লিভারেও যে পরতে পরতে মেদ জমে, সে নিয়ে ধারণা নেই অনেকেরই। লিভারের মেদও যে মারাত্মক অসুখ, সে নিয়ে সচেতনতা না থাকায় চিকিৎসাও হয় দেরিতে। লিভারের অসুখ উত্তরোত্তর বেড়ে চলেছে দেশে। বিশেষ করে ফ্যাটি লিভারে আক্রান্ত হচ্ছেন বহু মানুষ। কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রক নন-অ্যালকোহলিক ফ্যাটি লিভার ডিজ়িজ় (এনএএফএলডি) নিয়ে সচেতনতামূলক নির্দেশিকাও জারি করেছে আগে। সাম্প্রতিক সমীক্ষাতেও তেমনই ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে। বিশ্বের অন্তত ২৫ থেকে ৩৫ শতাংশ মানুষ আক্রান্ত এনএএফএলডি-তে।
শিকাগোর ‘এন্ডোক্রিন সোসাইটি’-র বার্ষিক সম্মেলনে প্রকাশিত একটি সমীক্ষার রিপোর্টে গবেষকেরা দাবি করেছেন, নন অ্যালকোহলিক ফ্যাটি লিভারের সমস্যা বেড়ে চলেছে। ভারতের জনসংখ্যায় প্রতি ১০ জনের মধ্যে অন্তত ৩ জনই ভুগছেন এই রোগে। মাত্র ক’দিন আগেই বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (হু)-র রিপোর্টে ভারতকে বলা হয়েছে ‘বিশ্বের মধুমেহ রাজধানী’। মধুমেহ বা ডায়াবিটিস তো তবু চেনা, কিন্তু একেবারে যা অজানা তা হল এনএএফএলডি, নিঃশব্দ ঘাতকের মতো যা হানা দিচ্ছে।
নন অ্যালকোহলিক ফ্যাটি লিভার কী?
এক ধরনের ‘মেটাবলিক ডিসফাংশন’। খাবার ঠিকমতো হজম না হলে শরীর থেকে টক্সিনও বেরোতে পারে না। তখন সেই টক্সিন জমা হতে হতে শরীরে খারাপ কোলেস্টেরলের মাত্রা বাড়িয়ে দেয়। বাড়তে থাকে ট্রাইগ্লিসারাইডও। মেদ জমতে শুরু করে শরীরে এবং তা লিভারেও জমা হতে থাকে। লিভারে জমা মেদের পরিমাণ যদি অনেক বেড়ে যায়, তা হলে তা থেকে সংক্রমণ দেখা দিতে পারে। লিভারে ঘা বা ক্ষত তৈরি হতে পারে, যাকে লিভার সিরোসিস বলে। এই সিরোসিসই পরবর্তী সময়ে গিয়ে লিভার ক্যানসারের কারণ হতে পারে।
আরও পড়ুন:
সমীক্ষায় দাবি করা হয়েছে, ভারতীয়দের খাবারে তেল-মশলা-স্নেহপদার্থের প্রয়োগ অনেক বেশি। সেই তুলনায় হজমশক্তি কম। তা ছাড়া শরীরচর্চার অভ্যাসও নেই অনেকের। ফলে দৈনন্দিন খাদ্যাভ্যাস ও জীবনযাপনে অসংযমই ফ্যাটি লিভারের সমস্যা আরও বাড়িয়ে তুলছে। ফলে লিভারের মতো অতি গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গটি দিন দিন কমজোরি ও অকেজো হয়ে পড়ছে।
এই বিষয়ে মেডিসিনের চিকিৎসক অরুণাংশু তালুকদারের মত, শুধু অতিরিক্ত মদ্যপানই নয়, অনিয়ন্ত্রিত খাদ্যাভ্যাস ও জীবনযাপনও এগিয়ে দিতে পারে সিরোসিস ও ক্যানসারের দিকে। এনএএফএলডি গোড়ার দিকে শনাক্ত হলে তাকে সামলানো সম্ভব। দরকার ওজন কমানো, খাবারে ক্যালোরি সীমিত রাখা, ফ্যাট কার্বোহাইড্রেট ও শর্করাযুক্ত খাবার কমিয়ে দেওয়া, নিয়মিত ব্যায়াম করা। এনএএফএলডি হলে খিদে অনেক বেড়ে যাবে, ভাজাভুজি-মিষ্টি খাওয়ার প্রবণতা বাড়বে, প্রস্রাব হলুদ হতে থাকবে। এর থেকে জন্ডিসও হতে পারে। কাজেই সাবধান থাকাই বাঞ্ছনীয়।