পানীয় জলের সঙ্গে ফ্লোরাইড শরীরে গেলে কী ক্ষতি হতে পারে? ফাইল চিত্র।
এক আর্সেনিকে রক্ষা নেই, ফ্লোরাইড দোসর। ভূগর্ভস্থ জলে ফ্লোরাইডের মাত্রা বেড়ে চলেছে বলে দাবি করেছেন আমেরিকার গবেষকেরা। দাবি, পানীয় জলের মাধ্যমে যদি নির্ধারিত মাত্রার অতিরিক্ত ফ্লোরাইড শিশুদের শরীরে ঢোকে, তা হলে তা সরাসরি প্রভাব ফেলতে পারে মস্তিষ্কে। বুদ্ধির বিকাশ থমকে যেতে পারে শিশুদের। আমেরিকান মেডিক্যাল অ্যাসোসিয়েশন থেকে প্রকাশিত ‘জামা’ জার্নালে এই গবেষণার খবর ছাপা হয়েছে।
ভূগর্ভ থেকে দিনের পর দিন যথেচ্ছ জল তুলে নেওয়ায় আর্সেনিক-দূষণ ইতিমধ্যেই মাত্রা ছড়িয়েছে। সেই সঙ্গেই ভূগর্ভের জলে যুক্ত হয়েছে ফ্লোরাইডের দূষণ। ভারত, চিন, কানাডা, ডেনমার্ক, ইরান, মেক্সিকো, নিউ জ়িল্যান্ড, পাকিস্তান, তাইওয়ান, স্পেনের মতো দেশে পানীয় জলেও ফ্লোরাইডের মাত্রা বাড়ছে বলে দাবি করেছে আমেরিকার ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অফ হেল্থ। আমেরিকার সরকারের ‘ন্যাশনাল টক্সিসিটি প্রোগ্রাম’ (এনটিপি)-এ ভারত-সহ ৯টি দেশের উপর সমীক্ষা চালানো হয়েছে। গবেষকেরা দাবি করেছেন, এই সব দেশে পানীয় জলে ফ্লোরাইডের মাত্রা সহনসীমা ছাড়িয়ে গিয়েছে। এক লিটার পানীয় জলে এক মিলিগ্রাম ফ্লোরাইড থাকলে তা স্বাভাবিক বলে ধরা হয়ে থাকে। ফ্লোরাইডের ক্ষেত্রে এটাকেই সহনমাত্রা হিসেবে দেখানো হয়। কিন্তু সমীক্ষায় দেখা গিয়েছে, এক লিটার পানীয় জলে ফ্লোরাইডের মাত্রা ১ মিলিগ্রামের অনেক বেশি। কোথাও কোথাও তা ৬-৭ গুণ বেশি।
এই ফ্লোরাইড আসলে কী?
বিভিন্ন ধরনের খনিজের মধ্যে মিশে থাকা একটি রাসায়নিক হল এই ফ্লোরাইড। ভূগর্ভস্থ জলে নানা খনিজের সঙ্গে এটিও থাকে। তবে তা অধিক পরিমাণে মানুষের শরীরে ঢুকলে নানা ধরনের ব্যাধি ছেঁকে ধরে। তা থেকে সরাসরি মৃত্যু না-হলেও ক্ষতিগ্রস্ত হয় হাড়, দাঁত, কিডনি, লিভার। পঙ্গুত্বও দেখা দিতে পারে। অন্তঃসত্ত্বাদের ক্ষেত্রে ফ্লোরাইড শরীরে ঢুকলে গর্ভস্থ সন্তানের ক্ষতি হয়।
সমীক্ষা বলছে, এক লিটার জলে ফ্লোরাইডের মাত্রা ১ মিলিগ্রাম ছাড়িয়ে গেলে ‘আইকিউ’ বা বুদ্ধ্যঙ্ক ১.৬৩ পয়েন্ট কমে যেতে পারে। আবার তা যদি দেড় মিলিগ্রাম ছাড়িয়ে যায়, তা হলে বু্দ্ধ্যঙ্ক ৫ পয়েন্ট অবধিও নেমে যেতে পারে। শরীরে ফ্লোরাইডের মাত্রা বাড়লে ফ্লুরোসিস নামক রোগ হয়। জন্ম থেকে কোনও শিশু গ্রহণযোগ্য মাত্রার চেয়ে বেশি পরিমাণে ফ্লোরাইড যুক্ত পানীয় জল খেলে তার দাঁতের এনামেল নষ্ট হতে শুরু করবে। এর পর বিকৃতি হতে পারে মেরুদণ্ডের। যার বড় প্রভাব পড়তে পারে স্নায়ুতন্ত্রের উপরেও।
২০২২ সালে ভারত সরকারের একটি সমীক্ষায় দাবি করা হয়েছিল, দেশের ২৩টি রাজ্যের ৩৭০টি জেলায় জলে ফ্লোরাইডের দূষণ সর্বাধিক। জল ফ্লোরাইড-মুক্ত করতে গেলে যে সব প্রযুক্তি দরকার, তার প্রয়োগও হচ্ছে বলে দাবি করা হয়। গবেষকেরা জানাচ্ছেন, ফ্লোরাইড দূষণ রুখতে গেলে শুধু যন্ত্রপাতি বসালেই হবে না, তার প্রয়োগ ঠিকমতো হচ্ছে কি না সে বিষয়ে নজরদারিও জরুরি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy