‘শব্দ-জব্দ ২০২৩’
আম বাঙালির রোজনামচায় বাংলা শব্দের অবদানের কথা মনে করিয়ে দেওয়ার অভিনব উপায় খুঁজে বের করেছিল আনন্দবাজার অনলাইন। ২০২২ সালে যাত্রা শুরুর সেই উপায়কে সাদরে গ্রহণ করেছিল বঙ্গজনতা। খুদে পড়ুয়ারা শব্দের মায়াজাল ভেদ করার নির্ভেজাল আনন্দে রীতিমতো মেতে উঠেছিল।
সেই একই খেলার দ্বিতীয় বর্ষের অনুষ্ঠানে রাজ্যের মোট ১৫৩টি স্কুল অংশগ্রহণ করেছিল। দু’মাসের দীর্ঘ প্রতিযোগিতার শেষে ২৭ জুলাই চূড়ান্ত ফলাফল ঘোষণার বর্ণাঢ্য অনুষ্ঠানে সেরার শিরোপা লায়ন্স ক্যালকাটা গ্রেটার বিদ্যামন্দিরের তিন পড়ুয়ার মাথায় ওঠে। দ্বিতীয় স্থানে জায়গা করে নেয় কামরাবাদ গার্লস হাই স্কুল। আর এবারের মত চক গোপাল সারদা বিদ্যাপীঠ ফর গার্লসের তিন কন্যার তৃতীয় স্তম্ভে স্থান হয়।
এবারের প্রতিযোগিতায় লায়ন্স ক্যালকাটা গ্রেটার বিদ্যামন্দিরের স্বপ্ননীল ভট্টাচার্য (নবম শ্রেণি), ঈশিকা ঘরামি (নবম শ্রেণি), রূপসা দাস (দ্বাদশ শ্রেণি) প্রথম স্থানের শিরোপা ছিনিয়ে নিয়েছে। তাঁদের অভিজ্ঞতা কী বলছে?
প্রশ্ন: কেমন লাগছে প্রথম স্থানে নামটা লিখতে পেরে?
স্বপ্ননীল ভট্টাচার্য: ২০২২ সালের পর আরও একবার ২০২৩-এ শব্দের খেলায় বাজিমাত করার কথা ভাবিনি। কিন্তু, এই অভিনব অভিজ্ঞতার সাক্ষী হওয়াটাই বিরাট পাওনা। নতুন বাংলা শব্দের ব্যবহার সম্পর্কে যা যা শিখেছি এই দুই মাসে, তা পরবর্তীকালের পড়াশোনার ক্ষেত্রে অনেকটা বেশি সাহায্য করবে।
প্রশ্ন: প্রধান এবং বিশিষ্ট অতিথি সাহিত্যিক শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়ের সঙ্গে কী দেখা হয়েছিল?
স্বপ্ননীল ভট্টাচার্য: হ্যাঁ। সাহিত্যিক শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়ের উপস্থিতি এবং ওনার সঙ্গে কথা বলতে পারাটা একটা উপরি পাওনা। এমন আনন্দঘন মুহূর্ত সামিল হয়ে ভীষণ ভালো লেগেছে।
প্রশ্ন: প্রথম স্থানের শিরোপা মাথায় ওঠার পর স্কুলে কি জনপ্রিয়তা বাড়ল?
স্বপ্ননীল ভট্টাচার্য: স্কুলের বন্ধু বান্ধবীরা অনেকেই ফোনে শুভেচ্ছা জানিয়েছে। তবে জনপ্রিয়তা কতটা বাড়ল সেটা তো বলা সম্ভব না। তবে, আগামীতে আমার মতো তারাও যাতে শব্দ জব্দের মত দুর্দান্ত অনুষ্ঠানে সামিল হয়, সেটাই আশা থাকবে।
প্রশ্ন: বাংলা নিয়ে পড়াশোনা করবে পরে?
স্বপ্ননীল ভট্টাচার্য: এই প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করার পর ভবিষ্যতে বাংলা নিয়ে পড়াশোনার সুযোগ থাকলে সেটা লুফে নেওয়ার বিষয়ে বেশি ভাবতে হবে না।
কামরাবাদ গার্লস হাই স্কুলের তিন কৃতি কন্যা সায়ন্তনী দে (দশম শ্রেণি), শ্রেয়া নষ্কর (দশম শ্রেণি), সুপর্ণা মণ্ডল (দ্বাদশ শ্রেণি) এবারের প্রতিযোগিতায় দ্বিতীয় স্থানে জায়গা করে নিয়েছে।
প্রশ্ন: কেমন লাগল শব্দের খেলায় জিততে?
সায়ন্তনী দে: খুবই ভালো লাগল। অনেক কিছু জানতাম না, প্রতিযোগিতার মাধ্যমে ভাষা সম্পর্কে জানার সুযোগ হল। প্রথম রাউন্ডে জিতে যাওয়ার বিষয়ে আত্মবিশ্বাসী ছিলাম। কিন্তু সেরা ছয়ের তালিকায় নাম থাকবে, এটা আশা করিনি।
প্রশ্ন: শব্দকে জব্দ করে দ্বিতীয় স্থানে পা, আগামীতে কী ভাবে প্রস্তুতি থাকবে?
সায়ন্তনী দে: পরের বার এরকম খেলায় আরও অংশগ্রহণ করে আরও অনেক কিছু শিখে নেওয়ার আগ্রহ থাকবে। যদি সুপর্না দি আর শ্রেয়ার সাহায্য না পেতাম, তাহলে হয়তো শেষের রাউন্ডটা পেরোতে পারতাম না। অভিজ্ঞতার নিরিখে তাঁদের ভাষার দখল থাকার জন্যই এই শিরোপার অংশীদার হতে পেরেছি। টিম ওয়ার্ক সম্পর্কেও ধারণাটা স্পষ্ট হয়েছে। ওটা না থাকলে হয়ত পরবর্তীকালেও পড়াশোনার ক্ষেত্রে উত্তরণের সুযোগ পাবো না।
প্রশ্ন: বিশেষ অতিথি সাহিত্যিক শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়ের সঙ্গে দেখা হওয়ার অভিজ্ঞতা কেমন ছিল?
সায়ন্তনী দে: এত বড় একটা প্ল্যাটফর্মে দাঁড়ানোটা যেমন অনন্য অভিজ্ঞতা, তেমনই জীবনের সবথেকে বড় মুহূর্ত শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়ের সঙ্গে দেখা হওয়াটাও। তিনি পরবর্তী জীবনের জন্য শুভেচ্ছো জানিয়েছেন— যেটা একপ্রকার বিরাট পাওনা। এমন সুযোগ সকলে পায় না। তাই চিরজীবন এই মুহূর্তটা মনে থাকবে। ভীষণ খুশি হয়েছি।
তৃতীয় স্থানে জায়গা করে নিয়েছেন চক গোপাল সারদা বিদ্যাপীঠ ফর গার্লসের প্রত্যুষা আজ়মি (দশম শ্রেণি), সীরাজ়ুম মণিরা (দ্বাদশ শ্রেণি), সিফা শেখ (দশম শ্রেণি)।
প্রশ্ন: বাংলা ভাষাকে চেনার এই খেলায় বিজয়ীর স্থানে জায়গা পেয়ে কেমন লাগছে?
সীরাজ়ুম মণিরা: খুবই ভালো লেগেছে। প্রথম বার অংশগ্রহণ করার পর প্রতিযোগিতায় তৃতীয় স্থান অর্জন করব, এটা আশাতীত ছিল না। প্রত্যুষা এবং সিফা বয়সে এবং অভিজ্ঞতায় কনিষ্ঠ হলে তারা ভীষণ প্রখর হওয়ায় জয়টা সহজ হয়ে উঠেছিল। প্রতিটা মুহূর্তে তারা ভীষণ সহযোগিতা করেছিল।
প্রশ্ন: প্রস্তুতি কেমন ছিল?
সীরাজ়ুম মণিরা: প্রস্তুতি সে ভাবে কিছুই ছিল না। একেবারে অনভিজ্ঞ হিসেবে আমাদের কম সময়ের মধ্যে প্রশ্নের উত্তর খোঁজাটাই লক্ষ্য ছিল। বাকি প্রতিযোগিতায় হার জিৎ ভাগ্যের ব্যপার। কিন্তু খেলায় অংশগ্রহণ করার অভিজ্ঞতা দরকার ছিল। এমন বুদ্ধির খেলা খেলে ভীষণ আনন্দ হয়েছে। প্রশ্ন: সামনেই তো উচ্চ মাধ্যমিক, এর পর কী বাংলা নিয়ে পড়তে চাইবে?
সীরাজ়ুম মণিরা: বাংলা নিয়ে পড়ার বিষয়ে তেমন করে কিছু ভাবিনি। কিন্তু সত্যি বলতে ইচ্ছে তো আছেই এই বিষয়টি নিয়ে স্নাতকস্তরে পড়াশোনার। প্রশ্ন: শব্দ জব্দ ২০২৩ এর অভিজ্ঞতাটা কেমন ছিল?
সীরাজ়ুম মণিরা: রবীন্দ্র সদনে যাওয়ার পর থেকে ভীষণ সুন্দর অভিজ্ঞতা হয়েছিল। এতটা আনন্দ সত্যিই আশা করিনি। শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়ের সঙ্গে কথা বলতে পারব, এটা তো অসাধারণ একটা মুহূর্ত। এতটা ভালো লাগা সত্যিই উপলব্ধির বাইরে।
প্রশ্ন: স্কুল থেকে কী বলছে?
সীরাজ়ুম মণিরা: স্কুলের ম্যাডামরা ভীষণ খুশি। আমাদের এই জয়ের আনন্দে তাঁরা গর্বিত বোধ করছেন, এটাই অনেক।
কী বলছেন অভিভাবকরা?
শর্মিলা ভট্টাচার্য (স্বপ্ননীল ভট্টাচার্য-এর মা): এমন একটি বিরাট মঞ্চ থেকে সাফল্য পাওয়াটাই বিরাট ব্যাপার। তার উপর, আনন্দবাজার অনলাইনের এমন অভিনব উদ্যোগকে সাধুবাদ জানাই। বাংলাকে ভুলতে চলার বাঙালিকে ভাষার মর্ম মনে করিয়ে দেওয়ার এই অনুষ্ঠান বারবার হোক। আপাতত ছেলের আনন্দটা আমরা সকলে মিলে উদযাপন করছি। ভবিষ্যতে তাকে আরও উৎসাহ দেবো।
সমাপ্তি দে (সায়ন্তনী দে-এর মা, গৃহবধু): মেয়ের সাফল্যে ভীষণ ভালো লাগছে। এমনিতেই বাংলা মানুষ উচ্চারণ করতেই ভুলে গেছে, তাই এই অনুষ্ঠানের উদ্যোগটা ভীষণ ভালো। এতে বাংলা নিয়ে সকলের জ্ঞান আরও বাড়বে। এত মিষ্টি ভাষা নিয়ে অনেক কিছুই জানার বাকি রয়েছে, ছেলে মেয়েদের শেখার জন্য এর থেকে ভালো আর কিছু হয় না।
শেখ রিয়াসউদ্দিন (সীরাজ়ুম মণিরার বাবা, সেলাই মেশিন কারখানার মালিক): খুবই আনন্দিত আমরা। মেয়ে এতটা আনন্দের খবর দেবে, এটা আশাতীত ছিল না। আমাদের যৌথ পরিবার হওয়ায় আনন্দটা দ্বিগুন হয়ে গিয়েছে। আর আনন্দবাজার অনলাইনের পক্ষ থেকে এটা ভীষণ ভালো উদ্যোগ। যে ভাবে বাংলা ভাষার মাধুর্য ধীরে ধীরে হারাতে বসেছে, সেখানে এমন প্রতিযোগিতা ভাষার সংহতি বজায় রাখতে অনেকটা সাহায্য করবে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy