আইফা-য় রানি
আমেরিকাতে ২০১৪-র আইফার মধ্যমণি তিনি। সকালে কেভিন স্পেসির সঙ্গে মিটিং করছেন, তো রাতে জন ট্রাভোল্টার সঙ্গে আড্ডা মারছেন তাঁর পরের গানের অ্যালবাম নিয়ে। তিন দিন ফ্লোরিডার ট্যাম্পা বে-তে কাটিয়েই ছুটছেন নিউ ইয়র্কে তাঁর পরের গানের অ্যালবাম নিয়ে আমেরিকান মিডিয়ার সঙ্গে প্রেস কনফারেন্স করতে। এর মধ্যেই সময় বের করে আনন্দplus-এর সঙ্গে আড্ডা মারলেন...
আইফার জন্য ভোট দিতে পারলেন না মুম্বইতে। এই নিয়ে তো দেশে বেশ তোলপাড় হল ক’দিন!
হ্যাঁ, জানি। আমার নিজেরও খুব খারাপ লেগেছে। আমি অসম্ভব পলিটিক্যালি কনশাস। দেশে কী হচ্ছে, ইলেকশনের আগে কোন ওপিনিয়ন পোল কী বলছে, এই ব্যাপারগুলোর কিন্তু আমি খোঁজ রাখি। কিন্তু কী করব! প্রায় ছ’মাস আগে আইফায় আসব বলে ডেট দিয়ে দিয়েছিলাম। আর এই ব্যাপারগুলো যদি ক্যানসেল করি, তা হলে প্রচুর লিগ্যাল সমস্যা হয়। তাই ইচ্ছে থাকলেও ভোটের দিন থাকতে পারলাম না মুম্বইতে। এটা কী রকম ফিলিং বলুন তো?
কী রকম?
আই ফিল লাইক আ ট্রেটর। খুব ডিপ্রেসিং। তবে আমার পরিবার ভোট দিয়েছে। এটা ভেবে আমার ভাল লাগছে।
বুঝলাম। আচ্ছা, আজ সকালে প্রেস কনফারেন্সে আপনাকে দেখে মনে হল অনেক ওজন কমিয়েছেন আপনি...
(হাসি) আরে কমাতে তো চাইছি, কিন্তু কমছে কই। ওজন কমালেও কী হবে, শুধু হাতের মাসলগুলো দেখুন। (হাত ফোল্ড করে হাতের মাসল দেখালেন) কোনও দিন কোনও হিরোইনের হাতে দেখেছেন এত মাসল? (হাসি) এটা পুরোটাই মেরি কম-য়ের ওপর বায়োপিকের জন্য। ওই রোলটার জন্য ওয়েট ট্রেনিং করতে করতেই এই মাসল তৈরি হয়ে গিয়েছে। এই তো, এখানে আসার আগের দিনও মানালিতে শ্যুটিং করে এলাম ছবিটার জন্য। বক্সিংয়ের বেসিক ট্রেনিংটা কিন্তু হয়ে গিয়েছে আমার। এর পর জোয়া আখতারের ছবিটা শুরু করছি দশ দিনের মধ্যে। জোয়া আমাকে বলেছে এই মাসল কমাতেই হবে। সেটাই চেষ্টা করছি। দেখি কী হয়।
কেমন হল মেরি কম-য়ের বায়োপিক?
আমি এখনও এডিটটা দেখিনি। কিন্তু একটা ফিলিং হয় না যখন আপনি বুঝতে পারেন ছবিটা ভাল হয়ে গিয়েছে। আমার ঠিক সে রকম একটা ফিলিং হচ্ছে। আমার জীবনের সব চেয়ে ইম্পর্ট্যান্ট ছবি হয়তো এটাই। কোনও ছবিতে আমি এত খাটিনি যা এই ছবিতে খেটেছি। আমার কাছে ছবিটা স্পেশাল কারণ ছোট শহরের মেয়ে তো! আমি বুঝি, বড় শহরে আমাদের কতটা হেয় করা হয়।
কেউ আমাদের পাত্তাই দেয় না। বাঁকা কথা বলে...
আপনার সঙ্গে হয়েছে এ রকম?
হয়নি আবার! এবং পুরো ব্যাপারটাই দু’ধারওয়ালা তরবারি। হয়তো আপনি চুপ করে আছেন। তখন লোকে বলবে এরা মিশতে জানে না। যদি আগ বাড়িয়ে কথা বলতে যান, তখন বলবে দেখেছ, কী ওয়ানাবি। এ রকম পরিস্থিতি যে মেয়েদের সহ্য করতে হয়েছে, তাঁরা বুঝবেন, আমি ঠিক কী বলতে চাইছি। মেরি কম-কে এগুলো সব সহ্য করতে হয়েছে। ছবিটা দেখলে বুঝবেন, কী পরিমাণ কষ্ট করেছে মেরি এই জায়গাটায় পৌঁছতে।
আমি কোথাও কোথাও ওর সঙ্গে নিজেকে আইডেন্টিফাইও করতে পেরেছি।
রায়বরেলির সেই মেয়েটার আজ মঞ্চে সঙ্গী জন ট্রাভোল্টা
আচ্ছা, এ বারে দেখছি আইফার সব অনুষ্ঠানে আপনি। ফ্যান থেকে শুরু করে আমেরিকার পলিটিশিয়ানরা একজনকেই চেনে। তাঁর নাম প্রিয়ঙ্কা চোপড়া।
হাহাহাহা, এখনকার লোকেরা আমাকে খুব ভালবাসে এটা সত্যি। বছরে ক’দিন আমেরিকায় থাকি বলুন তো? হয় শ্যুটিং, না হয় আমার গানের অ্যালবাম। আমেরিকা তো আমার সেকেন্ড হোমে পরিণত হয়েছে দেখছি। গত এক বছরে এত ট্রাভেল করেছি যে আমার ভাই শুধু আমার ফ্রিকোয়েন্ট ফ্লায়ার ভাঙিয়েই ট্রাভেল করে চলেছে।
কেভিন স্পেসি আপনাকে ডাকছেন মিটিং করতে, জন ট্রাভোল্টা আপনার কথা বলছেন। বহু হিরো যা করতে পারলেন না, তা তো আপনি করে দেখাচ্ছেন...
হাহাহাহা, ভালই তো বলুন। কেউ তো অন্তত করে দেখাল! অনেকে শুধু ক্রসওভারের কথা বলে। কিন্তু সে রকম কাজ কেউ করে না। আমার ভাল লাগে আমি অন্তত এখানকার বিনোদন জগতের মানুষের কাছে নিজের পরিচিতি তৈরি করতে পেরেছি। এই তো সে দিন একজন বলল, আইফার নাম বদলে পাইফা করা উচিত।
মানে প্রিয়ঙ্কা চোপড়ার আইফা...
হাহাহাহা, ইয়েস এগ্জ্যাক্টলি।
এই যে জন ট্রাভোল্টা বা কেভিন স্পেসির সঙ্গে আড্ডা মারলেন, কী কথা হল?
দেখুন, আজ ওঁদের একটা ধারণা হয়ে গিয়েছে আমাদের সিনেমা মানে বলিউডের সম্বন্ধে। আরও সিনার্জি কী ভাবে আনা যায় বলিউড আর হলিউডের মধ্যে, তা নিয়ে আলোচনা হল। এই তো শেখর কপূরের ‘পানি’তে জন ট্রাভোল্টা অভিনয় করবেন বললেন। এগুলো কিন্তু এক-একটা বিরাট পদক্ষেপ। এগুলোতে আমাদের ইন্ডাস্ট্রির অনেক সুবিধে হবে।
এখানে এসে দেখলাম গান গাওয়ার বিষয়েও আপনি খুব সিরিয়াস?
হ্যাঁ, হ্যাঁ, অসম্ভব সিরিয়াস। এই তো দু’দিন আগে আমার একটা গান রিলিজ করল। অলরেডি ইউটিউবে অসম্ভব জনপ্রিয় হয়ে গিয়েছে গানটা। জানি না কেন আমার মনে হয় আমি একটা ট্রেন্ড আবার ফিরিয়ে আনতে পারব। আগে সুরাইয়ার মতো অভিনেত্রীরা গান ও অভিনয় একসঙ্গেই করতেন। আজ আমি ছাড়া আর কোনও হিরোইন বোধহয় এটা করে না। মনে হয় ওই ট্রেন্ডটা ফিরিয়ে আনতে পারব আমি।
কিন্তু এখনও অবধি তো প্রাইভেট অ্যালবামই করছেন। হিন্দি গানের প্লেব্যাক করেননি তো...
ইচ্ছে আছে খুব তাড়াতাড়ি সেটা করার। হয়তো এক বছরের মধ্যেই শুনতে পাবেন আপনারা। এর আগে ‘ব্লাফমাস্টার’য়ে একটা গান আমাকে দিয়ে গাইয়েছিল বিশাল-শেখর। কিন্তু পরে সেটা ছবি থেকে বাদ যায়। কারণ দৈর্ঘ্যে বেড়ে যাচ্ছিল ছবিটা।
মানে দীপিকা পাড়ুকোন তো ছিলই। এ বার শ্রেয়া ঘোষালও আপনার কম্পিটিটর?
না, না, সে রকম প্রতিযোগী কেউ নয়। সবার জন্য প্রচুর কাজ রয়েছে এখানে। আর এখন যদি নিজেকে পুশ না করি, তা হলে কবে করব! ঝুঁকি তো নিতেই হবে। সারা জীবন তাই করে এসেছি। এখনও তাই করছি। ‘বরফি’র রোলটা রিস্ক ছিল। ‘কামিনে’র রোলটাও তাই। মেরি কম-য়ের বায়োপিকটাও তাই। রিস্ক নহি, তো লাইফ কা মজা হি নহি।
আচ্ছা, এখানে আপনি একটা ডকুমেন্টারি রিলিজ করলেন, যার বিষয় ছিল ‘গার্লচাইল্ড রাইজিং’। ইন্ডিয়া থেকে ইউনাইটেড নেশন তো আপনাকেই চুজ করেছে শুনলাম।
হ্যাঁ, ইন্ডিয়া থেকে একমাত্র আমিই ছিলাম। আরও অনেক দেশের অভিনেত্রীরা ছিলেন ডকুমেন্টারিতে। মেরিল স্ট্রিপ ছিলেন, সালমা হায়েক ছিলেন। পৃথিবীর এক-একটা দেশের মেয়েদের কথা এক-একজন অভিনেত্রী ভয়েস ওভারে বলবে এটাই কনসেপ্ট। সালমা হায়েক আর মেরিল স্ট্রিপের সঙ্গে যে আমার নামটা একসঙ্গে উচ্চারিত হচ্ছে, এটাই তো আমার কাছে বিরাট প্রাপ্তি। আচ্ছা, আপনি তো কলকাতার তাই না?
হ্যাঁ।
আমার এই গার্লচাইল্ড রাইজিংয়ের গল্পটাও একজন কলকাতার মেয়েকে নিয়ে। রুকসানা। খুব ভাল লাগবে যদি কলকাতার মানুষ আমাকে জানান, তাঁদের কেমন লাগল ভিডিয়োটা।
এ সব দেখলে মনে হয় না আপনার পৃথিবীটা একেবারে বদলে গিয়েছে। বলিউডের অন্য হিরোইন শুধু ছবিতে অভিনয় করছে। আপনি সেদিকে নিজেকে আরও পুশ করছেন। ওদের পৃথিবীর থেকে আপনার পৃথিবীটাই তো আলাদা করে দিয়েছেন আপনি।
ওটা তো করতেই হবে। না হলে নিজের গ্রোথটা কী করে হবে। একটা স্টেজের পর আপনাকে শুধু বড় লক্ষ্যের দিকে তাকাতে হবে। তখন দেখবেন ছোট জিনিস আর ম্যাটার করছে না। তখন জেট ল্যাগ লাগবে না। তখন পেটি বিচিং করবেন না আপনি। তখন আপনি শুধু আপনার লক্ষ্যের দিকে এগিয়ে যাবেন।
আচ্ছা, এই যে আপনার নতুন গান ‘আই কান্ট মেক ইউ লাভ মি’র বিষয় তো হল হার্টব্রেক এবং তার সঙ্গে জুড়ে থাকা দুঃখ। যে প্রিয়ঙ্কা চোপড়া এত ফোকাসড্, তাঁর আবার হার্টব্রেক হয় না কি?
হার্টব্রেক হয় না আবার! অবশ্যই হয়।
কে হার্টব্রেক করল আপনার?
(হেসে) সেটা হয়তো আমার পক্ষে বলা সম্ভব নয়। কিন্তু হার্টব্রেক তো হয়।
তখন কী করেন?
(হাসি) হঠাত্ করে স্যাড সংস ডাউনলোড করি আইটিউনস থেকে। ঘরের আলো নিবিয়ে শুয়ে থাকি। অকারণে খাই। কথা বলতে ইচ্ছে করে না তখন। খালি মনে পড়ে পুরনো দিনের কথা আর ভাবি কেন হল এ রকম! তার পর নিজেই বেরিয়ে আসি সেই মানসিক অবস্থা থেকে।
আজ তো আপনার বোন পরিনীতি চোপড়াও বিরাট স্টার। চোপড়া ফ্যামিলি তো বলিউডে রাজ করছে...
আরে দেখুন না, এক দিকে যশ চোপড়া-বি আর চোপড়ার লেগ্যাসি তো রয়েইছে। এ বার আমরা অন্য চোপড়ারাও একটা লেগ্যাসি তৈরি করব বলিউডে (হাসি)।
শেষ প্রশ্ন, কী রকম লাগে আপনার যখন দেখেন রায়বরেলির সেই মেয়ে কেভিন স্পেসি, জন ট্রাভোল্টার সঙ্গে মিটিং করছে। লস অ্যাঞ্জেলিস-এ গান রেকর্ড করছে। আমেরিকার ফ্রি-ওয়ে-তে গেস-য়ের হোর্ডিংয়ে আপনার ছবি। আজ ট্যাম্পা তো কাল গোরেগাঁও-এর স্টুডিয়োতে দারুণ শট দিচ্ছেন আপনি...
ভাল তো লাগেই। মাঝেমধ্যে বিশ্বাস হয় না আমার নিজেরও। খালি ভাবি, ইজ ইট হ্যাপেনিং টু মি? এটা বুঝতে পারি, ভগবান আমাকে বেছে নিয়েছেন যাতে আমি এই কাজগুলো করতে পারি। সেটাই সাধ্যমতো করার চেষ্টা করি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy