প্রতীকী ছবি।
করোনা সংক্রমণ হলে সাধারণ ভাবে চিকিৎসকরা বেশি করে জল খেতে বলছেন। এমনিতেও খালি পেটে জল আর ভরা পেটে ফল খাওয়ার কথা শোনা যায় সাধারণের মধ্যে। অনেকেই এই উপদেশ দিয়ে থাকেন। কিন্তু কলকাতার বিশিষ্ট পুষ্টিবিদ মৃণালকান্ত বিশ্বাস মনে করেন, সাধারণ এই ধারণা একেবারে ভুল না হলেও পুরোপুরি ঠিক নয়। কারণ, প্রতিটি মানুষের শরীরের গঠন অনুযায়ী নির্ভর করে তিনি কতটা জল খাবেন বা কোন ফল কখন খাবেন। সব ফল যেমন খালি পেটে খেতে নেই, তেমন ভরা পেট মানেই যে কোনও ফল খাওয়া ঠিক নয়। তাঁর দাবি বরং, মানুষের শরীরের মধ্যেই প্রাকৃতিক ভাবে যে প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা রয়েছে তার উন্নতি দরকার। সে জন্য চাই সঠিক জীবনযাপন এবং নিয়মমাফিক খাওয়াদাওয়া।
ওয়েলনেস কনসালট্যান্ট হিসেবে দীর্ঘ দিন কাজ করা মৃণালকান্তি অবশ্য মনে করেন সুস্থ থাকার জন্য জল, ফল-সহ নানা প্রয়োজনীয় খাবারই সকলের জন্য যথেষ্ট। ভাল থাকার জন্য, সুস্থ থাকার জন্য শুধু ওষুধের উপরে নির্ভর করা বাধ্যতামূলক নয়। মৃণালের পরামর্শে চলা বছর ৬০ বছরের পল্লব বসুর বক্তব্য, ‘‘আমি নানা রকম সমস্যা নিয়ে অনেক ভোগার পরে মৃণালবাবুর কাছে আসি। উনি আমায় ওষুধ ছাড়া সুস্থ থাকতে শিখিয়েছেন। হিসেব করে দেখেছি, ডাক্তার, ওষুধে যে পরিমাণ টাকা লাগে তার চেয়ে কম খরচে ভাল ভাল খেয়ে সুস্থ থাকা যায়।’’
নিজের নিরাময় পদ্ধতি নিয়ে কী বলছেন মৃণলাকান্তি? প্রথমত তিনি তাঁর কাছে আসা কাউকে রোগী বলেই মনে করেন না। আবার তিনি চিকিৎসা করেন না বলেও দাবি। মৃণালকান্তির বক্তব্য, ‘‘সুস্থ ভাবে অনেক দিন বেঁচে থাকা খুব সহজ। কঠিন হল, আতঙ্ক নিয়ে বেঁচে থাকা। এই আতঙ্ক আবার আমাদেরই তৈরি করা। কেউ রোগী নন। আর আমি চিকিৎসা না করে পরামর্শ দিই। তাতেই যে কাজ হয় তা অনেকেই স্বীকার করবেন।’’ তিনি বেশ অনুযোগের সুরেই বলেন, ‘‘করোনা পরিস্থিতিতে মানুষ আতঙ্কে রয়েছেন। অনেক ক্ষেত্রে মানুষকে আতঙ্কে রাখা হয়েছে। আজকের এই সময়ে আমরা শুধু আমাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা নিয়ে আলোচনা করে যাচ্ছি। আর তার জন্যই টিকা, বুস্টার টিকা নিয়ে এত আলোচনা। কিন্তু আমরা ভুলে যাচ্ছি যে শুধু রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়িয়েই মানুষকে ভাল ভাবে বাঁচিয়ে রাখা যাবে না। আমাদের আরও চারটি বিষয়ের কথাও মাথায় রাখতে হবে। যেগুলোর প্রায় কোনও আলোচনাই হয় না। অথচ সেগুলো আমাদের সুস্থ ভাবে বেঁচে থাকতে সাহায্য করে।’’
তাঁর বক্তব্যের ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে মৃণালকান্তি জানান, আমাদের শরীরে ৬০ হাজার মাইল রক্তনালী রয়েছে। যে পদ্ধতিতে এগুলি তৈরি হয় তাকেই বলা হয় অ্যাঞ্জিওজেনেসিস (Angiogenesis)। আর এর ভারসাম্য বজায় রাখা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আমাদের অনেক রোগ মুক্তির জন্য সেটা কার্যকর। এ ছাড়াও প্রায় সাড়ে সাত লক্ষ সস্য কোষ (Stem Cells) মানুষের শরীরের বিভিন্ন জায়গায় ছড়িয়ে থাকে। এগুলি শরীরের রক্ষণাবেক্ষণ, ক্ষত মেরামতি এবং নতুন করে কোনও কিছুর গঠনের জন্য কার্যকর। সারা জীবন ধরে সস্য কোষ কাজ করে। তাই এগুলি খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
এ ছাড়াও আমাদের শরীরে থাকা প্রায় ৯৯৯ লক্ষ মাইক্রোবায়োমিনের মধ্যে বেশির ভাগ ব্যাকটেরিয়া আমাদের সাস্থ্যকে শুধু রক্ষা করতে সাহায্য করে তা-ই নয়, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকেও নিয়ন্ত্রণ করে, অ্যাঞ্জিওজেনেসিস পদ্ধতিকেও প্রভাবিত করে।
মৃণালকান্তির কথায় এর সঙ্গে রয়েছে ডিএনএ। জেনেটিক ব্লুপ্রিন্ট শরীরের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাকেও মজবুত করে। বিভিন্ন ক্ষতিকারক দিক থেকে রক্ষা করে।
মৃণালকান্তির বক্তব্য, ‘‘দুর্ভাগ্যজনক ভাবে আমাদের কিছু অনিয়মিত জীবনযাপন, অসম খাবার এবং অতিমারি নিয়ে আতঙ্ক মানুষের শরীরের সব প্রাকৃতিক ব্যবস্থাকে অকেজো করে ফেলছে। তাই অনেক মানুষই আজ বেঁচেও মরে রয়েছেন। আমাদের জীবনে কোনও আনন্দ নেই। শুধু আতঙ্ক আর ভয়। এখন দরকার আতঙ্ক ভুলে জীবনযাপনে কিছুটা পরিবর্তন আনা। সেটা করলেই ওষুধের উপরে নির্ভরতা কমবে। মন ও স্বাস্থ্য একসঙ্গে সুন্দর ও সুস্থ থাকবে। চিকিৎসার অঙ্গ হিসেবে মানুষের মানসিক অবস্থান ও আবেগের গুরুত্বও দিতে হবে। তবেই ভাল ফল মিলবে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy