মাত্রা কমানো সম্ভব নয়। তাই দূষিত বাতাস থেকে শিশুর ফুসফুস বাঁচানোর উপায় হল সঠিক সময়ে টিকা দিয়ে রাখা। ৬ মাস বা তার বেশি বয়সি শিশুদের ইনফ্লুয়েঞ্জার টিকা দিয়ে রাখতেই হবে। এতে ভাইরাল জ্বরের হাত থেকে অনেকটাই রেহাই পাওয়া যাবে। পাঁচ বছরের নীচে শিশুদের জন্য নিউমোকক্কাল প্রতিরোধী টিকা দেওয়ার ব্যবস্থাও রয়েছে। এতে জীবাণু সংক্রমণের ঝুঁকি কমবে। এ ছাড়া কেবলমাত্র হুপিং কাশির জন্য ‘হোল-সেল পার্টুসিস’ ও ‘অ্যাসেলুলার পার্টুসিস’ প্রতিষেধক রয়েছে। ডিটিপি-১, অর্থাৎ ডিপথেরিয়া, টিটেনাস এবং পার্টুসিসের টিকাও রয়েছে ছোটদের জন্য। চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে এই টিকাও সময়মতো দিয়ে রাখতে পারলে ঝুঁকি কমবে।