মিষ্টি খাওয়ার পরেই জলের দিকে এগিয়ে যায় হাত! তা সে রসগোল্লা-সন্দেশ হোক বা চকোলেট, পেস্ট্রি— মিষ্টি জাতীয় খাবার খেয়ে এক ঢোঁক জলের জন্য অনেকেই কাতর হয়ে পড়েন। মিষ্টি খাওয়ার পরে জল খাওয়ার ইচ্ছে অস্বাভাবিক কিছু নয়। কিন্তু স্বাস্থ্যের জন্য সেই অভ্যাস কি ভাল?
সম্প্রতি সমাজমাধ্যমে কেউ কেউ দাবি করেছেন, মিষ্টি খাওয়ার পরে জল খাওয়ার অভ্যাস ভাল। কারণ, তা পেটের স্বাস্থ্যের উপর মিষ্টির ক্ষতিকর প্রভাব কমিয়ে দিতে সাহায্য করে। এ কথা শুনে উৎসাহিত হয়েছেন অনেকেই। তার কারণ, দুনিয়া জুড়ে মিষ্টির ভক্ত নেহাত কম নেই। খাওয়ার পরে একটু মিষ্টি না হলে চলে না, এমন মানুষের সংখ্যা অগুন্তি। তাঁদের অনেকেই ক্ষতিকর প্রভাব জেনেও মিষ্টি খাওয়া আটকাতে পারেননি। স্রেফ জল খেয়ে মিষ্টির ক্ষতি কমিয়ে দেওয়া যাবে শুনলে তাঁদের আনন্দ হওয়ারই কথা। তবে ওই দাবিতে কতটা জল আর কতটা সত্যি, তা ব্যাখ্যা করে বুঝিয়েছেন এক পুষ্টিবিদ।

মিষ্টির কু-প্রভাব জানার পরেও মিষ্টি খাওয়ায় রাশ টানতে পারেন না অনেকে। ছবি: সংগৃহীত।
মীনু বালাজি একটি হাসপাতালের পুষ্টিবিদদের বিভাগীয় প্রধান। তিনি বলছেন, ‘‘মিষ্টি খাওয়ার পরে জল খেলে তা মোটেই শরীরে চিনির ক্ষতিকর প্রভাব কমাতে পারেন না। তবে অন্য ভাবে সাহায্য করতে পারে।’’
মিষ্টি খাওয়ার পরে জল খেলে কী কী উপকার?
১। শর্করার মাত্রা: এক ধাক্কায় শরীরে শর্করার মাত্রা অনেকখানি বেড়ে যাওয়ার ঘটনাকে বলা হয় ‘সুগার স্পাইক’। যা শুধু ডায়াবিটিসের রোগী নয়, সুস্থ মানুষের স্বাস্থ্যের পক্ষেও ক্ষতিকর। মীনু বলছেন, ‘‘শরীরে জল কম থাকলে সুগার স্পাইক বেশি হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। শরীরে জলের মাত্রা যথাযথ থাকলে তা তুলনামূলক কম হবে।’’
২। হজম: জল হজমে সাহায্য করে বলে জানাচ্ছেন পুষ্টিবিদ। তিনি বলছেন, হজমের জন্য যে উৎসেচক শরীর থেকে নিঃসৃত হয়, জল তার সঙ্গে মিশে খাবারকে ভাঙতে এবং হজম করতে সাহায্য করে। জল লালা নিঃসরণেও সাহায্য করে, যা হজমে সহায়ক।

দাঁতে আটকে থাকা খাবার পরিষ্কার হয়ে যায় জল খেলে। — ফাইল চিত্র।
৩। দাঁতের স্বাস্থ্য: খাবার দাঁতে আটকে থাকলে তা থেকে ব্যাক্টেরিয়া তৈরি হতে পারে। মিষ্টি জাতীয় খাবার ব্যাক্টেরিয়াকে আরও সক্রিয় করে তুলতে পারে। মিষ্টি খাওয়ার পরে জল খেলে মুখে মিষ্টির টুকরো আটকে থেকে যাওয়ার সম্ভাবনা কমে। তাতে দাঁতের স্বাস্থ্যও ভাল থাকে।
মিষ্টি খাওয়ার আগে খেয়াল রাখুন
মিষ্টি যাতে পেটের স্বাস্থ্যের ক্ষতি না করে তার জন্য কয়েকটি বিষয় খেয়াল রাখতে বলছেন পুষ্টিবিদেরা।
১। প্রোটিন, ফাইবার, স্নেহপদার্থ: মিষ্টির সঙ্গে সব সময় ফাইবার, প্রোটিন বা স্বাস্থ্যকর স্নেহপদার্থ খান। তাতে ওই মিষ্টি খাবারের গ্লাইসেমিক ইনডেক্সের পরিমাণ কমবে। মিষ্টির সঙ্গে এক মুঠো বাদাম, অথবা শুকনো কড়ায় ভাজা সূর্যমুখীর বীজ বা কুমড়োর বীজও খেতে পারেন।

মিষ্টির সঙ্গে মিশিয়ে নিতে পারেন বাদাম। — ফাইল চিত্র।
২। স্বাস্থ্যকর বিকল্প: সব থেকে ক্ষতিকর মিষ্টি হল প্রক্রিয়াজাত সাদা চিনি। তাই পেটের স্বাস্থ্য ভাল রাখতে হলে চিনির বদলে স্বাস্থ্যকর মিষ্টির বিকল্প বেছে নিন। কলা, আপেল, খেজুর অথবা অল্প পরিমাণে গুড় বা মধু খাওয়া যেতে পারে।
৩। পরিমাণে নিয়ন্ত্রণ: মিষ্টি খেলে অতিরিক্ত পরিমাণে না খেয়ে অল্প খান। একটা গোটা চকোলেটের বদলে এক টুকরো খেলেন। কিংবা এক বাটি হালুয়ার বদলে নিলেন দু’চামচ। এ ভাবেও ক্ষতিতে রাশ টানা সম্ভব।