কানেই লুকিয়ে মশাদের ‘প্রাণ ভোমর’। ছবি : সংগৃহীত।
মশা সব করে রব! কানের কাছে সেই নিরন্তর ‘পিনপিনে’ শব্দ আপনার যতই ‘অসহ্য’ আর ‘বিরক্তিকর’ মনে হোক, স্ত্রী মশাদের ওই শব্দ পুরুষ মশাদের কানে মধুর ধ্বনি হয়ে প্রবেশ করে। তারা তখন অন্ধের মতো সেই ধ্বনির টানে ছুটে যায়। উদ্গত হয়ে মিলিত হয় কাঙ্ক্ষিত স্ত্রী মশাটির সঙ্গে। তৈরি হয় মশাদের সন্তান-সন্ততি। বিস্তার হয় মশককূলের। মশাদের বংশবৃদ্ধির ওই গূঢ়তত্ত্ব সম্প্রতি জানতে পেরেছেন ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকেরা। আর সেই তত্ত্বের ভিত্তিতেই মশাবাহিত রোগ নিয়ন্ত্রণের একটি সম্ভাব্য নিদানও বার করেছেন তাঁরা। গবেষকেরা জানিয়েছেন, কাজটা খুবই ‘সহজ’। চাপড় দিয়ে মশা মেরে রক্তারক্তি কাণ্ড ঘটানোর কোনও দরকার নেই। শুধু পুরুষ মশাদের ‘বধির’ করে দিতে পারলেই সমাধান হবে যাবতীয় সমস্যার।
ক্যালিফোর্নিয়ার গবেষকদের বক্তব্য, তাঁরা পরীক্ষা করে এর প্রমাণ পেয়েছেন। পরীক্ষায় পুরুষ মশাদের জিনগত পরিবর্তন ঘটিয়ে তাদের শ্রবণক্ষমতা কমিয়ে দেওয়া হয়েছিল। দেখা গিয়েছে, তার পরে পুরুষ এবং স্ত্রী মশাকে একসঙ্গে আবদ্ধ জায়গায় রাখার পরেও তারা পরস্পরের সঙ্গে মিলিত হয়নি। গড়ে একটি পুরুষ এবং স্ত্রী মশা কাছাকাছি আসার ২০ সেকেন্ডের মধ্যেই মিলিত হয়। যদি কোনও কারণে তা না-ও হয়, সে ক্ষেত্রে কাছাকাছি থাকা পুরুষ এবং স্ত্রী মশা সন্তান উৎপাদন প্রক্রিয়ায় এক মিনিটের বেশি দেরি করে না। কিন্তু গবেষকেরা দেখেছেন, শ্রবণ ক্ষমতা কমিয়ে দেওয়ার পরে স্ত্রী মশাদের সঙ্গে আবদ্ধ রাখার পরেও এডিস পুরুষ মশারা মিলনে বিন্দুমাত্র আগ্রহ দেখায়নি। যা তাদের স্বভাববিরুদ্ধ।
কিন্তু মশাদের শ্রবণশক্তি কমানো কি সহজ? মশাদের ‘বধির’ করা হবে কী ভাবে? গবেষকেরা বলছেন, ‘‘মশাদের শুনতে সাহায্য করে টিআরপিভিএ নামের এক ধরনের প্রোটিন। সাধারণত পুরুষ এবং স্ত্রী— দু’ধরনের মশারই ডানা নাড়ানোর সময়ে শব্দ হয়। স্ত্রী মশার সেই ডানা নাড়ার শব্দেই মিলনেচ্ছু হয়ে ওঠে পুরুষ মশা। কিন্তু পুরুষ মশাদের ওই প্রোটিন অকেজো করে দেওয়ার পরে দেখা গিয়েছে, তারা স্ত্রী মশাদের ডানা নাড়ার শব্দে আকৃষ্ট হচ্ছে না।’’ শুধু তা-ই নয়, গবেষকেরা জানিয়েছেন, শ্রবণশক্তি কমানো মশাদের পরীক্ষা করে দেখা গিয়েছে, তারা ৪০০ হার্ৎজ় পর্যন্ত উঁচু শব্দতরঙ্গে কোনও প্রতিক্রিয়া দিচ্ছে না।
গবেষকদের দাবি, ডেঙ্গি, জ়াইকা, বা পিলের জ্বরের (ইয়েলো ফিভার) কারণ হল মশা। প্রতি বছর পৃথিবীতে ৪০ কোটি মানুষ আক্রান্ত হন ওই সমস্ত মশাবাহিত রোগে। কিন্তু মশা যদি বংশবিস্তারই না করতে পারে, তা হলে মশাবাহিত রোগ ছড়ানোরও সম্ভাবনাও কমবে। কমবে ডেঙ্গির মতো মারণ রোগের প্রকোপ। ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকেরা জানাচ্ছেন, পুরুষ মশাদের ‘বধির’ করার এই গবেষণা মশাবাহিত রোগের প্রকোপ যেখানে বেশি, সেখানে এই পদ্ধতি কাজে লাগিয়ে পরীক্ষা করার কথা ভাবছেন তাঁরা।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy