ছবি : আইস্টক।
স্বাস্থ্যসচেতনতার দুনিয়ায় প্রতি দিনই আবির্ভাব ঘটছে নতুন নতুন পানীয়ের। কেউ দারচিনি ভেজানো জল খেতে বলছেন, কেউ মৌরি ভেজানো জল, হলুদ, আমলকি, শসা, চিয়াবীজ, পাতিলেবু, ঘি— তালিকার শেষ খুঁজে পাওয়া মুশকিল। কিছু না হলে শুধুই গরম জল খাওয়ার পরামর্শ দিচ্ছেন পুষ্টিবিদেরা। সেই সব জলের ভিড়েই হঠাৎ মাথা তুলে দাঁড়িয়েছে ঢেঁড়স ভেজানো জল বা ‘ওকরা ওয়াটার’।
ব্রিটেন, আফ্রিকা, আমেরিকার স্বাস্থ্যসচেতনদের মধ্যে হইচই ফেলে দিয়েছে ওই পানীয়। যাঁরা ব্যবহার করছেন, তাঁদের অনেকেই জানিয়েছেন ঢেঁড়সের জল নিয়মিত খেয়ে তাঁদের পেট ভাল আছে। এক সমাজমাধ্যম প্রভাবী এবং রূপটান সংস্থার প্রধান জানিয়েছেন, ছ’মাস ঢেঁড়সের জল খেয়ে তাঁর ত্বক অনেক মসৃণ আর ঝলমলে হয়ে উঠেছে।
ঢেঁড়সের জলের উপকার
জরিফা নামের ওই প্রভাবীর নিজের ‘বিউটি ব্র্যান্ড’ রয়ছে। ইনস্টাগ্রামে একটি রিলে তাঁকে বলতে শোনা যাচ্ছে, ‘‘আমি গত ছ’মাস ধরে ঢেঁড়স ভেজানো জল খাচ্ছি। আর এই ছ’মাসে আমার জীবন পুরো বদলে গিয়েছে। প্রথমেই আমি খেয়াল করি, আমার পেটের সমস্যা দূর হয়েছে, হজমের সমস্যা হচ্ছে না। আর এখন আমার ত্বক আর চুলের স্বাস্থ্যও অনেক ভাল হয়ে গিয়েছে। আমার ত্বক এখন অনেক বেশি পেলব আর উজ্জ্বল, চুলও ঝলমল করে।’’
টিকটক ভিডিয়োয় এক স্বাস্থ্যসচেতনতার প্রভাবী এলা হেনরি আবার বলছেন, ‘‘ঢেঁড়সের জলের পিচ্ছিল ভাবের আড়ালে লুকিয়ে আছে প্রচুর পুষ্টিগুণ। পাশাপাশি হজমশক্তিকেও ভাল রাখতে পারে ওই জল।’’
চিকিৎসক কী বলছেন?
জাফিরার ওই ভিডিয়ো ইনস্টাগ্রামে ভাগ করে নিয়েছেন ব্রিটেনের এক শল্যচিকিৎসক কর্ণ রাজন। ঢেঁড়শের জল যে সত্যিই কার্যকরী, তা জানিয়েছেন তিনিও। কারণ হিসাবে রাজন প্রথমেই বলেছেন, ‘‘ঢেঁড়সের জল প্রিবায়োটিক, যা অন্ত্রে থাকা ভাল ব্যাক্টেরিয়াকে পুষ্টি জোগায়। ফলে তা বিপাকে সাহায্য করে, কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে পেট পরিষ্কার রাখতে সাহায্য করে এবং খাবার থেকে পুষ্টি সংগ্রহেও সাহায্য করে।’’ গোটা শরীরের পাকশালা হল পেট। পেট ভাল থাকলে ত্বক, চুল, হার্ট, হরমোনের ক্ষরণ এবং ফলত মস্তিষ্কের স্বাস্থ্যও যে ভাল থাকে, তা প্রমাণিত সত্য। চিকিৎসক করণ সে কথাই বলেছেন। তিনি বলছেন, ‘‘যদি নিজের অন্ত্রের স্বাস্থ্য ভাল রাখতে চাও, তা হলে ঢেঁড়সের জল সত্যিই কিন্তু সাহায্য করতে পারে। ঢেঁড়সকে জলে ভেজালে যে পিচ্ছিল পদার্থ বেরিয়ে আসে তাতে যেমন প্রচুর ফাইবার থাকে তেমনই থাকে অন্ত্রকে ভাল রাখার ‘সুপার পাওয়ার’। ঢেঁড়সের জল এলডিএল বা ‘মন্দ’ কোলেস্টেরল কমাতে সাহায্য করে। এমনকি, এটি খেলে পেট ভরেও থাকে দীর্ঘ ক্ষণ। যা ওজন কমানোর ক্ষেত্রেও কাজে লাগতে পারে। ’’
পুষ্টিগুণ আছে কি?
গাল্ফের এক পুষ্টিবিদ চেলসি রে বুর্গেওঁ বলছেন, ‘‘ঢেঁড়সে আছে ফাইবার, ভিটামিন সি, ম্যাগনেশিয়াম এবং ফোলেট। এ ছাড়াও ঢেঁড়শে অ্যান্টিঅক্সিড্যান্ট আর প্রদাহরোধক উপাদানও আছে, যা অন্ত্রে প্রদাহ নিয়ন্ত্রণ করে হজমশক্তি বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে। একই সঙ্গে রক্তে শর্করা হঠাৎ বেড়ে যাওয়ার যে সমস্যা আমাদের সারা দিনের খাওয়াদাওয়ার ইচ্ছেকে প্রভাবিত করে, তাতেও লাগাম টানতে পারে।’’ তবে একই সঙ্গে বুর্গেওঁ বলছেন, ঢেঁড়সে থাকা কিছু উপাদান ‘টাইপ টু ডায়াবিটিস’ সারানোর ওষুধের ক্ষমতা কমিয়েও দিতে পারে।
কী ভাবে বানাবেন?
ঢেঁড়স ছোট ছোট টুকরোয় কেটে একটি জল ভর্তি কাচের গ্লাসে ঢেলে সারা রাত ভিজিয়ে রাখতে হবে। সকালে ওই জল পান করতে হবে।
কী ভাবে খাবেন?
রূপ পরিচর্যা প্রভাবী জাফরী জানিয়েছেন, তিনি এক সপ্তাহে ৩-৪ বারে মোট ১.৭ লিটার ঢেঁড়স ভেজানো জল খান। জাফরী বলছেন, ‘‘পরিমাণ দেখে হয়তো কারও কারও মনে হবে কী করে খাই। কিন্তু বিশ্বাস করুন জলের মতোই খেতে। স্ট্র দিয়ে খেলে তো কিছু বোঝাই যাবে না।’’ বুর্গেওঁ অবশ্য বলছেন, ‘‘একটু কাঁচা ঢেঁড়সের গন্ধ থাকবে জলে। আমি নিজে খেয়ে দেখেছি। খাওয়া যায় না তা নয়। তবে আমার মনে হয়েছে, গোটা ঢেঁড়স খেতে এর চেয়ে অনেক ভাল।’’ ব্রিটেনের চিকিৎসক রাজনও বলছেন, ‘‘ঢেঁড়সের জল সত্যিই উপকারী। তা বলে রান্না করা ঢেঁড়সে উপকার কমে যায়, তা নয়। রান্না করা ঢেঁড়সেও প্রচুর ফাইবার এবং পুষ্টিগুণ বজায় থাকে। এমনকি, ঢেঁড়সের পিচ্ছিল ভাবের উপকার পাওয়া যায় রান্না করা ঢেঁড়স খেলেও।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy