বারে বারে পাতলা জলের মতো মলত্যাগ করায় শরীরে জল, সোডিয়াম, পটাশিয়াম ও ম্যাগনেশিয়াম কমে যায়। ঝিমুনি লাগে। ছবি: সংগৃহীত
কখনও ঝিরঝিরে বৃষ্টি কখনও চড়া রোদ্দুর। বেশির ভাগ সময়ে ভ্যাপসা গরম। এই বর্ষার মধ্যেই ছোট থেকে বড়, সকলেরই পেটের সমস্যা হচ্ছে। শুরুতে খিদে কমে যাওয়া, বদহজম, তার পরই পেটখারাপ। বার বার বাথরুম দৌড়াতে হচ্ছে। অনেকের বমি বমি ভাব, কারও বা বারে বারে বমি। পেটের সমস্যায় জর্জরিত অনেকেই।
এ রকম উপসর্গ হলে শরীরে জলশূন্যতা ও খনিজে অভাব হওয়ার ঝুঁকি বেড়ে যায়, বলে জানালেন ইন্টারনাল মেডিসিন ও ক্রিটিক্যাল কেয়ারের চিকিৎসক সৌতিক পাণ্ডা। মূলত দূষিত খাবার ও জল থেকে পেটের গোলমাল হয়। আপাত দৃষ্টিতে পরিষ্কার লাগলেও বাইরের খাবার, বিশেষ করে কেটে রাখা ফল, লস্যি, ফলের রস, কেক, বার বার গরম করা প্যাটিস— এই ধরনের খাবার থেকেই জীবাণু ছড়ায়।
মাথায় রাখতে হবে—
১। মূলত দুই ধরনের জীবাণু সংক্রমণের কারণে ডায়রিয়া হয়, ভাইরাল ডায়রিয়া ও ব্যাক্টেরিয়াল ডায়রিয়া।
২। ইদানীং কোভিড সংক্রমণও বেড়েছে। কোভিডের উপসর্গ হিসেবে অনেক সময় সর্দি-জ্বর বাদ দিয়ে শুধুমাত্র পেটখারাপ হতে পারে। চিকিৎসকের মতে, রোটা ভাইরাস বা সালমোনেলা ব্যাক্টেরিয়ার সংক্রমণ ছাড়াও বর্ষাকালে জিয়ার্ডিয়াসিস, অ্যামোবাইসিস, কৃমি ইত্যাদির কারণে পেটখারাপ বেশি হয়। বিশেষত, বাচ্চাদের মধ্যে কৃমি ও রোটা ভাইরাসের সংক্রমণের ঘটনা বেশি দেখা যায়।
৩। জীবাণু সংক্রমণের কারণে পেটের সমস্যা হলে বারে বারে মলত্যাগ, পেটে ব্যথা, বমি বা বমি ভাব দেখা যায়। অনেকের জ্বর হয়।
৪। বারে বারে পাতলা জলের মতো মলত্যাগ করায় শরীরে জল, সোডিয়াম, পটাশিয়াম ও ম্যাগনেশিয়াম কমে যায়। ঝিমুনি লাগে।
৫। শুধু ডায়রিয়া হলেই নয়, জ্বর হলেও শরীরে জলের অভাব হয়।
কী করণীয়
১। জলের অভাব মেটাতে বারে বারে জল, ওআরএস-সহ তরল খাবার খেতে হবে। যেমন পাতলা লিকার চা, লেবুর শরবত, মুসুর ডালের স্যুপ, চিকেন স্যুপ জাতীয় খাবার খেলে ভাল।
২। বমি আর ডায়রিয়া একসঙ্গে হলে রোগী খাবার খেতে পারে না। এ ক্ষেত্রে বমির ওষুধ দিয়ে বারে বারে অল্প অল্প করে জল এবং ওআরএস খাওয়াতে হবে।
৩। বমি সামাল না দেওয়া গেলে রোগীর শরীর ক্রমশ জলশূন্য হয়ে অ্যাকিউট কিডনি ইঞ্জ্যুরি হওয়ার ঝুঁকি বেড়ে যায়। আপাতদৃষ্টিতে সাধারণ ডায়রিয়া সামলানো না গেলে কিডনি ইঞ্জ্যুরি হলে সাময়িক ভাবে ডায়ালিসিস করতে হতে পারে। এ ক্ষেত্রে রোগীকে হাসপাতালে ভর্তি করে স্যালাইন ও ওষুধ দিয়ে সুস্থ করে তোলা হয়।
৪। ডায়াবিটিস, উচ্চ রক্তচাপ বা হার্টের অসুখের রোগীদের পেটের গোলমাল ও বমি হলে বিশেষ যত্ন নিতে হবে। ওষুধ দিয়ে বমি বন্ধ করার চেষ্টা করতে হবে। সঙ্গে সঙ্গে কাছাকাছি কোনও চিকিৎসকের কাছে নিয়ে গিয়ে প্রয়োজনীয় চিকিৎসা শুরু করা দরকার।
৫। বাচ্চাদের ডায়রিয়ার জন্যে ইদানীং জিঙ্ক ট্যাবলেট দেওয়া হয়। তবে তা অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে।
৬। পেটের সমস্যা হলে দুধ খাওয়া চলবে না। রুটিও না খেলেই ভাল হয়। সবচেয়ে ভাল হয় চাল-ডাল দিয়ে পাতলা খিচুড়ি খেলে। মাছের ঝোল-ভাত, স্ট্যু, ডিম সেদ্ধ, অল্প মশলা দিয়ে রান্না করা চিকেন সবই খাওয়া যায়। তবে বাড়ির রান্না করা খাবার খাওয়াই ভাল।
সতর্ক হবেন কী করে
১। বর্ষায় পেটের সমস্যা প্রতিরোধে বাইরের খাবার খাওয়া মানা।
২। খাওয়ার আগে হাত সাবান দিতে ধুতে হবে।
৩। আইসক্রিম থেকে জীবাণু সংক্রমণের সম্ভাবনা থাকে। তাই আইসক্রিম খাওয়ার আগে এক্সপায়ারি ডেট দেখে নিলে ভাল।
৪। বাইরে ফলের রস খাওয়া চলবে না।
৫। বাচ্চাদের রোটা ভাইরাস, হাম ও মাম্পসের টিকা দিয়ে নিতে হবে। বাচ্চা-বড় নির্বিশেষে টাইফয়েড ও হেপাটাইটিস এ-র টিকা নেওয়া জরুরি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy