প্রতীকী ছবি।
‘আমি কেন পারছি না!’ মনের কোণে দীর্ঘদিন ধরে জমতে থাকে হতাশার মেঘ। পরিজন-বন্ধুদেরও অনেকে সেই কষ্টের কথা বলতে পারেন না। কেউ আবার বললেও মুক্তির পথ খুঁজে পান না। প্রতিনিয়ত সেই অসহায়তার মধ্যে থাকতে থাকতেই যখন কেউ দেখেন, সতীর্থ বা সমাজের অনেকেই ‘মুক্তির পথ’ হিসেবে এক চূড়ান্ত পরিণতিকে বেছে নিচ্ছেন, তখন তিনিও সেটাকেই একমাত্র পথ বলে ভেবে বসেন।
গত ১২ দিনে তিন জন অভিনেত্রীর অস্বাভাবিক মৃত্যুর ঘটনায় ‘মারাত্মক হতাশা’ই প্রধান কারণ বলে মনে করছেন মনোরোগ চিকিৎসকেরা। তাঁরা এ-ও বলছেন, ‘‘প্রত্যেকের হতাশার কারণ এক নয়। কিন্তু কিছু নিয়ে হতাশা যখন চেপে বসে, তখন অন্য বিষয়েও হতাশা তৈরি হয়। সামগ্রিক হতাশা থেকেই মারাত্মক অবসাদ তৈরি হলে জীবনকে শেষ করে ফেলার সিদ্ধান্ত নেন অনেকে।’’ গ্ল্যামার-সর্বস্ব বিনোদন জগতের অভিনেতা-অভিনেত্রীরা জীবনে বা পেশায় সামান্য ছেদ পড়লেই মানসিক ভাবে ভেঙে পড়েন।
মনোবিদ নীলাঞ্জনা সান্যালের কথায়, ‘‘বিনোদন জগতের লোকজন গ্ল্যামারের মধ্যে থাকেন। অনেকে অল্পেই নাম-খ্যাতি-অর্থ পেয়ে যান। সেই উচ্ছ্বাস-আকাঙ্ক্ষায় টান পড়লে কিছু দিন ধৈর্য ধরলেও এক সময়ে তা আর থাকে না।’’ কিন্তু এক জন অভিনেত্রীকে আত্মহত্যা করতে দেখে সতীর্থেরাও তা করছেন, বিষয়টি এতটা সহজ নয় বলেই জানাচ্ছেন নীলাঞ্জনা। তাঁর দাবি, ‘‘হতাশা তৈরি হল, আর অন্যকে দেখে এক জন আত্মহত্যা করে ফেললেন, ব্যাপারটা তা নয়। যিনি নিজেকে শেষ করে দিচ্ছেন, তাঁর মধ্যে মারাত্মক বিষাদ অবশ্যই ছিল।’’ অভিনয় জগতের অনেকেই অবসাদ থেকে মারাত্মক একাকিত্বে ভোগেন। সম্পর্কের টানাপড়েন তা আরও বাড়িয়ে দেয়, জানাচ্ছেন মনোরোগ চিকিৎসকেরা।
তাঁরা জানাচ্ছেন, অনেকেই মফস্সল থেকে এসে অভিনয় বা মডেলিংয়ে কিছুটা সফল হলে বিলাসবহুল জীবনে অভ্যস্ত হয়ে পড়েন। তবে, উচ্চাকাঙ্ক্ষা থাকলেও বিনোদন জগতে প্রতিষ্ঠা পাওয়ার লড়াই সম্পর্কে তাঁরা ওয়াকিবহাল নন। ‘ইনস্টিটিউট অব সাইকায়াট্রি’র অধিকর্তা অমিত ভট্টাচার্য বলেন, ‘‘এক বার গ্ল্যামার জগতের স্বাদ পেলে পিছিয়ে আসা মুশকিল। একটু পিছিয়ে পড়লেই অবসাদ তৈরি হয়।’’ তিনি জানান, খুব কম বয়সে পরিবার ছেড়ে থাকছেন এই অভিনেত্রী-অভিনেতারা। কষ্ট হলেও পরিজনদের কাছে পাচ্ছেন না। বন্ধুদের বলেও সমস্যা মিটছে না।
করোনার জেরে বিনোদন জগতে যে অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে, সেই কারণেও হতাশা গ্রাস করেছে অনেককে। মনোরোগ চিকিৎসক অনিরুদ্ধ দেবের কথায়, ‘‘অল্প বয়সেই নাম-খ্যাতি পাওয়া এক জন আগে যে ভাবে কাজ করতেন, তা হয়তো এখন পাচ্ছেন না। ফলে হতাশা তৈরি হচ্ছে। গ্রাস করছে একাকিত্ব।’’ কারও অস্বাভাবিক মৃত্যুর পরেই মোবাইলের গ্রুপ ও সোশ্যাল মিডিয়ায় তা নিয়ে লেখালিখি হচ্ছে। হতাশাগ্রস্ত মনে তা আরও বেশি প্রভাব ফেলছে। অনিরুদ্ধের কথায়, ‘‘প্রতিটি মানুষের উদ্বেগ নেওয়ার নির্দিষ্ট মাত্রা রয়েছে। তা পেরিয়েই সামগ্রিক উদ্বেগ মনকে অনেক বেশি ধাক্কা দেয়।’’
আত্মহত্যার প্রবণতা বৃদ্ধির পিছনে করোনা-পরবর্তী আর্থ-সামাজিক পরিস্থিতি দায়ী, বলছেন মনোরোগ চিকিৎসকেরা। মানুষের সঙ্গে মানুষের প্রতিনিয়ত যোগাযোগের খামতি ও কাজের চাপও অবসাদের বড় কারণ বলে মনে করছেন তাঁরা।
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, Twitter এবং Instagram পেজ।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy