ডিম্বাণু সংরক্ষণ পদ্ধতির মাধ্যমে মাতৃত্বের স্বাদ খুঁজে নিচ্ছেন অনেকেই। প্রতীকী ছবি।
গত বছর জানুয়ারি মাসে মা হন অভিনেত্রী প্রিয়ঙ্কা চোপড়া। সারোগেসির মাধ্যমে জন্ম হয় তাঁর ও স্বামী নিক জোনাসের মেয়ে মালতী মেরি চোপড়া জোনাসের। মেয়ের বয়স এক বছর হওয়ার পর তিনি জানান, সন্তান জন্মের প্রক্রিয়া বহু আগেই শুরু করে দিয়েছিলেন। ৩০ বছর বয়সেই মায়ের পরামর্শে ডিম্বাণু সংরক্ষণ করে রেখেছিলেন প্রিয়ঙ্কা।
মা হতে চান, তবে এখনই নয়। ভবিষ্যতের কথা ভেবে ডিম্বাণু সংরক্ষণ করে রাখছেন, এই সংখ্যাটা ক্রমশ বাড়ছে। তালিকায় তারকারা তো আছেনই, পিছিয়ে নেই সাধারণ মানুষও। পেশাগত কারণে অনেকেই ব্যস্ত। ব্যক্তিগত জীবনে সময় দেওয়ার ফুরসতটুকু নেই। কিংবা মা হতে চান না এখনই। তা বলে কখনওই মা হবেন না, এমন নয়। সেই ভাবনা থেকেই কম বয়সে ডিম্বাণু সংরক্ষণের সিদ্ধান্ত। আসলে বয়সের সঙ্গে সঙ্গে শারীরিক নানা পরিবর্তনের মধ্যে দিয়ে যান মেয়েরা। মা হওয়ার নানা জটিলতাও তৈরি হয় অনেক ক্ষেত্রে। অল্প বয়সে সংরক্ষিত ডিম্বাণু বেশি বয়সে মা হওয়ার ক্ষেত্রে কার্যকর। তা থেকে সন্তানধারণের সম্ভাবনাও অনেক বেশি। সে কারণে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে ডিম্বাণু সংরক্ষণের পদ্ধতি।
এ প্রসঙ্গে সন্তানধারণ সহায়ক এবং আইভিএফ চিকিৎসক অরিন্দম রথ বলেন, ‘‘আমি প্রথম আইভিএফ করেছিলাম বছর সাতেক আগে। তখন খুব কম মানুষ বিষয়টি সম্পর্কে জানতেন। তার পর অনেকটা সময় পেরিয়ে গিয়েছে। ইদানীং ডিম্বাণু সংরক্ষণ বিষয়টি নিয়ে অনেকেই ওয়াকিবহাল। শুধু শহর নয়, মফস্সল থেকেও মহিলারা আসছেন। যাঁরা আসেন, প্রত্যেকেই পড়াশোনা, কর্মক্ষেত্র, উচ্চশিক্ষা নিয়ে ব্যস্ত। এখনই বিয়ে করার কোনও পরিকল্পনা নেই। কিন্তু দেরিতে হলেও মা হতে চান। তবে বয়স বাড়তে থাকলে ডিম্বাণুর সংখ্যা এবং মান কমতে থাকে। তাই বেশি বয়সে মা হওয়ার পরিকল্পনা করলে সন্তানধারণে সমস্যা হয়। ২৫ থেকে ৩৫ ডিম্বাণু সংরক্ষণের সবচেয়ে আদর্শ সময়। তার পর আর সংরক্ষণ করে তেমন কোনও লাভ হয় না। ডিম্বাণুর মান ভাল থাকতে থাকতে যদি সংরক্ষণ করা যায়, তা হলে পরে কৃত্রিম উপায়ে তা নিষেক করে সৃষ্ট ভ্রূণ গর্ভে স্থাপন করে আইভিএফ পদ্ধতিতে অন্তঃসত্ত্বা হওয়া সম্ভব। তাই ২৫-এর পর ডিম্বাণু সংরক্ষণ করে রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়া যেতে পারে।’’
কেমো থেরাপি চলছে কিংবা অন্য কোনও শারীরিক অসুস্থতা রয়েছে যাঁদের, তেমন অনেকেই ডিম্বাণু সংরক্ষণের পথে হাঁটছেন। ডিম্বাণু সংরক্ষণ করার পদ্ধতিটা কী?
ডিম্বাণু সংগ্রহ
প্রথমে একটি ইঞ্জেকশনের মাধ্যমে ডিম্বাণুর পরিমাণ বাড়ানো হয়। ইঞ্জেকশন প্রয়োগের কিছু দিন পর ‘ট্র্যান্স ভ্যাজাইনাল উসাইট রিট্রিভাল’ পদ্ধতিতে শরীর থেকে ডিম্বাণু বার করা হয়। এতে সর্বোচ্চ ১৫টি এবং সর্বনিম্ন ৫টি ডিম্বাণু নিষিক্ত করা সম্ভব।
সংরক্ষণ
ডিম্বাণু সংরক্ষণের পদ্ধতিকে ‘ভিট্রিফিকেশন’ বলে অথবা ‘র্যাপিড ফ্রিজিং’। ডিম্বাণুকে তরল নাইট্রোজেনে -১৯৬ তাপমাত্রায় সংরক্ষণ করা হয়। তার আগে ডিম্বাণুর মধ্যে যে জলের পরিমাণ থাকে, তা বার করে নেওয়া হয়। নয়তো জমাট বেঁধে যাওয়ার একটা ঝুঁকি থাকে। তখন ডিম্বাণুর আকার এবং গুণগত মান কমতে থাকে। ‘ডিএমএসও’ নামক এক ধরনের রাসায়নিক ব্যবহার করে সংরক্ষণ করা হয়।
সময়
চিকিৎসকের কাছে যাওয়া থেকে গোটা পদ্ধতিটি সম্পূর্ণ হতে সময় লাগে ১৫-২০ দিন। শারীরিক কোনও জটিলতা থাকলে আরও কিছুটা দেরি হতে পারে। তবে মোটামুটি ২০ দিনের মধ্যে পুরো প্রক্রিয়াটি সম্পূর্ণ হয়।
কত বয়স পর্যন্ত ডিম্বাণু সংরক্ষণ করাতে পারেন?
ঋতুবন্ধের আগে যে কোনও বয়সেই করা যায়। তবে বহু চিকিৎসক বলেন, ৩৫ বছর বয়সের আগে করলেই ভাল।
কলকাতায় কেমন খরচ?
ডিম্বাণু সংরক্ষণের ক্ষেত্রে ১.৫ থেকে ১.৭ লক্ষ টাকা খরচ পড়ে। তবে সব ক্লিনিকের ক্ষেত্রে এটি প্রযোজ্য নয়। খরচ বিভিন্ন বিষয়ের উপর নির্ভর করে। খানিক কমবেশি হতে পারে।
কলকাতায় কোথায় কোথায় হয়?
তপসিয়ার অ্যাপোলো ফার্টিলিটি ক্লিনিক, পার্ক স্ট্রিট এলাকার ইন্দিরা আইভিএফ সেন্টার, ফুলবাগান এবং এলগিন রোড এলাকার নোভা আইভিএফ ফার্টিলিটি সেন্টার।
সংরক্ষণের সময়সীমা
১০ বছর পর্যন্ত ডিম্বাণু সংরক্ষণ করে রাখা যায়। তবে চিকিৎসকদের মতে, অত দিন অপেক্ষা না করাই ভাল। সংরক্ষণের বছর পাঁচ-ছয়েকের মধ্যেই যদি কাজে লাগিয়ে নেওয়া যায়, তা হলে ভাল।
জরুরি কথা
ডিম্বাণু সংরক্ষণের প্রক্রিয়া চলাকালীন শরীরের বাড়তি যত্ন নিতে হবে। সময়ে খাওয়াদাওয়া করতে হবে। স্বাস্থ্যকর খাবার খাওয়া জরুরি। বাইরের খাবার এ সময়ে না খাওয়াই ভাল। পরিমাণ মতো জল খেতে হবে। এই সময়ে অন্য কোনও শারীরিক সমস্যা দেখা দিলে মুশকিল হতে পারে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy