বাড়ি থেকে অফিসের কাজের ব্যস্ত জীবনের মাঝে সকালে বা বিকেলে ৪০-৪৫ মিনিট সময় বার করা কি চাট্টিখানি কথা! কী ধরনের ব্যায়াম করা ভাল, তা খুঁজে বার করতেই সময় চলে যায়। এ দিকে অফিসে টানা ৮-৯ ঘণ্টা বসে কাজে শরীরের যে কত ক্ষতি হচ্ছে, তা বলার নয়। আমেরিকার ‘জার্নাল অফ লাইফস্টাইল মেডিসিন’-এ প্রকাশিত সাম্প্রতিক গবেষণাপত্রেও লেখা হয়েছে, টানা ঘণ্টা দুয়েক যদি চেয়ারে বসে কম্পিউটার স্ক্রিনের দিকে তাকিয়ে থাকেন কেউ, তা হলে যেমন চোখের বারোটা বাজবে, তেমনই নিতম্বের পেশির অসাড়তাও বাড়বে। কেবল তা-ই নয়, দীর্ঘ সময় বসে কাজ করছেন যাঁরা, তাঁদের এক অদ্ভুত সমস্যা দেখা দিচ্ছে, যার নাম ‘অফিস চেয়ার বাট সিনড্রোম’। এতে নিতম্বের পেশির আকারই বদলে যাচ্ছে, ফলে বদলাচ্ছে নিতম্বের গড়ন। এর থেকে বাঁচতে বিরতি নিয়ে কাজ করা ও নিয়মিত কিছু ‘স্ট্রেচিং এক্সারসাইজ়’ করার পরামর্শ দিচ্ছেন ফিটনেস প্রশিক্ষকেরা।
শরীরের নমনীয়তা বৃদ্ধি করতে, পেশি মজবুত করতে স্ট্রেচিংয়ের বিকল্প নেই। এই ব্যায়াম শরীর হালকা করে। মাসল টোন্ড হয়। আলসেমি কাটাতেও স্ট্রেচিং দারুণ উপকারী। এই বিষয়ে ফিটনেস প্রশিক্ষক অনুপ আচার্যের মত, স্ট্রেচিং করলে পা, কোমর ও নিতম্বের পেশির ব্যায়াম হয়। তাতে পেশির জোর বাড়ে এবং পিঠে-কোমরের ব্যথা কমে। যতই কাজ থাক, সকালে ১০ মিনিট ও কাজের শেষে বিকেলে ১০ মিনিট কয়েক ধরনের স্ট্রেচিং করলে উপকার হবে। ‘স্লিপ ডিস্ক’-এর মতো রোগের ঝুঁকিও কমবে।
কী কী স্ট্রেচিং করবেন?
নেক স্ট্রেচ
ঘাড় সোজা করে বা ঝুঁকিয়ে কম্পিউটার বা ল্যাপটপের দিকে একটানা তাকিয়ে থাকার কারণে ঘাড়ের পেশির নমনীয়তা কমতে থাকে। পেশি শক্ত হয় এবং ঘাড় ঘোরাতে গেলেই ব্যথা করে। এর থেকে স্পন্ডিলাইটিসের সমস্যাও বাড়ে। তাই কাজের ফাঁকে নেক স্ট্রেচ করে নেওয়া জরুরি। এর জন্য চেয়ারে সোজা হয়ে বসে দুই কাঁধ টানটান রাখতে হবে। শ্বাস-প্রশ্বাস স্বাভাবিক রেখে ঘাড়-মাথা ডান দিকে থেকে বাঁ দিকে ঘুরিয়ে আনুন ১০ বার। মাথা সোজা করুন। এ বার বাঁ দিক থেকে ডান দিকে ১০ বার। এ বার মাথা পিছন দিকে হেলিয়ে দিন যথাসম্ভব। তার পরে সামনের দিকে ঝোঁকান। এটাও ১০ বার।
আরও পড়ুন:
আর্ম সার্কল
কাঁধ সোজা রেখে প্রথমে ঘড়ির কাঁটার দিকে, ও পরে ঘড়ির কাঁটার বিপরীতে হাত ১০ বার করে ঘোরাতে হবে। এই ব্যায়ামে কাঁধ ও হাতের পেশির নমনীয়তা বাড়বে।
শোল্ডার রোল
শিরদাঁড়া সোজা করে দাঁড়িয়ে কাঁধকে ১০ বার ঘড়ির কাঁটার দিকে ও ১০ বার ঘড়ির কাঁটার বিপরীতে ঘোরাতে হবে। এতে কাঁধের পেশির জোর বাড়বে। ঘাড়, পিঠ, কাঁধের ব্যথা কমে যাবে।
ক্যাট-কাউ পোজ়
বিদেশে এই ব্যায়ামের গালভরা নাম ক্যাট-কাউ পোজ়। এ দেশে এই ব্যায়ামটি যোগাসনের একটি বিশেষ পদ্ধতি চক্রবক্রাসন। এতে পিঠে ব্যথা, ঘুমের সমস্যা, মানসিক চাপ কমবে।
চেস্ট ওপেনার স্ট্রেচ
চেয়ারে সোজা হয়ে বসুন। কাঁধ সোজা রেখে দুই হাত পিঠের দিকে নিয়ে যান। এ বার পিঠের দিকে এক হাত দিয়ে অন্য হাত ধরুন। পিঠ টানটান রেখে দুই হাত যতটা সম্ভব পিছনের দিকে টানুন। বুক প্রশস্ত হবে, ওই অবস্থানে ২০-৩০ সেকেন্ড থাকুন। গভীর ভাবে শ্বাস নিতে ও ছাড়তে হবে। ৩০ সেকেন্ড পরে আগের অবস্থানে ফিরে আসুন।
ফরোয়ার্ড ফোল্ড
সোজা হয়ে দাঁড়ান। তার পর কোমর ভেঙে দুই হাত দিয়ে দুই পায়ের পাতা স্পর্শ করার চেষ্টা করুন। মাথা যতটা সম্ভব নীচের দিকে ঝোঁকান। প্রথম প্রথম পায়ের পাতা স্পর্শ করতে সমস্যা হবে, ধীরে ধীরে অভ্যাস হয়ে যাবে। সারা শরীরের স্ট্রেচিং হবে এই ব্যায়ামে।