Advertisement
২২ নভেম্বর ২০২৪
Hygiene

ছোট থেকেই সচেতনতা জরুরি

সচেতনতা দিয়ে এড়ানো যেতে পারে ইউটিআই-এর মতো একাধিক রোগ। ছোটরা যদি যথাযথ ভাবে টয়লেট ব্যবহার না করে, তা হলে এই রোগের শিকার হবে তারাও।

ঊর্মি নাথ 
কলকাতা শেষ আপডেট: ১১ মার্চ ২০২৩ ০৮:২৭
Share: Save:

ছোটদের বড় হওয়ার পথে তাদের অভিভাবক ও শিক্ষকেরা যে পাঠ পড়ান, তাই হয়ে ওঠে গোটা জীবনের পাথেয়। লেখাপড়া, গান, আঁকা ইত্যাদির পাশাপাশি হাঁটাচলা, কথা বলা, নানা সহবত শেখানো হয় শৈশবে। এত কিছুর মধ্যে অনেক সময়েই যথাযথ ভাবে হয় না টয়লেট ট্রেনিং বা শৌচাগার ব্যবহারের শিক্ষা। এই বিষয়টি নিয়ে অজ্ঞতা, উদাসীনতা আমাদের সমাজে যথেষ্ট। শৌচাগারে গিয়ে নিজেকে পরিষ্কার ও জীবাণুমুক্ত করার পাশাপাশি কী ভাবে তা পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে তা শেখাও জরুরি। অপরিচ্ছন্ন বাথরুম নানা রোগের আঁতুড়ঘর।

সাধারণত গণ শৌচাগার ব্যবহারের প্রথম অভিজ্ঞতা হয় স্কুলে। সরকারি, বেসরকারি প্রায় সব স্কুলেই ওয়াশরুমের সংখ্যা ছাত্রছাত্রীদের প্রয়োজনের তুলনায় কম। ঠিক ভাবে তা ব্যবহার না করায় দ্রুত নোংরা হয়ে ব্যবহারের অযোগ্য হয়ে যায়। তাই স্বাস্থ্যের কারণেই টয়লেট ট্রেনিং বা শৌচাগার ব্যবহারের পাঠ জরুরি। একদম ছোট থেকেই অভিভাবকদের এই ব্যাপারে সচেতন করতে হবে সন্তানদের।

গণ শৌচাগার মানেই কি সংক্রামিত হওয়ার শঙ্কা?

গণ শৌচাগার ব্যবহারে অনেকেরই ভীতি থাকে। অনেকের ধারণা এর থেকে নানা ধরনের অসুখ হয়, বিশেষ করে ইউরিনারি ট্র্যাক্ট ইনফেকশন (ইউটিআই)। এ ব্যাপারে গাইনিকলজিস্ট ডা. অভিনিবেশ চট্টোপাধ্যায় বললেন, ‘‘এটা সত্যি যে পাবলিক টয়লেট স্ট্যাফিলোকক্কি, ই কোলাই, স্ট্রেপটোক্কসির আঁতুড়ঘর। কিন্তু গণ শৌচাগার ব্যবহার করলেই যে ইউটিআই হবে, তা নয়। এটা নিয়ে প্যানিক করার আগে বলি, টয়লেট যদি পরিষ্কার থাকে এবং পেরিনিয়াল হাইজিন মেনে চলা হয় তা হলে কোনও সমস্যা নেই। কিন্তু টয়লেট নোংরা হলে যেমন, কমোডের সিট কভারে যদি অন্যের ইউরিন পড়ে থাকে আর সেটা না দেখে অন্য জন বসে পড়ে, সেখান থেকে ব্যাকটিরিয়ার আক্রমণ হতে পারে। তখন ইউটিআই, ফাঙ্গাল ডিজ়িজ় বা চুলকানির সমস্যা হতে পারে। তাই পাবলিক টয়লেটে ‘টয়লেট সিট স্যানিটাইজ়ার’ স্প্রে করে নিলে ঝুঁকি অনেকটা কম থাকে।’’ এ সবের পাশাপাশি জোর দিতে হবে পেরিনিয়াল হাইজিনে। রোজ স্নানের সময়ে মেডিকেটেড ইন্টিমেট ওয়াশ ব্যবহার করলে আরও পরিচ্ছন্ন থাকা যায়। নিয়মিত অন্তর্বাস বদলাতে হবে। গণ শৌচাগার এড়াতে অনেকেই প্রস্রাব চেপে রাখেন। স্কুলের অপরিষ্কার শৌচাগার এড়াতে ছোটদের মধ্যে এই প্রবণতা যথেষ্ট। ‘‘এটা স্বাস্থ্যের পক্ষে সাংঘাতিক ক্ষতিকর। আমার কাছে বহু রোগী আসেন, যাঁরা দীর্ঘ দিন প্রস্রাব চেপে রাখা থেকে কঠিন সমস্যা বাধিয়ে ফেলেছেন, বিশেষ করে মহিলারা। ব্যাকটিরিয়া সব সময়ে যোনিতে থাকে। মহিলাদের মূত্রনালির দৈর্ঘ্য মাত্র চার সেন্টিমিটার। তাই প্রস্রাব চেপে রাখলে ব্লাডার নেকের ফানেলিংয়ের জন্য মূত্রনালী আরও ছোট হয়ে যায়, তাতে ব্যাকটিরিয়া যোনি থেকে উপরের দিকে উঠতে থাকে। এতে ইউটিআই হওয়ার সম্ভবনা বাড়ে। অনেকে আবার পাবলিক টয়লেটে যাবেন না বলে জল কম খান। এতে কিডনি ঠিকমতো ফ্লাশ হয় না, ফলে ইউটিআই হওয়ার প্রবণতা বাড়ে, স্টোন হওয়ার ঝুঁকি বাড়ে, ব্লাডারে সমস্যা হয়। তাই ছোট থেকে জোর দিতে হবে টয়লেট হাইজিন, টয়লেট ট্রেনিং আর পেরিনিয়াল হাইজিনের উপর,’’ বললেন ডা. চট্টোপাধ্যায়।

ঘনঘন সাফাইকর্মী দিয়ে শৌচাগার পরিষ্কার করার পরিকাঠামো অধিকাংশ স্কুলে নেই। তাই নিজেকেই সচেতন হতে হবে। বহু ছাত্রছাত্রীকে অভিভাবকেরা বলেন স্কুলের শৌচাগারে ছোঁয়া বাঁচিয়ে চলার কথা। ফলে কোনও মতে নিজের কাজটি সেরে সে বেরিয়ে আসে, শৌচাগার ব্যবহারের পরে কল, মগ ধরতে চায় না বা ফ্লাশ করে না। এতে শৌচাগার ক্রমশ অপরিষ্কার হতে থাকে। এটা সে ভাবে না যে, শৌচাগার অপরিষ্কার থাকলে তার সহপাঠীর সমস্যা তো হবেই, কিছুক্ষণ পরে সে যখন আবার ব্যবহার করতে আসবে তখন সেও সংক্রামিত হতে পারে।

ছোট থেকেই যা শেখাতে হবে

শৌচাগারে যাওয়ার আগে পকেটে থাকুক টিসু পেপার। কমোডে বসার আগে সিটকভার টিসু পেপার দিয়ে মুছে বসতে হবে। পরিষ্কার থাকলেও টয়লেট সিট স্যানিটাইজ়ার স্প্রে করে বসা ভাল। ইন্ডিয়ান ল্যাটরিন হলে বসার আগে মগে করে জল ঢেলে নেওয়া বা ফ্লাশ করে নেওয়া উচিত। এক্ষেত্রেও পাদানিতে সিট স্যানিটাইজ়ার স্প্রে করে নিলে অনেকটাই নিশ্চিন্ত থাকা যায়।

শৌচাগার ব্যবহার করার পর অবশ্যই ফ্লাশ করতে হবে। ফ্লাশের ব্যবস্থা না থাকলে বালতি বা মগে করে জল ঢেলে দিতে হবে।

টয়লেট ব্যবহারের পরে হাত সাবান দিয়ে ধুতে হবে। স্কুলে সাবানের ব্যবস্থা না থাকলে পকেটে থাকুক সোপ পেপার। ফ্লাশ ক্লিপআর্ট, কল, মগের হাতল, দরজায় প্রচুর হাতের ছোঁয়া পড়ে, তাই টয়লেট থেকে বেরিয়ে হাত স্যানিটাইজ়ার দিয়ে বা সাবান দিয়ে পরিষ্কার করে নিলে নিশ্চিন্ত থাকা যায়।

যেখানে সেখানে টিসু পেপার ও ব্যবহৃত স্যানিটারি প্যাড ফেলা নয়। তা ডাস্টবিনে ফেলতে হবে। ব্যবহৃত প্যাড প্যানে ফ্লাশ না করে কাগজ বা প্যাকেটে মুড়িয়ে বিনে ফেলতে হবে। এখন অনেকেই বারবার প্যাড বদল এড়াতে মেনস্ট্রুয়াল কাপ ব্যবহার করেন। ‘‘পিরিয়ডসের সময়ে সংক্রামিত হওয়ার ভয় বেশি। মেনস্ট্রুয়াল কাপে ব্লাড আটকে থাকছে, বেরিয়ে যেতে পারছে না। ব্লাড ব্যাকটিরিয়াকে মাথা চাড়া দিয়ে উঠতে সাহায্য করে। মেনস্ট্রুয়াল কাপ ব্যবহার ইনফেকশনের ভয় বাড়িয়ে দেয়। ব্লিডিং ভাল করে হওয়া জরুরি। তাই স্যানিটারি প্যাডই ব্যবহার করা ভাল। তবে প্যাড নিয়ম করে বদলাতে হবে,’’ বললেন ডা. চট্টোপাধ্যায়।

ছোটদের বোঝাতে হবে তারা যে ভাবে বাড়ির শৌচাগার ব্যবহার করে, ঠিক সেই মানসিকতা নিয়ে বাইরের শৌচাগার ব্যবহার করতে হবে। এই ভাবে প্রত্যেকে সচেতন থাকলে অনেক সংক্রামক রোগের ঝুঁকি এড়ানো যাবে।

অন্য বিষয়গুলি:

Hygiene
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy