গত বছরেও যে পোশাকটি অনায়াসে পরেছেন, এই শীতের মরসুমে সেটি আর গায়ে আঁটছে না। টেনেটুনে যদি বা পরলেন, ছোট্টখাট্টো ভুঁড়ি সমস্ত সৌন্দর্য মাটি করে দিল। অনেক সময় সারা শরীরে মেদ না জমলেও, তা গিয়ে জমতে থাকে তলপেটে।
ভুঁড়ি বা পেটে-কোমরে মেদ জমার নানা কারণ হতে পারে। পেটের মেদ সামগ্রিক স্বাস্থ্য নিয়ে চিন্তা বাড়ায়। হৃদ্রোগ থেকে ডায়াবিটিস, সবের আশঙ্কা বাড়তে থাকে। বিপাকক্রিয়া দুর্বল করে দেয়। কেউ কেউ তা দেখেই চিন্তিত হয়ে খাওয়াদাওয়া একেবারে কমিয়ে দেন। তাতে আবার উল্টো বিপত্তি হতে পারে।
তার চেয়ে বরং পেটের মেদ ঝরাতে জীবনযাত্রায় বদল আনুন। বদলে ফেলুন সকালের রুটিন। তবে, প্রশ্ন উঠতেই পারে, সকালের সঙ্গে মেদ ঝরানোর কী সম্পর্ক?
এখন গভীর রাত পর্যন্ত মোবাইলে চেখে রেখে অনেকেই সকালটা বিছানা আঁকড়ে পড়ে থাকেন। এই নিয়ম বদলাতে হবে। পর্যাপ্ত ঘুম না হলে শরীর মোটেই ভাল থাকবে না। তার জের পড়বে হজমেও। সকালের রোদ-হাওয়া শরীর চনমনে থাকবে, হাঁটাহাটিতে কমবে ওজন। প্রাণায়মে ভাল থাকবে শরীর এবং মন।
সকালে কী ভাবে শুরু করতে হবে?
জল: সকালে উঠে জল খেতে বলতেন মা-ঠাকুমারা। পুষ্টিবিদ শম্পা চক্রবর্তী বলছেন, রাতভর বিপাকক্রিয়া চলার ফলে শরীরে কিছু টক্সিন বা দূষিত পদার্থ তৈরি হয়। সকালে উঠে তা শরীর থেক বার করে দেওয়ার জন্য জল খাওয়া জরুরি। চাইলে কেউ ডিটক্স পানীয় খেতে পারেন। ঈষদুষ্ণ জলে পাতিলেবুর রস খাওয়া যায়। এ ছা়ড়া দারচিনি, মেথি যে কোনও উপকরণই খাওয়া যায়।
ঘুম থেকে ওঠার সময়: ঘুম থেকে ওঠার সময় নির্দিষ্ট করতে হবে। যে কোনও অভ্যাস তৈরি করতে গেলে সময় মেনে চলা উচিত। সকালে ঘুম থেকে ওঠার পাশাপাশি রাতে পর্যাপ্ত ঘুম জরুরি। ঘুম ঠিক না হলে তার প্রভাব পড়ে হরমোনের ক্ষরণে এবং বিপাকক্রিয়ায়। বিপাকহার কম হলে, হরমোনের ভারসাম্যের অভাব হলে ওজন বৃদ্ধি হতে পারে। তবে বেলা ৯টায় ওঠার অভ্যাস থাকলে শুরুতেই ৬টায় ওঠা কষ্টকর। এ ক্ষেত্রে প্রথম এক সপ্তাহ সাড়ে আটটায় ওঠার অভ্যাস করুন। পরের দু’থেকে তিন সপ্তাহ সাড়ে সাতটায়, তার পর সাতটায়। এ ভাবে অভ্যাস করলে সকালে ঘুম থেকে ওঠার বিষয়টি সহজ হবে।
আরও পড়ুন:
শরীরচর্চা: সকালের শান্ত পরিবেশে হাঁটাহাটি করলে শরীর এবং মন দুই ভাল থাকবে। মেদ ঝরাতে হাঁটাহাঁটি বিশেষ ভাবে সাহায্য করে। হাঁটলে সারা শরীরের ব্যায়াম হয়। জোরে, আস্তে যে ভাবেই হাঁটুন না কেন, তা বিপাকহার বৃদ্ধিতে সাহায্যে করে। হাঁটাহাটি এবং শরীরচর্চায় ক্যালোরি খরচ হয় দ্রুত। ফলে ওজন কমে।
সকালের খাবার: অনেকেই তাড়াহুড়োয় সকালের খাবারটি বাদ দেন। এতে ওজন তো কমবেই না, উল্টে শরীরের ক্ষতি হতে পারে। পুষ্টিবিদেরা বলেন, সকালের খাবারে ফাইবার, প্রোটিন, কার্বোহাইড্রেট, স্বাস্থ্যকর ফ্যাট— সমস্ত খাবারের সঠিক সমন্বয় থাকা প্রয়োজন। সকালের খাবারে কত ক্যালোরি দরকার তা বুঝে খাবার এবং পরিমাণ ঠিক করতে হবে। স্বাস্থ্যকর খাবার খেয়ে পেট ভরা থাকলে সারা দিন অস্বাস্থ্যকর খাবার খেয়ে ফেলার প্রবণতাও কমবে।
প্রাণায়াম, ধ্যান: দিনভর কাজ, অফিস, সংসার, ব্যক্তিগত সমস্যা সামলাতে গিয়ে অনেকেই উদ্বেগে ভোগেন। ক্রমাগত উদ্বেগের ফলে শরীরে কর্টিসল নামে হরমোনের মাত্রা বেড়ে যায়। তার প্রভাব পড়তে পারে বিপাকহারেও। কারও খিদে বেড়ে যায়। অতিরিক্ত খাওয়া, অস্বাস্থ্যকর খাবার খাওয়ার ফলে পেটে মেদ জমার প্রবণতা বৃদ্ধি পায়। উদ্বেগ নিয়ন্ত্রণে রাখতে চাইল প্রাণায়াম এবং ধ্যানের অভ্যাস অত্যন্ত কার্যকর।