জয় বন্দ্যোপাধ্যায়
জয় বন্দ্যোপাধ্যায়। গুরুতর অসুস্থ তিনি। ২১-এর বিধানসভা নির্বাচনে বিজেপি-র প্রত্যক্ষ প্রচারে তিনি নেই। দল তঁকে প্রার্থীও করেনি। গেরুয়া শিবিরে জয় বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রকৃত অবস্থান কী? বিরোধী দলনেতার সঙ্গে আলাপচারিতায় আনন্দবাজার ডিজিটাল।
প্রশ্ন: ২০১৪-য় আপনার হাত ধরে বাংলায় বিজেপি-র প্রবেশ। ২০২১-এর নির্বাচনে আপনি দলের কোথাও নেই!
জয়: কে বলেছে আমি নেই? আমি আছি। গত অক্টোবর থেকে প্রচণ্ড অসুস্থ। ফুসফুসে সংক্রমণ ছড়ানোয় প্রায় মৃত্যুর মুখ থেকে ফিরে এসেছি। টানা ১৪ দিন আইসিইউ-তে ছিলাম। তখনই চিকিৎসক কুণাল সরকার সহ একাধিক বিশিষ্ট চিকিৎসক কড়া নির্দেশ দেন, প্রাণে বাঁচতে চাইলে আপাতত বাইরে ঘোরাঘুরি বন্ধ। তাই প্রত্যক্ষ প্রচারে দেখা যাচ্ছে না। তার বদলে আমি ফোনে, অনলাইনে সারাক্ষণ দলের হয়ে প্রচার করে যাচ্ছি।
প্রশ্ন: দল আপনাকে প্রার্থী পদও দিল না!
জয়: অমিত শাহ দিতেই চেয়েছিলেন। কিন্তু কী করে দেবেন? আমি এত অসুস্থ। তার মধ্যে জোর করে প্রচারে বেরলে যদি কিছু হয়ে যায়! তার দায় কে নেবে? তাই আপাতত দ্রুত সুস্থ হয়ে ওঠাই আমার একমাত্র লক্ষ্য। তার জন্য নিয়ম মেনে চিকিৎসার পাশাপাশি যোগা করছি। ধ্যানে বসছি। থেরাপি নিচ্ছি। জানি, ২১ নির্বাচন জিতলেই দল আমার কাঁধে বড় দায়িত্ব চাপিয়ে দেবে।
প্রশ্ন: এই আশ্বাস কে দিয়েছেন?
জয়: স্বয়ং অমিত শাহ বলেছেন, আপনি দ্রুত সুস্থ হয়ে উঠুন। অনেক দায়িত্ব পালন করতে হবে।
প্রশ্ন: অমিত শাহ তা হলে দায়িত্ব দেবেন?
জয়: কেন দেবেন না? আমি অসুস্থ। প্রচারে বেরতে পারছি না। তার পরেও আমার নিরাপত্তা কমায়নি দল। কেন অমিতজি মিথ্যে বলতে যাবেন!
প্রশ্ন: নতুনরা এসেই প্রার্থী পদ পেলেন। খারাপ লাগছে না?
জয়: অবশ্যই লাগছে। আমিও তো রক্ত-মাংসের মানুষ! তাই নিয়ে বেশ কিছু জায়গায় মন্তব্যও করে ফেলেছি। পরে যদিও খারাপ লেগেছে। তার পরেও দল আমার বিরুদ্ধে কোনও পদক্ষেপ করেনি। চিকিৎসকদের পাশাপাশি আমার বাড়ির লোকেরাও বুঝিয়েছিলেন, এই মুহূর্তে বাইরে বেরোলে প্রাণ সংশয় হবে। পরে শান্ত হয়ে গিয়েছি। মেনে নিয়েছি। আগামী দিনের জন্য নিজেকে প্রস্তুত করছি।
প্রশ্ন: মুখ্যমন্ত্রী একা প্রবীণ বা অসুস্থ নেতাদের বাদ দেন না! গেরুয়া শিবিরও দেয়?
জয়: আবারও বলছি, দল আমায় বাদ দেয়নি এখনও। সুস্থ হয়ে ওঠার জন্য সময় দিয়েছে। অমিতজির কড়া নির্দেশ আছে, কোনও পুরনো নেতা-মন্ত্রীকে দল থেকে সরানো যাবে না। বিজেপি শিবিরে না এলে এই দলকে চেনা অসম্ভব। প্রচণ্ড নিয়মানুবর্তিতা মেনে চলা একটি রাজনৈতিক দল। আমি দিল্লি গিয়ে লালকৃষ্ণ আডবাণীকে সামনে থেকে দেখেছি। ঘড়ির কাঁটা ধরে ওঠেন, বসেন, খাওয়াদাওয়া, কাজ করেন। উনি বলেছিলেন, চিকিৎসক শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়ের আদর্শে গড়া ভারতীয় জনতা সংঘের আধুনিক রূপ ভারতীয় জনতা পার্টি। যা এক দিন গোটা বাংলায় রাজত্ব করবে। আডবাণীজির ভবিষ্যতবাণী সফল হতে চলেছে। আমার খুব গর্ব হচ্ছে।
প্রশ্ন: শাসকদল থেকে বাদ পড়ে প্রাক্তন বিধায়ক রবীন্দ্রনাথ ভট্টাচার্য গেরুয়া শিবিরে যোগ দিলেন। আপনি ডাক পাননি?
জয়: হেলিকপ্টারে বসিয়ে প্রচারে পাঠাতে চেয়েছে একাধিক দল। কারণ, আমার একের পর এক সুপারহিট ছবি ‘মিলনতিথি’, ‘জীবনমরণ’, ‘নাগমতি’, ‘চপার’ আজও গ্রামবাংলায় জনপ্রিয়। আমার বক্তৃতায় সাড়া দিয়ে বহু মানুষ বিজেপি-তে যোগ দিয়েছেন। ২০১৪-য় আসানসোলের বদলে বীরভূম থেকে দল দাঁড় করিয়েছিল আমায়। রাজনৈতিক মহল জানে, জয়ের মধ্যে এখনও আগুন আছে। আমি রাজি হইনি। আমি জন্মেইছি বিজেপি-র হয়ে কাজ করব বলে। শেষ দিন পর্যন্ত তাই বিজেপি-র সঙ্গেই থাকতে চাই।
প্রশ্ন: এমনটা হওয়ার কারণ?
জয়: একটা ঘটনা বলি। আমি তখন টলিউডে প্রচণ্ড জনপ্রিয়। সমস্ত দলের সঙ্গে ভাল সম্পর্ক। কংগ্রেস, বাম, ছাত্র রাজনীতি হয়ে শাসকদলের নেতা-মন্ত্রীরা প্রচারে ডাকেন। সব দলের হয়েই প্রচার করেছি। ২০১১-য় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের হয়ে যখন প্রচারে যাই খুব আশা করেছিলাম, এই দল মানুষের সেবা করবে। শুরুতে তা করতেনও মুখ্যমন্ত্রী। ক্রমশ দেখলাম, শাসকদল বদলে গেল। তৃণমূল আর ‘গরিবদের সরকার’ নেই। মন খারাপ হয়ে যাচ্ছিল। তখনই এক রাতে টিভিতে প্রধানমন্ত্রীর ভাষণ শুনি। ওঁর কথা শুনতে শুনতে মনে হল, জীবন্ত শ্রীরামকৃষ্ণ! আমিও নরেন্দ্রপুর রামকৃষ্ণ মিশনে পড়া ছেলে। ঠাকুর-মা-স্বামীজির আদর্শে অনুপ্রাণিত। একটা রাত আমায় বদলে দিয়েছে। তার পরেই রাহুল সিংহের সঙ্গে যোগাযোগ করে প্রত্যক্ষ রাজনীতিতে যোগ দিই।
প্রশ্ন: তখনও আপনি বাংলা ছবিতে দাপিয়ে অভিনয় করছেন?
জয়: আমি তখন পার্শ্ব অভিনেতার চরিত্রে অভিনয় শুরু করেছি।
প্রশ্ন: তারকাদের ব্যস্ততা কমলেই মানুষের সেবা করতে রাজনীতিতে আসেন...
জয়: তারকারা খাঁটি। তাঁরা চাইলে রাজনীতির সাহায্য নিয়ে সঠিক কাজ করবেন। তাই রাজনীতিতে আসেন। বাড়ি, গাড়ি থেকে বাইরে ঘোরা, ৫ তারা হোটেলে থাকা-খাওয়া সব তাঁরা কাজের মধ্যেই পেয়ে যান। তাই তাঁদের আর কোনও বিষয়ের উপরেই আসক্তি থাকে না। তাঁরা যখন রাজনীতিতে আসেন, লোভ-লালসা পিছনে ফেলে রেখে আসেন। কিছু পাওয়ার আশা না করেই আসেন। কারণ, তাঁদের পাওয়ার ঝুলি তত দিনে পূর্ণ।
প্রশ্ন: রাজনৈতিক ক্ষমতার লোভও বড় লোভ...
জয়: আমরা দলের হয়ে কাজ করি। দলের শীর্ষে বসি না। আমাদের কতটা ক্ষমতা থাকতে পারে বলে মনে হয়? আসল কারণ, আমি এখনই যেটা বললাম।
প্রশ্ন: বিজেপি-তে এলেন শুধুই প্রধানমন্ত্রীকে দেখে?
জয়: একদম। ওঁর নির্লোভ জীবন আমাকে টেনেছে। সন্ন্যাসীর মতো দিন কাটান। বাংলায় প্রচারে এসে ৫ তারা হোটেলে থাকতেই পারতেন। উনি থেকেছেন বেলুড় মঠে। পরে শুনেছি, সারা রাত নাকি ধ্যান করতেন! আজ পর্যন্ত কেউ ওঁকে অসুস্থ হতে দেখেছেন? ওঁর মধ্যে আশ্চর্য এক অতি লৌকিক ক্ষমতা আছে। ঋষিসুলভ ভাব। বেলুড় থেকে বলা হয়েছে ওঁকে লম্বা দাড়ি-চুল রাখতে। উনি নির্দেশ মেনেছেন। তাতে ওঁকে আরও শ্রদ্ধা করতে ইচ্ছে করছে।
প্রশ্ন: নিন্দুকেরা বলছেন, বাংলা দখলের ইচ্ছে নিয়ে বিজেপি রাজ্যে আসছেন। রবীন্দ্রনাথকে অনুকরণ করে তাই প্রধানমন্ত্রীর লম্বা চুল-দাড়ি...
জয়: রাজ্যবাসী হিসেবে সেটাও গর্বের। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বিশ্বজনীন। তাঁকে ‘বাংলার মুখ’ করে অনুসরণ করছেন স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী। এটা কম কী?
প্রশ্ন: শ্রীরামকৃষ্ণ কিন্তু মা সারদাকে কখনও ত্যাগ করেননি। অস্বীকারও করেননি...
জয়: আমি কারওর ব্যক্তিগত বিষয় নিয়ে একটি কথাও বলব না।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy