বদলেছে জীবন। বেড়েছে ব্যস্ততা, ছোটাছুটি। খিদের মুখে ভাজাভুজি বা জাঙ্ক ফুড খাওয়ার প্রবণতা, ধূমপান, মদ্যপানের প্রভাব পড়ছে শরীরে। তার উপর রয়েছে কর্মক্ষেত্রে চাপ, দুশ্চিন্তা, ক্লান্তি। ফলাফল, কম বয়সেই ঘাড়ে, কোমরে ব্যথা, ৩৫-এ পৌঁছেই গেঁটে বাত, ডায়াবিটিস। অসুখের তালিকা দীর্ঘ। বয়স বাড়লে শরীর স্বাভাবিক ভাবেই জানান দেবে। তবে চিকিৎসক থেকে পুষ্টিবিদেরা বলছেন, অসুখের কারণ লুকিয়ে নিত্যদিনের যাপনপদ্ধতি, অস্বাস্থ্যকর খাবার খাওয়ার অভ্যাসেও। শরীরে জীবাণু সংক্রমণ, ভুল খাদ্যাভ্যাস, হজম প্রক্রিয়ায় গোলমাল, শরীরে টক্সিন জমে যাওয়া প্রদাহের কারণ হতে পারে। আর তা থেকেই জন্ম নিতে পারে নানা রকম অসুখ। অস্থিসন্ধিতে ব্যথা, ক্লান্তি, ওজন বৃদ্ধির নেপথ্য কারণ হতে পারে প্রদাহ।
এখন প্রশ্ন হল সেই প্রদাহ কমবে কী ভাবে? প্রদাহজনিত অসুখ হলে চিকিৎসকের কাছে যেতেই হবে। তবে জীবনযাপন সংক্রান্ত বিষয়ের লেখক, উদ্যোগপতি, সমাজমাধ্যম প্রভাবী লিউক কুটিনহো বলছেন, ‘‘সুস্থ থাকার চাবিকাঠি লুকিয়ে ভারতীয় হেঁশেলেই। রান্নায় ব্যবহৃত রকমারি মশলাতেই রয়েছে প্রদাহনাশক উপাদান।’’ পুষ্টিবিদ শম্পা চক্রবর্তী বলছেন,‘‘ সর্দিকাশি থেকে ব্যথা-বেদনা, অ্যালার্জি— এমন অনেক কিছুই প্রদাহজনিত কারণে হতে পারে। আর ভারতীয় মশলার নিজস্ব গুণ যে আছে, তা নিয়ে তো সন্দেহ নেই।’’
আরও পড়ুন:
প্রদাহজনিত সমস্যা কমাতে কোন খাবার খাবেন?
হলুদ: হলুদে থাকা ‘কারকিউমিন’-এ রয়েছে প্রদাহনাশক উপাদান। অক্সিডেটিভ স্ট্রেস দূর করতে সাহায্য করে এটি। ভারতীয় রান্নায় হলুদ ব্যবহার হয় মশলা হিসাবে। চাইলে সকালে উঠে খেতে পারেন হলুদের শটও। অনেকে সকালে কাঁচা হলুদ চিবিয়ে খান। আবার দুধে মিশিয়েও খেতে পারেন হলুদ।
আদা: আদাতেও রয়েছে প্রদাহরোধক উপাদান। পুষ্টিবিদ জানাচ্ছেন, এতে থাকা জিনজেরল নামক অ্যান্টিঅক্সিড্যান্টও প্রদাহ কমাতে সাহায্য করে। সর্দিকাশিতে আদা অত্যন্ত উপকারী। বমি ভাব কমাতেও সাহায্য করে এটি। জলে আদা ফুটিয়ে, মধু দিয়ে তা ভেষজ ‘চা’ হিসাবে খেতে পারেন। দৈনন্দিন রান্নায় মশলা হিসাবেও আদা ব্যবহার করা যায়। মিশিয়ে নিতে পারেন স্মুদিতেও।
রসুন: প্রদাহনাশক উপাদান রয়েছে রসুনেও। এতে মেলে অ্যালিসিন, যা প্রদাহ কমানোর পাশাপাশি হার্টের স্বাস্থ্য ভাল রাখতে সাহায্য করে। রান্নায় এটি মশলা হিসাবে ব্যবহার করা যায়। আবার চাইলে জলে ভিজিয়ে বা কোনও খাবারের সঙ্গে কড়ায় হালকা নাড়াচাড়া করেও এটি খাওয়া যায়।
পালং শাক: ফ্ল্যাভোনয়েডস, ক্যারোটিনয়েডস, ভিটামিন ই সমৃদ্ধ পালং শাকে রয়েছে লিউটেইন, জিয়াক্স অ্যান্থিন নামক প্রদাহরোধক উপাদান। এতে মেলে ভিটামিন সি। পালংশাক যেমন শরীরে ফাইবার, ভিটামিন, খনিজের জোগান দেয়, তেমনই প্রদাহজনিত রোগ প্রতিরোধেও সাহায্য করে।
সজনে পাতা: সজনে ডাঁটা, সজনে পাতা খাওয়ার চল বাংলায় বহু দিনের। পাতে মাঝেমধ্যে সজনে পাতা রাখলেও প্রদাহ কমতে পারে। শম্পা বলছেন, সজনে পাতা বা সজনে ডাঁটায় থাকা অ্যান্টিঅক্সিড্যান্ট অ্যান্থোসায়ানিন প্রদাহনাশক হিসাবে কাজ করে। ভিটামিন এ, সি মেলে এতে। সজনে পাতা কোলেস্টেরল এবং রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করে।
রাজমা, মুগ: এই খাবারগুলিও স্বাস্থ্যের জন্য ভাল। প্রদাহনাশক উপাদান রয়েছে এগুলিতে। ডালের মধ্যে মুগ খাওয়া যায়। রাজমার তরকারিও পাতে রাখতে পারেন।
হেঁশেলের রকমারি মশলার নানা পুষ্টিগুণ থাকলেও, সকলের জন্য সব কিছু উপযুক্ত নয়। কিডনির সমস্যা থাকলে মুগ ডাল বা রাজমা খেতে হবে চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে।
প্রতিবেদনটি সচেতনতার উদ্দেশ্যে লেখা। মশলার অনেক গুণ আছে। তবে প্রদাহজনিত কোনও সমস্যা হলে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া প্রয়োজন।