চিকিৎসকদের মতে, বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই ইদানীং শ্বেতি হয় অতিরিক্ত রাসায়নিক ব্যবহার থেকে । ছবি: শাটারস্টক।
শ্বেতির সঙ্গে কমবেশি সকলেই পরিচিত। এই রোগ কখন কার শরীরে হানা দেবে তা, আগে থেকে তা বলা যায় না। যেমন বলা যায় না, এই রোগ থেকে মুক্তি পাওয়ার সহজ কোনও উপায়ের কথা। রোগটি মারণ নয়, ঘাতকও নয়। তবে এক বার শরীরে বাসা বাঁধলে তা আস্তে আস্তে ছড়িয়ে পড়ে সারা দেহে। আত্মবিশ্বাসের অভাবে ভুগতে শুরু করেন মানুষ।
কেন শ্বেতি হয়?
আমাদের ত্বকের রং তৈরি করতে সাহায্য করে মেলানোসাইট কোষে থাকা মেলানিন নামক এক রঞ্জক পদার্থ। শারীরিক সমস্যার কারণে শরীরের রোগ প্রতিরোধ শক্তি বা অ্যান্টিবডি ত্বকের রং তৈরি করা এই কোষগুলিকে শত্রু মনে করে ধ্বংস করতে থাকে। এবং ত্বক তার স্বাভাবিক রং হারাতে থাকে। এরই ফলেই শ্বেতি ছড়িয়ে পড়ে সারা শরীরে। এতে শুধু ত্বকই নয়, অনেক সময়ে চুল এবং রোমও সাদা হয়ে যায়। শ্বেতির প্রভাব পড়ে চোখের মণির উপরেও।
চিকিৎসকদের মতে, বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই ইদানীং শ্বেতি হয় অতিরিক্ত রাসায়নিক ব্যবহার থেকে । রোজকার জীবনে এই সব রাসায়নিক সকলের ত্বক সহ্য করতে পারে না। তখনই শুরু হয় সমস্যা। হেয়ার ডাই ব্যবহারের ক্ষেত্রে সাবধান হওয়া জরুরি। এতে থাকা পি-ফেনিলেনেডিয়ামাইন বা ‘পিপিডি’ শ্বেতি ডেকে আনতে পারে। এ ছাড়া সাবধানতা অবলম্বন করুন ডিও, পারফিউম স্প্রে, ফর্সা হওয়ার বিভিন্ন ক্রিম, ক্ষতিকর রাসায়নিক মেশানো সানস্ক্রিন, অ্যাডহেসিভ রয়েছে এমন কোনও আঠালো দ্রব্য, ডিটারজেন্ট, কড়া অ্যান্টিসেপটিক থেকেও। এগুলি ব্যবহার করলেই যে শ্বেতি হবে এমনটা নয়, তবে যাঁদের ত্বক এই সব রাসায়নিকের সঙ্গে মানিয়ে নিতে পারে না, বিপদে পড়বেন তাঁরাও।
কী করলে শ্বেতি ছড়াবে না?
ওষুধ ও অস্ত্রোপচার দু’ভাবেই এ রোগের চিকিৎসা হতে পারে। ত্বকের স্বাভাবিক রং ফিরিয়ে আনতে স্টেরয়েড জাতীয় ওষুধ ও ক্রিম দেওয়া হয়। কিছু ক্ষেত্রে ফোটোথেরাপিও করানো হয় বা আক্রান্ত অংশে ওষুধ লাগিয়ে রোদে দাঁড়িয়ে অতিবেগুনি রশ্মিও গায়ে লাগানোর কথাও বলে থাকেন চিকিৎসকরা। ওষুধ খাওয়ার পরেও যদি রোগটি ঠোঁট ও আঙুলের ডগায় ছড়িয়ে যায়, তখন চিকিৎসকরা স্কিন গ্রাফ্টিং করার সিদ্ধান্ত নেন। শ্বেতির সমস্যা থাকলে খুব বেশি ক্ষণ সূর্যের আলো গায়ে না লাগানোই ভাল। বেশি করে সানস্ক্রিন ব্যবহার করে তবেই রোদে বেরোতে হবে। রোদে বেরোনোর সময় জামাকাপড় পরার বিষয় সতর্ক থাকতে হবে। রোদ যাতে খুব বেশি গায়ে না লাগে, সে বিয়য়টি মাথায় রেখে জামাকাপড় নির্বাচন করতে হবে। মানসিক চাপ বেড়ে গেলে কিন্তু শ্বেতির সমস্যা বাড়তে শুরু করে। কর্টিসল হরমোন শ্বেতি ছড়িয়ে পড়ার অন্যতম কারণ হতে পারে। তাই শ্বেতি হলে নিয়মিত যোগাসন, ধ্যানের মধ্যে থাকা ভাল। শ্বেতির সঙ্গে কারও যদি থাইরয়েড, ডায়াবিটিস, অ্যাজ়মা, এগজ়িমা বা অন্য অটোইমিউন ডিজিজ় থাকে, যা শ্বেতির চিকিৎসাকে প্রভাবিত করতে পারে, তা হলে রোগটি সারানো সহজ নয়।
তবে প্রথম থেকে ঠিক মতো চিকিৎসা না করালে এক বার যদি তা সারা শরীরে ছড়িয়ে পড়ে, তা হলে কিন্তু মুশকিল।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy