শহরে যখন ত্রিমুখী গোয়েন্দার লড়াই তখন শীতের কলকাতায় উনি যেন অপ্রত্যাশিত অতিথি।
ব্যোমকেশ, শবর, ফেলুদা-র পর তাঁর আগমন যে ঘটবে কেউ সেটা আন্দাজই করতে পারেনি।
রাজা রায়চৌধুরী।
কাকাবাবু।
ফিরে এলেন তিনি চিরঞ্জিত চক্রবর্তীর হাত ধরে।
হ্যাঁ, চিরঞ্জিত এ বার কাকাবাবু। ছবির প্রযোজক আরপি টেকভিশন। গল্পের নাম ‘জঙ্গলগড়ের চাবি’।
পরিচালক এখনও ঠিক না হলেও শোনা যাচ্ছে এক বিখ্যাত পরিচালক এ ছবিতে থাকবেন ক্যামেরার পিছনে।
যা খবর, শুক্রবার বিকেলে সইসাবুদ সেরে ফেলেছেন চিরঞ্জিত। শনিবার সকালে যখন তাঁর সঙ্গে কথা হল, বোঝাই যাচ্ছিল, কাকাবাবুর অফার পেয়ে তিনি যথেষ্ট উত্তেজিত।
ছবি: সুমন বল্লভ।
“কাকাবাবু দুর্দান্ত চরিত্র। আই অ্যাম ভেরি ভেরি এক্সাইটেড। শুনেছিলাম বিজয়াদি (রায়) একবার আমাকে ফেলুদা হিসেবে ভেবেছিলেন। কিন্তু তার পর তো সেটা বেণু (সব্যসাচী চক্রবর্তী) করল। ব্যোমকেশ করার ইচ্ছে আমার কখনও হয়নি। কিন্তু কাকাবাবু আমি করতে চাই,” বলছিলেন চিরঞ্জিত।
প্রসঙ্গত, ‘চতুষ্কোণ’ ছবির পর থেকেই টলিউডে চিরঞ্জিতকে নিয়ে তুমুল হইচই।
এবং এখানেই কাহানি মে টুইস্ট।
টলিউডে চিরঞ্জিতের কামব্যাকের পিছনে বিরাট হাত ‘চতুষ্কোণ’য়ের পরিচালক সৃজিত মুখোপাধ্যায়ের। যিনি আবার প্রসেনজিতের কাকাবাবুরও পরিচালক। ২০১৩তে প্রসেনজিৎকে নিয়ে বানিয়েছিলেন ‘মিশর রহস্য’।
এই সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে সৃজিতের যে খারাপ লাগতে পারে, এটা কি একবারও মনে হয়নি চিরঞ্জিতের?
“দেখুন, আমরা সবাই প্রোফেশনাল। বুম্বাকে নিয়ে সৃজিত কাকাবাবু বানাচ্ছে। আমরা আর একটা কাকাবাবু বানাচ্ছি। হোক না একটু কম্পিটিশন। ক্ষতি নেই তো!” নিজস্ব ভঙ্গিতে বলেন চিরঞ্জিত।
সৃজিতও পুরো ব্যাপারটা স্পোর্টিংলি মেনে নিচ্ছেন। “দেখুন, এতজন অভিনেতা যদি ব্যোমকেশ করতে পারে, তা হলে কাকাবাবু করতে আপত্তি কোথায়! দীপকদা ভাল একটা চরিত্র পেয়েছেন, তাই করছেন। আমার খারাপ লাগছে না,” ম্যাসাঞ্জোর থেকে শ্যুটিংয়ের ফাঁকে বলছিলেন সৃজিত।
সৃজিতের হয়তো খারাপ লাগছে না, কিন্তু কাকাবাবু করলে তো চিরঞ্জিতের সরাসরি প্রতিযোগিতা প্রসেনজিতের সঙ্গে। এই নিয়ে কি কথা হয়েছে বাংলার দুই সুপারস্টারের?
“‘লড়াই’য়ের প্রিমিয়ারে দেখা হয়েছিল। কিন্তু এটা নিয়ে কোনও কথা হয়নি। আর ডিরেক্ট কম্পিটিশন ফুটবল-ক্রিকেটে হয়। সিনেমায় ও সব হয় না। তবে এটুকু বলব, আমি কাউকে হার্ট করতে চাই না,” জানাচ্ছেন চিরঞ্জিত।
আর একটা কাকাবাবু হচ্ছে শুনে খুশি সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের স্ত্রী স্বাতী গঙ্গোপাধ্যায়ও।
“হ্যাঁ, আমি রাইটস্ দিয়ে দিয়েছি। সইসাবুদ হয়ে গিয়েছে। এই রাইটস্ দেওয়ার আগে আমার খালি মনে হয় আমার ছেলের কথা। ও কী ভাববে? ও কী বলবে? কিন্তু এ বার ওকে না জানিয়েই রাইটস্ দিয়ে দিলাম,” বলছেন স্বাতী গঙ্গোপাধ্যায়।
শোনা যাচ্ছিল. ‘মিশর রহস্য’র প্রযোজকদের সঙ্গে নাকি সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের চুক্তি হয়েছিল, আগামী সাত বছর অন্য কোনও প্রোডাকশন হাউজ, অন্য কোনও ভাষায় এবং অন্য কোনও মিডিয়ামে আর কাকাবাবু হবে না, এ রকম একটা ক্লজ ছিল।
এই কাকাবাবু হলে সেই চুক্তিকে অমান্য করা হবে না?
“সেই চুক্তির না কোনও রেজিস্ট্রেশন হয়েছিল, না কোনও নোটারি। আমি দেখেছি সেই চুক্তি। সেই চুক্তির ভ্যালু বোধহয় আইনত নেই,” বলেন কৌস্তুভ।
কৌস্তুভের সঙ্গে একমত নন সৃজিত। “আমি যত দূর জানি, কেউ আগামী সাত বছর কাকাবাবু করতে পারবে না। বাকি আইনি ডিটেল বোধহয় ‘মিশর রহস্য’র প্রযোজকরাই বলতে পারবেন,” বলেন তিনি।
অন্য দিকে চিরঞ্জিত যে কাকাবাবু করছেন সেই খবর পৌঁছে গিয়েছে প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায়ের কাছেও। এ বিষয়ে কী বলেন প্রসেনজিৎ?
“খবর পেয়েছি দীপকদা কাকাবাবু করছে। ওকে আমি আন্তরিক অভিনন্দন জানাচ্ছি,” বলেন প্রসেনজিৎ।
ইন্ডাস্ট্রিতে কিন্তু চিরঞ্জিতের কাকাবাবু করা নিয়ে তোলপাড় শুরু হয়ে গিয়েছে। শোনা যাচ্ছে, প্রসেনজিৎকে নিয়ে সৃজিত কাকাবাবু শুরু করবেন মে মাসে। এবং রিলিজ হবে পুজোয়। চিরঞ্জিতের কাকাবাবুও একই দিনে রিলিজ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন প্রযোজক।
এখন দেখার, প্রসেনজিৎ না চিরঞ্জিত— কার কাকাবাবু পুজোতে কেল্লাফতে করে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy