এই শিল্পীরাই উপস্থিত ছিলেন অনুষ্ঠানে।
কথায় আছে না, দাঁত থাকতে দাঁতের মর্ম বুঝি না আমরা। দাঁতটা পড়ে গেলে হাহুতাশ করে মরি।
হালফিলে হলুদ ট্যাক্সির হাল-হকিকতও কিছুটা আমাদের দাঁতগুলোর মতোই। ওলা-উব্র আসার পর তো ট্যাক্সিগুলোর কথা বেমালুম ভুলতে বসেছি।
তবে সেই ভুলে যাওয়ার সময়েই হলুদ ট্যাক্সির গুরুত্বটা চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিল ‘ইয়েলো ট্যাক্সি মিউজিক প্রজেক্ট’। যে প্রজেক্টের থিম হলুদ ট্যাক্সি নিয়ে হলেও প্রজেক্টের একটা বড় অংশ জুড়ে ছিল এক্সপেরিমেন্টাল মিউজিক।
‘ইয়েলো ট্যাক্সি মিউজিক প্রজেক্ট’-এর আইডিয়াটা বেশ লেগেছিল। আর এই মিউজিক প্রজেক্টের পারফর্মারদের লিস্টটা দেখে তো ঠিকই করে ফেলি যে ‘যেনতেন প্রকারেণ’ ইভেন্টটা কভার করবই। কারণ, ‘ফিডলার্স গ্রিন’ পারফর্ম করছে, অর্ক গান গাইবে, দ্বীপ্তাংশু ম্যান্ডোলিন বাজাবে, সুতরাং মিস করা চলবে না।
‘ইয়েলো ট্যাক্সি মিউজিক প্রজেক্ট’ চোখ টানল দর্শকদের।
‘ফিডলার্স গ্রিন’-এর বহু শো এর আগেও দেখেছি। কিন্তু এ বার যখন ওঁরা উঠল, ভাবিনি অর্ক এই ভাবে শুরুটা করবে। অর্ক অর্থাৎ অর্ক মুখোপাধ্যায় কথা বলছিলাম। ‘দেশের কেবল কুৎসিত ঘটনাগুলোর কথাই শুনে যাচ্ছি রোজ রোজ। কিন্তু এটা বোধ হয় অনেকেই জানেন না যে, একটা গোটা কৃষক সম্প্রদায় ২ টাকা করে দিয়ে একটা গোটা ছবি তৈরিতে সাহায্য করেছিল ১৯৭৫ সালে। প্রায় ৫ লক্ষ কৃষকের অল্প অল্প টাকাতেই ছবিটি তৈরি হয়েছিল। কিছুটা সে রকম ধাঁচেরই সুন্দর একটা ঘটনা এই ইয়েলো ট্যাক্সি মিউজিক প্রজেক্ট’। অর্ক উঠে এ ভাবেই শ্যাম বেনেগাল পরিচালিত ‘মন্থন’ ছবিটির প্রসঙ্গ টেনে আনেন। আর তারপরই মেতে ওঠেন সুরের ঝর্ণাধারায়। এক গান থেকে আরেক গানে যাওয়ার অদ্ভুত এক জাদুকরি জানেন অর্ক মুখোপাধ্যায়। এ দিনও সেরকমই কখনও ‘দিল দেকে দেখো’, আবার সেখানে থেকেই ‘সর যো তেরা চকরায়ে’ এবং আরও অনেক গানেই ঘোরাফেরা করছিলেন অর্ক।
বাউল গানের সুরে এক অজানা দুনিয়ায় নিয়ে গেলেন কার্তিক দাস বাউল।
ছিলেন কার্তিক দাস বাউল। তাঁর দরদিয়া সুরে ক্লিন বোল্ড হয়ে গিয়েছিলেন দর্শক। ‘খাজাবাবা’ গানটি যখন ধরলেন কার্তিক দাস, সেই গানকে মাঝেমধ্যেই ছাপিয়ে যাচ্ছিল হাততালির রিদম্। আর ছাপিয়ে তো যাবেই। গুসকরার এই মানুষটির মাটির প্রতি অপার টান, মাটির গানের প্রতি এমন ঝোঁক আর দর্শকের সঙ্গে আলাপ করে নেওয়ার যে সহজিয়া ভাব তাতে হাততালি ছাপিয়ে যাওয়ারই কথা।
‘সারেগামাপা’ খ্যাত তীর্থর গান দিয়েই শুরু হয়েছিল ‘ইয়েলো ট্যাক্সি মিউজিক প্রজেক্ট’। তীর্থর গানের সময়ে দর্শক কম ছিলেন ঠিকই। কিন্তু যাঁরা ছিলেন তাঁরা ড্যাব ড্যাব করে চেয়েছিলেন তীর্থের পারফরমেন্সের দিকে। বেশ কিছু পরিচিত গানই এ দিন দর্শকদের শোনাচ্ছিলেন তীর্থ। তবে নিজেরটা হয়ে গেল আর টুক টুক করে কেটে পড়ার পাত্র নয় সে। পুরো শো’য়ের সকলের পারফরমেন্স দর্শকাসন থেকেই বসে দেখছিলেন তীর্থ। শুধু দেখছিলেন না নাচছিলেন, গলা মেলাচ্ছিলেন আরও কত কী যে করছিলেন...।
তবে শুধু গান নয়। খানাপিনার আয়োজনও ছিল বিরাট। পিনার মধ্যে ছিল বিয়ার। আর সেই স্টলের ভিড় ছিল চোখে পড়ার মতো। একটা করে গান এক একজন শুনছেন আর হুশ করে হাওয়া হয়ে যাচ্ছেন ওই স্টলের দিকে। একজন তো বলই ফেললেন, ‘যা গরম, চিল্ড বিয়ারটার দরকার ছিল মশাই।’ কেনাকাটারও ব্যবস্থা ছিল। আর একটা মেলার আকারে সেটটা যা সাজানো হয়েছিল, যে কারও চোখ কপালে উঠে যেতে বাধ্য। মাঝে ছিল একটা হলুদ ট্যাক্সি, তার ঠিক পাশেই ছিল একটা ‘আলো’র গাছ।
‘রকস্টার’ ছবির ‘কুন ফায়া কুন’ গানের ভিডিয়োটা মনে আছে? সেই ভিডিয়োতে রণবীরের সঙ্গে ছিলেন ‘নিজামি বন্ধু’রাও। সুফি ঘরানার এই তিন বন্ধুর বসবাস দিল্লিতেই, হজরত নিজামউদ্দিন অওলিয়া দরগাতেই। ওঁদের এক কাওয়াল চাঁদ নিজামি গান ধরার আগেই বলছিলেন, ‘কলকাতায় একটু বুঝে-শুনে গান গাইতে হবে। কারণ, কলকাতার মানুষ গানটা শুধু শুনতে আসে না, গানটা বুঝে তারপর বাড়ি যায়।’ ‘নিজামি বন্ধু’রা ‘কুন ফায়া কুন’ গানটা তো গাইলেনই, গাইলেন ‘দমা দম মস্ত কলন্দর’। আরেকটা গান শোনার জন্য দর্শক খুবই কাকুতি-মিনতি করছিলেন। ওঁরা চাইছিলেন না, তা-ও গেয়েই ফেললেন ‘মেরে রস কে কমর’।
সুরের দরিয়ায় দর্শকদের মন জয় করলেন ‘নিজামি বন্ধু’রাও।
এক্কেবারে নতুন একটা কনসেপ্ট দেখা গেল এই প্রজেক্টেই। তা-ও আবার রাজস্থানের একটা ব্যান্ডের কাছ থেকে। অনেক গায়ক আর অনেক বাজনদারদের ছোট্ট ছোট্ট কুঠুরির মধ্যে বসিয়েই চলছিল গান। যাঁর পালা শুরু হচ্ছে তাঁর কুঠুরির পর্দা খুলে যাচ্ছে, জ্বলে উঠছে আলো। আর ওঁদের সক্কলকে পরিচালনা করছিলেন আরেকজন। শুধু এখানেই নয়, এই ভাবেই পারফর্ম করে থাকেন ‘মনগনিয়ার সিডাকশন’। তাঁরা মূলত রাজস্থানী ফোক গানগুলোই গাইছিলেন।
আরও পড়ুন, এই শিশু অভিনেতাদের পারিশ্রমিক শুনলে চমকে যেতে হয়!
আরও পড়ুন, এই বলি তারকাদের প্রথম বিয়ে কেন ভেঙেছিল জানেন?
তবে ঘরে ফেরার গানটা কলকাতায় বরাবরই একরকম ফিক্সড। সে গানে শুধুই হাততালি আর চিৎকার ভেসে আসে। যে গানটা কেবলই অটো করে, বা উবর্-এ বা ইয়েলো ট্যাক্সি করে ফেরার পথে ফাঁকা রাস্তায় ইকো হতে থাকে। আর এর ক্রেডিটের সিকিভাগটাই নিয়ে নেবেন কলকাতার মানুষজন। চাঁদি ফাটা রোদ্দুরে গানের তালে তালে সর্বক্ষণ হাততালি আর কোমর দুলিয়ে নাচই তার প্রমাণ। অর্কও বার বার বলছিলেন, ‘আপনাদের নিজেদের জন্যও একটা হাততালি হয়ে যাক’।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy