অনুত্তমা বন্দ্যোপাধ্যায়। ছবি: সংগৃহীত।
মুখচোরা অনেক মানুষই নিজেদের খারাপ লাগার কথা মুখ ফুটে বলতে পারেন না। ভালবাসার মানুষের থেকে আঘাত পেলে বা কারও কাছে অপমানিত বোধ করলে সেই আত্মগ্লানি থেকে মুক্তি পেতে অনেকেই ভয়ঙ্কর ভাবে নিজেকে আঘাত দিয়ে ফেলেন। এর মধ্যে মৃত্যুভাবনা বা নিজেকে শেষ করে দেওয়ার চিন্তা হয়তো থাকে না। কিন্তু আঘাতের জের এতটাই বেশি হয় যে, কারও কারও ক্ষেত্রে তা সেই পর্যায়ে পৌঁছে যায়। অনেকেই অপরিণত বয়সে এমন কাজ করেন, যার জের বড় বয়স পর্যন্ত বয়ে নিয়ে যেতে হয়। বহু বছর পরেও সেই প্রবণতা বারে বারে ফিরে আসে। সোমবার আনন্দবাজার অনলাইনের ফেসবুক লাইভ এবং ইউটিউব চ্যানেলে আলোচনায় বসলেন মনোবিদ অনুত্তমা বন্দ্যোপাধ্যায়। ‘কী করে বলব? সঙ্গে অনুত্তমা’ শীর্ষক অনুষ্ঠানে এ সপ্তাহের বিষয় ‘নিজের ক্ষতি করি’।
প্রতি পর্বের আগে মনোবিদের কাছে চিঠি পাঠানো যায়। এই পর্বেও অজস্র চিঠি এসেছে। তার মধ্যে অধিকাংশই নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক দর্শক। প্রথম চিঠিতে লেখা রয়েছে, “কোনও কারণে রাগ হলেই মনে হত, নিজের ক্ষতি করি। প্রথমে কম্পাস দিয়ে পা খুঁচিয়ে ফেলেছিলাম। বহু বার ব্লেড দিয়ে হাতও কেটে ফেলেছি। সেই ক্ষত কখনও কখনও খুব গভীরও হয়ে গিয়েছে। তবে মৃত্যুচিন্তা আসেনি কখনও। মনের ব্যথা লাঘব করতে শরীরকে কষ্ট দিয়ে সাময়িক আরাম পেয়েছিলাম বটে। আজ অনেকটা বয়স হয়েছে। জনসমক্ষে বেরোনোর আগে দেহের ক্ষতচিহ্নগুলো ঢেকে রাখতে চেষ্টা করি। কিন্তু নিজেকে আঘাত করার প্রবণতা যে একেবারে চলে গিয়েছে, সে কথা হলফ করে বলতে পারি না।” আরও এক জন লিখেছেন, কয়েক মাস আগে তাঁদের সম্পর্কে দূরত্ব আসে। তার পর থেকেই নিজেকে কষ্ট দেওয়ার এই প্রবণতা তৈরি হয়। কিছু না ভেবেই হাতের উপর ব্লেড চালিয়ে দেন তিনি। মৃত্যুবাসনা থেকে এই কাজ করেননি বলেই লিখেছেন তিনি। তৃতীয় চিঠি লিখেছেন দেবস্মিতা। তাঁর সমস্যা শুরু হয়েছিল স্কুলজীবনে। তিনি লিখেছেন, “আত্মগ্লানি, অপমানিত বোধ করলেই একাধিক বার হাত কেটেছি। ছোট ছিলাম বলে খুব একটা প্রশ্নের মুখে পড়তে হয়নি। কিন্তু এখন তেমন পরিস্থিতি হলে বারান্দা থেকে ঝাঁপ দেওয়ার দৃশ্য দেখতে পাই। মনে হয়, এ ভাবে নিজেকে কষ্ট দিতে পারলেই বোধ হয় মুক্তি। এই আত্মগ্লানি থেকে চিরতরে মুক্তি পাওয়ার আদৌ কি কোনও উপায় আছে?”
অনুত্তমার কথায়, “শরীরের ক্ষতি করার ঠিক আগের মুহূর্তে ওই ব্যক্তির মনের অবস্থা ভীষণ ভাবে নেতিবাচক। কোনও ঘটনা নিয়ে এমন তীব্র আবেগ কাজ করে যে, মুখে বলে তা বোঝানো সম্ভব হয় না। ঠিক সেই সময়েই মনে হয়, কিছু একটা করে ফেলি, যদি এই কষ্ট থেকে মুক্তি পাওয়া যায়। এমন অনেক মানুষের সঙ্গে কাজ করতে গিয়ে তেমনই অভিজ্ঞতা হয়েছে। নিজেকে আঘাত করার এই অভ্যাস হয়তো বা নির্দিষ্ট ওই পরিস্থিতির সঙ্গে যুঝতে শেখার বা মানিয়ে নেওয়ার একটি বিকল্প পদ্ধতি হিসেবে কাজ করে। মন এবং শরীরের সংযোগ রয়েছে এই প্রক্রিয়ায়। নিজেকে আঘাত করা মাত্রই সমস্ত মনোযোগ গিয়ে পর্যবসিত হয় ওই ক্ষতের উপর। যে মুহূর্তে শরীরের ব্যথা বে়ড়ে গেল, ঠিক সেই মুহূর্তে অন্য মানুষের থেকে পাওয়া আঘাত ঢাকা পড়ে গেল। তাতে সাময়িক আরাম মিললেও সেই ব্যথা কিন্তু চিরতরে কমে যায় না। মনোযোগের সরণ ঘটে এ ক্ষেত্রে। মৃত্যুচিন্তা না থাকলেও উল্টো দিকের মানুষটির কাছে ওই ব্যক্তির ভাল না থাকার বার্তা পৌঁছে দেওয়া যাচ্ছে। এই ধরনের আচরণকে চিকিৎসা পরিভাষায় 'নন সুইসাইডাল সেল্ফ ইনজুরি ডিজ়অর্ডার' নামে চিহ্নিত করা হয়েছে।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy