Advertisement
১৮ নভেম্বর ২০২৪

নারী রানিও বটে...

যত্ন নিয়ে নারীচরিত্রদের তৈরি করে, শেষে এসে এত পৌরুষ প্রতিষ্ঠার লোভ কেন? এই ‘জিওটি’ই মেয়ে চরিত্রদের দেখিয়েছিল কুসংস্কারের বিরুদ্ধে মাথা তুলে দাঁড়াতে, যুদ্ধক্ষেত্রে তরবারি নিয়ে লাফিয়ে পড়তে, আবার রাজ্যের প্রয়োজনে বা প্রতিশোধ নিতে নিজের কোলের সন্তানকে বলি দিতেও নরম মনের পরিচয় দেয়নি কোনও মহিলা চরিত্র। 

গেম অব থ্রোন্‌স

গেম অব থ্রোন্‌স

শেষ আপডেট: ২১ মে ২০১৯ ০০:০১
Share: Save:

টেলিভিশনের মহাকাব্য বলা যেতে পারে ‘গেম অব থ্রোন্‌স’কে। ২০১১ থেকে শুরু হয়েছে এই সিরিজ়। শেষ হল গত সোমবার। এত বছর ধরে এই সিরিজ়ের সঙ্গেই তার চরিত্ররা যেমন মানসিক ও শারীরিক ভাবে তৈরি হয়েছে, ভক্তরাও নিজেদের মগজাস্ত্রে শান দিয়েছে। সেই সিরিজ়ের ফিনালে সিজ়নে এসে যারপরনাই অসন্তুষ্ট দেশ-বিদেশের দর্শক। এমনকি এই সিজ়নের রিমেকের জন্য প্রায় দশ লক্ষ পিটিশন জমা পড়েছে!

সে সব আলোচনা না হয় সরিয়ে রাখা গেল। কিন্তু তা বলে এ ভাবে মেয়েদের অপমান, তা-ও এ রকম আন্তর্জাতিক সিরিজ়ে? এই ‘জিওটি’ই মেয়ে চরিত্রদের দেখিয়েছিল কুসংস্কারের বিরুদ্ধে মাথা তুলে দাঁড়াতে, যুদ্ধক্ষেত্রে তরবারি নিয়ে লাফিয়ে পড়তে, আবার রাজ্যের প্রয়োজনে বা প্রতিশোধ নিতে নিজের কোলের সন্তানকে বলি দিতেও নরম মনের পরিচয় দেয়নি কোনও মহিলা চরিত্র।

এই সিরিজ়ই দর্শকের সামনে নিয়ে এসেছিল কিশোরী লিয়ানা মরমন্টকে, যে পূর্ণবয়স্ক পুরুষ সৈন্যদের সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে যুদ্ধ করেছে। রয়েছে আরিয়া স্টার্ক, যে অপ্রতিরোধ্য নাইট কিংয়ের বুকে গেঁথে দিয়েছে ছুরির ফলা। ব্রিয়েন অব টার্থ, যে একা যুদ্ধ করে জেমি ল্যানিস্টারকে বাঁচিয়েছিল একাধিক পুরুষ যোদ্ধার হাত থেকে। সানসা স্টার্কের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে যত দূর যেতে হয়, ব্রিয়েন গিয়েছে। সেখানে শেষে এসে এক পুরুষের প্রেম পাওয়ার জন্য তার কেঁদেকেটে অনুনয় করা নারী ক্ষমতায়নে কতটা আঘাত করে, সেটা কি নির্মাতারা ভেবে দেখেছেন?

অন্য দিকে সার্সির মতো ক্ষুরধার বুদ্ধিসম্পন্ন রানি, যে কিনা মৃত্যু দেখেও ওয়াইনের গ্লাস হাতে ঠোঁটের কোণে ঠান্ডা হাসি ধরে রাখতে পারে, তাকেও সরিয়ে দেওয়া হল চিত্রনাট্য থেকে। সার্সির মৃত্যুকে তার কর্মফল হিসেবে ধরে নেওয়াই যায়। কিন্তু খালিসি? ডিনেরিস টার্গেরিয়ান গোড়া থেকে শান্তিপূর্ণ পৃথিবীর স্বপ্ন দেখছে। স্বামী-সন্তানের মৃত্যুতেও সে অবিচলিত। দাসত্বমুক্ত পৃথিবী গড়তে যার যাত্রা শুরু হয়েছিল। দেশের পর দেশ ঘুরে যে অগণিত মানুষের ভালবাসায় ভর করে তাদের ‘মিসা’ হয়ে উঠেছিল। হঠাৎ তাকে খলনায়িকা বানানোর কারণ কী?

আর বাকি থাকে সানসা স্টার্ক বা লিট্‌ল বার্ড। একটা সাধারণ মেয়ে, যে শুধু রাজপুত্রকে বিয়ে করে রাজ পরিবারের সন্তান জন্ম দেওয়ার স্বপ্ন দেখত। সবচেয়ে বেশি প্রতিকূলতার সম্মুখীন হয়েছে এই চরিত্রটি। ঘাত-প্রতিঘাতের শানে যে তরোয়ালের ফলার মতো ধারালো হয়ে উঠেছে, সে-ও কি যোগ্য উত্তরসূরি ছিল না সিংহাসনের? দশ জন বসে যখন ভবিষ্যতের সিংহাসনের রাজা বা রানির নির্বাচন করছে, তখন এক বারও সানসার কথা কারও মনে এল না?

তার চেয়েও বড় কথা, এই অষ্টম সিজ়নে এসে লর্ড ভ্যারিস ও টিরিয়ন ল্যানিস্টারের মতো বুদ্ধিজীবীদের দিয়ে পুরুষতন্ত্রের দামামা বাজানোর কী দরকার ছিল? ‘ইউ আর দ্য শিল্ড দ্যাট গার্ডস দ্য রেল্‌ম অফ মেন...’ টিরিয়নের মুখে এই ধরনের সংলাপও কি আঘাত করে না নারীর সম্মানকে? বা লর্ড ভ্যারিস যখন জনকে বলে, ‘মেন ডিসাইড হোয়্যার পাওয়ার রিসাইডস’, তখনও কি পৌরুষের হুঙ্কার প্রতিধ্বনিত হয় না? একে তো এই পরিচালনা, গল্প, মেকিংয়ের জন্য শেষ সিজ়নে এসে ভক্তরা হতাশ। মেয়েদের প্রতি বিরূপ মনোভাব যেন হতাশা দ্বিগুণ বাড়িয়ে তুলেছে। তবে যাঁরা এই নারীচরিত্রদের প্রাণ দিয়েছেন, সেই অভিনেতাদের অন্তত কুর্নিশ প্রাপ্য।

অন্য বিষয়গুলি:

GOT Game of Thrones Female Empowerment
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy