রোজ কী কী খেলে শরীর সুস্থ থাকবে? ছবি: সংগৃহীত।
ভাত-ডাল-মাছেই বাঙালি। আমাদের রোজের খাওয়া মানে ভাত বা রুটি, ডাল, তরকারি, মাছ, মাংস বা ডিমই বুঝি। সেই সঙ্গে দুধ, কিছু বাদাম বা দানাশস্যও থাকে রোজের পাতে। কিন্তু তা-ও দেখা যায়, রোজের এই খাবার খেয়েও কারও ওজন বাড়ে, আবার কারও কমতে থাকে। কেউ ভোগে অপুষ্টিতে, তো কেউ স্থূলতায়। ইন্ডিয়ান কাউন্সিল অফ মেডিক্যাল রিসার্চের (আইসিএমআর) তথ্য বলছে, ৫৬.৪ শতাংশ ভারতীয়ই সঠিক ডায়েট মেনে চলেন না। সে জন্য অনেক শিশুই ছোট থেকে ম্যারাসমাস জাতীয় অপুষ্টির শিকার হয়। আবার অনেকে ভোগে ডায়াবিটিস বা হাইপারটেনশনে। বাড়তি ওজন বা স্থূলত্বেরও শিকার অনেকে।
ওজন কমানোর জন্য লো ক্যালোরি ডায়েট মেনে চলতে হবে, এই মিথের পিছনে আমরা সকলেই ছুটি। কিন্তু লো ক্যালোরি ডায়েট ঠিক কাকে বলে? ঠিক কতটা ক্যালোরি আমাদের প্রয়োজন প্রতি দিন? তা হলে জেনে রাখুন এর কোনও নির্দিষ্ট হিসাব নেই। আইসিএমআর-এর রিপোর্ট বলছে, বেশ কিছু বিষয়ের উপর নির্ভর করে দৈনন্দিন ক্যালোরির পরিমাণ। রোজ আমরা কী খাচ্ছি, কতটা খাচ্ছি, সেই খাবার থেকে শরীরে কতটা পুষ্টি উপাদান যাচ্ছে, আর কতটা খারাপ জিনিস ঢুকছে, তার সঠিক পরিমাণ বার করে সুষম খাবারের তালিকা তৈরি করার নামই ডায়েট। একে বলা হয় সুষম ডায়েট বা ব্যালান্সড ডায়েট।
সুষম ডায়েট কী?
আইসিএমআর একটি হিসাব দিয়েছে। রোজের ভাত-ডাল-তরকারি অথবা মাছ-মাংস-ডিম, দানাশস্য, দুধ বা দুগ্ধজাত দ্রব্য সঠিক পরিমাণে খাওয়াই হল সুষম ডায়েট। এই ডায়েট মেনে চললে ওজন তো বাড়বেই না, পাশাপাশি কোলেস্টেরল, হাইপারটেনশন, এমনকি টাইপ-২ ডায়াবিটিস থেকেও রেহাই পাওয়া যাবে। ২০১৯ সালের ‘কম্প্রিহেনসিভ ন্যাশনাল নিউট্রিশন সার্ভে’-র একটি রিপোর্ট বলছে, এই সুষম ডায়েট সঠিক ভাবে মেনে চললে হার্টের রোগ, ডায়াবেটিস, উচ্চ কোলেস্টেরল, অপুষ্টি বা স্থূলত্বের মতো সমস্যা ৮০ শতাংশ কমে যাবে।
কেমন হবে রোজের খাওয়াদাওয়া
সুষম ডায়েট রোজকার যাপনে মেনে চলাই যায়। এতে আলাদা করে বিশাল খরচের ব্যাপার নেই, ঘরে যা রোজকার খাওয়াদাওয়া তারই একটু এ দিক-ও দিক করে ডায়েট মানা যায়। কার্বোহাইড্রেট, ফ্যাট, প্রোটিন, ভিটামিন, মিনারেল সব থাকবে রোজের খাদ্যতালিকায়। সবুজ শাকসবজি, স্যালাড যেন রোজের খাদ্যতালিকায় থাকে। ডাল, রুটি ফাইবারের জোগান অটুট রাখবে। গোটা ফলেও প্রচুর ফাইবার থাকে। আবার ঘি, সর্ষের তেল, তিলের তেল, আখরোট, কাজু, আমন্ড ফ্যাটের চাহিদা পূরণ করবে। তবে বাইরে থেকে কেনা খাবার, ট্রান্স ফ্যাট আছে এমন খাবার খাওয়া চলবে না। রোজের খাবার থেকেই কার্বোহাইড্রেট, প্রোটিন, ফ্যাট ছেঁকে নিতে হবে। প্রোটিনের জন্য ডাল, পনির, ছানা, ডিম, চিকেন, ছোলা-মুগ, ছাতু, মাছ সবই খাওয়া যেতে পারে।
কোন খাবার কতটুকু
প্রতি দিন ২০০০ কিলো ক্যালোরি পেতে হলে পাতে কী কী থাকবে?
১) সবুজ শাকসব্জি অন্তত ৪০০ গ্রাম (পুষ্টিবিদেরা বলছেন, সারাদিনে খাবারকে যদি ৬টি ছোট ছোট ভাগে ভাগ করি, তাহলে দিনে অন্তত চার থেকে পাঁচ বাটি (১০০-১৫০ গ্রাম) সবজি খাওয়া জরুরি।)
২) তাজা ফল ৫০ থেকে ১০০ গ্রাম (আধ কাপের মতো)
৩) নানা রকম দানাশস্য (গম, বাজরা, ওট্স, মিলেট ইত্যাদি) ২৫০ গ্রাম (আড়াই কাপের মতো)
৪) ডাল জাতীয় খাবার ৮৫ গ্রাম (৩/৪ কাপ)
৫) দই/দুধ ৩০০ মিলিলিটার (এক মেট্রিক কাপ প্রায় ২৫০ মিলিলিটারের সমান। সুষম ডায়েটে দিনে এক থেকে দেড় কাপ দুধ বা দই রাখলে ভাল।)
৬) বাদাম, বীজ ৩৫ গ্রাম (৩ চা চামচের মতো)
৭) ফ্যাট ২৭ গ্রাম (আড়াই চা চামচের মতো)
৮) চিনি মেপে খেতে হবে, দিনে ২০-২৫ গ্রামের বেশি নয়। (সাধারণত দিনে দুই চা চামচ চিনিই যথেষ্ট।)
বিভিন্ন ধরনের বাদামে ‘ভাল ফ্যাট’ এবং প্রোটিন থাকে। আমন্ড, পেস্তা, ওয়ালনাট, কাজু বাদাম, চিনে বাদাম— সবই স্বাস্থ্যকর স্ন্যাক্স হিসাবে খাওয়া যেতে পারে। কিছু বাদাম রাতে ভিজিয়ে রাখলে সকালে ঘুম থেকে উঠে জলখাবারের আগে খেয়ে নিন। অনেক বেশি উপকার পাবেন। সকালের ব্যস্ততায় চটজলদি খাওয়াও হয়ে যাবে। তা ছাড়া, বিকেলের হাল্কা জলখাবারের জন্য চিয়া সিড, ফ্ল্যাক্সসিড, কুমড়োর বীজ একসঙ্গে মিশিয়ে রেখে দেওয়া যেতে পারে। খিদে পেলে রোল-চাউমিন বা বার্গার অর্ডার না দিয়ে এই নানা রকম বীজ খেলে খিদেও মিটবে, শরীরও সঠিক পুষ্টি পাবে।
আমরা ছোট থেকে যে পরিবেশে যা খেয়ে বড় হয়ে উঠেছি, আমাদের শরীরও সে ভাবেই তৈরি হয়েছে। শরীরের গড়ন ও চাহিদাও সেই অনুযায়ী। কেউ যদি ছোট থেকে দু’বেলা ভাত খেয়ে বড় হন আর হঠাৎ ভাত খাওয়া বন্ধ করে দেন, তার বদলে শুধু সব্জি ও মাংস সেদ্ধ খেতে থাকেন, তা হলে কিন্তু শরীর মেনে নেবে না। নানা রকম অসুখবিসুখ দেখা দেবে। কিছু দিন পরেই ডায়েট ভুলে বেশি করে জাঙ্ক ফুড খেয়ে ফেলবেন। তাই যা-ই খাবেন, পরিমিত ভাবেই খেতে হবে। সময়মতো খেতে হবে।
আইসিএমআর-এর রিপোর্ট বলছে, বিএমআই (বডিমাস ইনডেক্স) ৩০-এর উপরে উঠতে দেওয়া যাবে না। মোট ক্যালোরির ২৫ থেকে ৩৫ শতাংশ যেন আসে উপকারি ফ্যাট থেকে, স্যাচুরেটেড ফ্যাট ৭ শতাংশের বেশি থাকলে চলবে না৷ উদ্ভিজ্জ প্রোটিন বেশি খেতে হবে, রেড মিট, অ্যালকোহল একদম বয়কট করতে হবে। প্রক্রিয়াজাত মাংস, বেশি তেল রয়েছে এমন খাবার বাড়িয়ে দেয় কোলেস্টেরলের মাত্রা। ডায়েটের সঙ্গেই নিয়ম করে শরীরচর্চা করতে হবে। মেদহীন, ছিপছিপে চেহারা সুষম ডায়েটের একমাত্র লক্ষ্য নয়, বরং রোগহীন, সুস্থসবল, চনমনে থাকাটাই কাম্য।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy