Advertisement
০৫ অক্টোবর ২০২৪
Romanisation of Bengali

মুঠোফোনের রোমান বাংলা কী ভাবে হয়ে উঠল বঙ্গ জীবনের অঙ্গ?

ইংরেজি হরফে লেখা বাংলা মেসেজের পাঠোদ্ধার করা এখন বাঙালির কাছে জলভাত।

Texting in Roman Bangla

প্রতীকী চিত্র।

এবিপি ডিজিটাল কনটেন্ট স্টুডিয়ো
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৬ জুলাই ২০২৪ ১৬:৫৫
Share: Save:

ইংরেজি ভাষায় বাংলা মেসেজ মোবাইল স্ক্রিনে দেখে আজকাল আর কেউ চমকায় না। সাবলীল ভাবে বুঝে যায় বার্তা। কখনও কখনও ইংরেজি শব্দের বদলে সংখ্যা ব্যবহারের রেওয়াজ চালু হয়েছে।

ইংরেজি হরফে লেখা বাংলা মেসেজের পাঠোদ্ধার করা এখন বাঙালির কাছে জলভাত। এই ‘ইংরেজি হরফে বাংলা’ লেখার ডাক নাম রোমান বাংলা।

বাংলার রোমানীকরণ অবশ্য নতুন কোনও বিষয় নয়। অবাঙালি পাঠকদের বাংলা ভাষার উচ্চারণগুলি বুঝতে সাহায্য করছে ‘রোমান বাংলা’। এখন অবশ্য বাঙালি অবাঙালির ভেদ মুছে রোমান হয়ে দাঁড়িয়েছে সকলের।

কী ভাবে এল রোমান বাংলা?

সে ইতিহাসের খোঁজ মিলবে ষোড়শ শতকে। সেই সময় বাংলায় অবস্থানরত পর্তুগিজ মিশনারিরাই প্রথম বাংলা বই লেখার ক্ষেত্রে লাতিন বর্ণমালা ব্যবহার করতেন। এ ক্ষেত্রে মানুয়েল দা আস্‌সুম্পসাঁউ’র ‘কৃপার শাস্ত্রের অর্থভেদ’ এবং ‘ভোকাবুলারিও এঁ ইডিওমা বেঙ্গালা এ পোর্তুগেজ়’— এই দু’টি বইয়ের কথা বিশেষ ভাবে উল্লেখ করতে হয়।

তাতে যে ভাবে লেখা হত, সেই পদ্ধতিই এখন ‘বং বাঙালি’র নিজস্ব স্টাইল। মুঠোফোন বন্দি জীবনে ঝটপট কাজের কথা বলে নিতে রোমান বাংলাই হয়ে উঠেছে আম বাঙালির রোজের অভ্যাস।

কিন্তু হঠাৎ রোমান বাংলা কী ভাবে হয়ে উঠল বঙ্গ জীবনের অঙ্গ?

তার উত্তর লুকিয়ে আছে সর্বক্ষণের সঙ্গী হাতের কাছে বুদ্ধিমান বন্ধুটির কাছেই। রোমানপন্থী, অর্থাৎ যাঁরা ইংরেজি অক্ষরে বাংলা লেখেন, তাঁদের দাবি, মোবাইল ডিভাইসে বাংলা কী-বোর্ডের ব্যবহার অনেকেই জানেন না, পারতপক্ষে ব্যবহার করাটাই পছন্দ করেন না। তার উপর একটি বানান লিখতে গেলে তার একাধিক বিকল্প দেখতে পাওয়া যায়, সেই সুযোগে অন্য শব্দ বসে যায়। বদলে যায় প্রেরকের কথার অর্থ। সেই কথাই যখন প্রাপকের কাছে পৌঁছে যায়, তখন অনেক সময়ই ভিন্ন কী বোর্ড এবং সফট্অয়্যারের সমস্যায় শব্দ তো বটেই, ভাবনাও বদলে দেয়। আ’কার-ই’কার ইত্যাদি প্রভৃতির ঝামেলা তো আছেই!

ইংরেজি হরফে বাংলা লেখার এই যদি এক কারণ হয়, তা হলে অপর কারণ অবশ্যই বাংলা বর্ণমালা চেনার দূর্বলতা। ইংরেজি মাধ্যমে পড়াশোনার অভ্যাসে অনেকের কাছেই আজ বাংলা অক্ষর নাকি বেজায় খটমট! তাই বিকল্প পথ রোমান!

রোমান হরফে বাংলা বই প্রকাশ একদা ঝড় তুলেছিল বঙ্গ জীবনে। বাংলা অক্ষর হারিয়ে যাবে নাকি? নেটিজেনদের এমন আশঙ্কায় সোশ্যাল মিডিয়া তোলপাড় হয়েছিল। রোমানে বাংলা পড়ার এমন অভিনব ভাবনায় কলেজ স্ট্রিটের বই পাড়াতেও মিশ্র প্রতিক্রিয়ার ছবি চোখে পড়েছিল। বর্ণমালা ভুলবে নাকি বাঙালি?

২১ ফেব্রুয়ারি, প্রতি বছর ভাষা দিবস উদযাপনের আলোর অন্তরালে ঘুরে ফিরে আসে সেই অন্ধকারের প্রশ্ন। শেষ পর্যন্ত কিন্তু জয় হয় গোলাপি মলাট, ক্ষীণ তনু সেই বইটিরই। বাঙালির ঘরে ঘরে যে বই এনে দিয়েছিল জ্ঞানের আগুন। প্রতিটি বাঙালির জীবনের পুণ্য প্রভাতে বীণাবাদিনীর নৈবেদ্যের থালাটির চক-খড়ি আর স্লেটের সঙ্গে তার অবশ্যাম্ভাবী উপস্থিতি আজও অমলিন। যে বই লিখেছিল বাংলা ভাষার সভ্যতার নতুন ইতিহাস। আদরের আলো মেখে যুগে যুগে তাই সে বেঁচে থাকে। রোমান ঝড়েও হারিয়ে যায় না সহজ সরল বর্ণমালা। বদলের মধ্যে দিয়েও হয়ে ওঠে বলিষ্ঠ। বেঁচে থাক মায়ের ভাষা।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Bengali Language
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE