কানহাইয়া কুমার।—ফাইল চিত্র।
সে অর্থে আমাদের দেশ স্বাধীন। হ্যাঁ, সেই ১৯৪৭-এর ১৫ অগস্ট থেকেই স্বাধীন। এ দেশ গোলাম নয়। গোলামি ঘুচেছে বটে, কিন্তু স্বাধীনতায় বিস্তর গোলমাল বেধেছে! অনেক সমস্যা আছে। এই ধরনের গোলমাল থাকা উচিত ছিল না। এত সংগ্রামের পর এমন মহার্ঘ্য স্বাধীনতা পেয়ে আমাদের তার মূল্য বোঝা উচিত ছিল।
আমার কাছে কিন্তু স্বাধীনতার সংজ্ঞা আলাদা। আমরা আসলে কোন স্বাধীনতা চাই? কীসের থেকে মুক্তি চাই? স্বাধীনতা চাই জাতপাত থেকে, স্বাধীনতা চাই সাম্প্রদায়িকতা থেকে, দুর্নীতি থেকে, পুঁজিবাদ থেকে, স্বাধীনতা চাই গরিবি থেকে, স্বাধীনতা চাই বেকারত্ব থেকে।
এ সবের থেকে মুক্ত না হলে কীসের স্বাধীনতা ভোগ করবে দেশের মানুষ? ক্ষমতাবানেরা ‘ভ্রষ্টাচার’ করছে, নেতা-মন্ত্রীর ছেলে অন্যায় করে পার পেয়ে যাচ্ছে। এর বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোটা অনেক বেশি প্রয়োজন। রাজ্যে রাজ্যে কৃষকেরা আত্মহত্যা করছেন। এর বিরুদ্ধে নির্ভীক ভাবে প্রতিবাদ করারও স্বাধীনতা চাই।
আমাদের জওয়ানেরা সীমান্তে প্রাণ দিচ্ছেন। বলা হচ্ছে সন্ত্রাসবাদী হামলা হচ্ছে। সারাক্ষণ বলা হচ্ছে, নজর ঘুরিয়ে দেওয়া হচ্ছে সন্ত্রাসবাদের দিকে। যেন দেশে আর কোনও সমস্যা নেই। আরে, সন্ত্রাসবাদের শেকড়টাও বুঝতে হবে। খেয়াল করে দেখবেন, গরিব লোককে সন্ত্রাসবাদী বানানো হচ্ছে। যা খুশি বোঝানো হচ্ছে। সর্বগ্রাসী দারিদ্র দূর হলে সন্ত্রাসবাদও দূর হতে পারে। সম্পদের অভাবে গরিবি আসতে পারে, আবার আদর্শের অভাব থেকেও গরিবি আসে।
আরও পড়ুন: দেখুন স্বাধীনতার প্রথম সকালের সেই দুর্লভ মুহূর্তগুলো
আমার কাছে স্বাধীনতার এই লড়াই আসলে গরিবির বিরুদ্ধে লড়াই। মানুষ রাস্তায় মরে পড়ে থাকছে, খেতে পাচ্ছে না— এর বিরুদ্ধে লড়াইটা আমাদের কাছে অনেক বেশি জরুরি। অনেক বেশি জরুরি বেকারির বিরুদ্ধে লড়াইটা। আমাদের স্বাধীনতা আজ বিপন্ন। যে লোকগুলো ব্রিটিশ শাসকদের সঙ্গে বসে চা খেত, তাদের হয়ে দেশের মানুষের উপর নজরদারির জন্য গোয়েন্দাগিরি করত, ব্রিটিশ প্রভুদের সামনে হাতজোড় করে ক্ষমা চাইত, সেই তারাই তো ক্ষমতায় আছে। স্বাধীন দেশের সংবিধান আমাদের যে গণতান্ত্রিক অধিকার দিয়েছে, সেই গণতন্ত্রই আজ বিপন্ন। গণতন্ত্রকে রক্ষা করতে হবে।
‘অচ্ছে দিন’-এর স্বপ্ন দেখানো হচ্ছে। কোথায় সে দিন? আমি এখানে একটু পুরনো কথা টেনে আনছি। লোকসভা নির্বাচনের আগে প্রধানমন্ত্রী প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন, বিদেশে রাখা কালো টাকা দেশে ফিরিয়ে আনতে পারলে প্রত্যেককে ১৫ লক্ষ টাকা করে দেওয়া হবে। কোথায় সে টাকা? ওই ১৫ লক্ষ টাকা আমরা বড্ড ‘মিস’ করছি যে!
আরও পড়ুন: স্বাধীনতার সকালে পাওয়া দু’টি বিস্কুটই ছিল নিজের অর্জন
আসলে সঙ্ঘ পরিবার এবং আরএসএস-এর আদর্শে দেশ চলছে। ওরা ধর্ম ও সম্প্রদায়ের ভিত্তিতে দেশকে ভাগ করছে। কর্পোরেট-রাজ প্রতিষ্ঠা করা হচ্ছে। ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি যেমন দেশ শাসনের নামে লুঠ করত, এখনও তেমনটাই চলছে!
যতক্ষণ না ছাত্র, দলিত, চাষি, মহিলারা মিলে মনুবাদীদের বিরুদ্ধে লড়ছে, ততক্ষণ স্বাধীনতা নেই! আসতে পারে না। যথাযথ শিক্ষা, স্বাস্থ্য এবং সম্মানজনক জীবনযাত্রা চাই দেশের মানুষের।
সম্মানজনক বলতে যথার্থ অর্থেই সম্মানজনক। এই যে গোরক্ষপুরের হাসপাতালে এত শিশুর মৃত্যু হল, এ কি কোনও ‘স্বাধীন’ দেশে ভাবা যায়! কিন্তু তার পর তার তদন্তের নামে কী হবে? এ ক্ষেত্রে শুধু কর্তব্যে গাফিলতিই নয়, ভয়ঙ্কর দুর্নীতিও রয়েছে। এটা তো সোজা-সরল ঘটনা নয়। গোটা ব্যাপারটা অন্য দিকে ঘুরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা চলছে! বস্তুত, কর্তব্যে গাফিলতি বা সংশ্লিষ্ট সব বিষয়ের সঙ্গে দুর্নীতি কী ভাবে মিশে যায়, গোরক্ষপুরের হাসপাতালে ভয়াল শিশুমৃত্যুর ঘটনা তার একটা বড় উদাহরণ!
আরও পড়ুন: ফিরে দেখা স্বাধীনতা, আনন্দবাজার আর্কাইভ থেকে
আমাদের দেশের একটা বড় ট্র্যাজেডি হল, উন্নয়নের খাতে একেই অল্প খরচ করা হচ্ছে, আর যেটুকু খরচ হচ্ছে সেটাও গরিব মানুষের কাছে পুরোটা পৌঁছচ্ছে না।
প্রকৃত স্বাধীনতার জন্য আমাদের সংগ্রাম চলবে। আগে আমআদমি তাদের অধিকার পাক, তার পরে না হয় বলব সত্যিকারের স্বাধীন হয়েছি!
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy