Advertisement
০৫ নভেম্বর ২০২৪
Celebrity Interview

‘অটোগ্রাফ’ আর ‘শাংহাই’ দেখেই ঠিক করেছিলাম বুম্বাদাকে নিয়ে ‘জুবিলি’ লিখব: বিক্রমাদিত্য

‘জুবিলি’র প্রশংসা মুখে মুখে। হিমাংশু রায়ের আদলে তৈরি শ্রীকান্ত রায়ের চরিত্রে যে প্রসেনজিৎ চট্টাপাধ্যায় থাকছেন, তা বাকি কাস্টিং চূড়ান্ত করার আগেই ঠিক করেছিলেন সিরিজ়ের পরিচালক।

Vikramaditya Motwane speaks about the success of Jubilee with Anandabazar online

‘জুবিলি’-তে হিমাংশু রায়ের আদলে তৈরি শ্রীকান্ত রায়ের চরিত্র অভিনয় করেছেন প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায়। ছবি: সংগৃহীত।

পৃথা বিশ্বাস
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৯ এপ্রিল ২০২৩ ২০:৩১
Share: Save:

প্রথম ছবি ‘উড়ান’ থেকেই তিনি ছক্কা হাঁকাচ্ছেন। ‘লুটেরা’, ‘ট্র্যাপ্‌ড’-এর মতো বেশ কিছু মনে রাখার মতো ছবি করেন তিনি। ওটিটি-তে হাত পাকিয়েছিলেন অনুরাগ কাশ্যপের সঙ্গে যৌথ ভাবে ‘সেক্রেড গেমস’ পরিচালনা করেই। তার পর তিনি হাত দেন তাঁর ম্যাগনাম ওপাস ‘জুবিলি’তে। হিন্দি সিনেমার ইতিহাসের পাতা থেকে তুলে আনা বেশ কিছু ঘটনা দিয়ে চিত্রনাট্য সাজিয়েছেন বিক্রমাদিত্য মোটওয়ানে। কিছুটা বাস্তব, বেশিটাই তাঁর কল্পনা। তবে সব চরিত্র কাল্পনিক হলেও বাস্তবের সঙ্গে মিল স্পষ্ট। যেমন হিমাংশু রায়ের আদলে তৈরি শ্রীকান্ত রায়ের চরিত্র। অভিনয়ে প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায়। যাঁর এই সিরিজ় দিয়েই ওটিটি-তে হাতেখড়িও বটে। এর আগে ‘জুবিলি’ প্রসঙ্গে প্রসেনজিৎ আনন্দবাজার অনলাইনকে জানিয়েছিলেন, বিক্রমাদিত্য তাঁর কথা মাথায় রেখেই চরিত্রটা লিখেছেন। কিন্তু প্রসেনজিতের কথাই কেন ভাবলেন পরিচালক? তাঁর কোন ছবির অভিনয় মন ছুঁয়ে গিয়েছিল বিক্রমাদিত্যের? ‘জুবিলি’র বিপুল সাফল্যের পর বুধবার কলকাতায় হাজির হলেন পরিচালক নিজেই। সঙ্গে অপারশক্তি খুরানা আর সিদ্ধান্ত গুপ্ত। পরিচালককে সামনাসামনি পেয়ে প্রশ্নটা করে ফেলল আনন্দবাজার অনলাইন।

বিক্রমাদিত্য বললেন, ‘‘বুম্বাদার খুব বেশি কাজ আমি দেখিনি। ‘অটোগ্রাফ’ আর ‘চোখের বালি’ দেখেছিলাম। আর তার পর ‘শাংহাই’ দেখে বুঝলাম হিন্দি ভাষাতেও সমান পারদর্শী তিনি। তবে ওঁর উপস্থিতির ভার এবং আভিজাত্য দেখেই আমার মনে হয়েছিল শ্রীকান্ত রায়ের চরিত্রের জন্য বুম্বাদা আদর্শ। তার উপর শ্রীকান্ত এমন একটা চরিত্র, যে নিজে এক জন খুব বড় তারকা। সেই দিক থেকেও বুম্বাদার ব্যক্তিত্ব মিলে যাচ্ছিল।’’

a scene from the Web series Jubilee

হিন্দি সিনেমার ইতিহাসের পাতা থেকে তুলে আনা বেশ কিছু ঘটনা দিয়ে ‘জুবিলি’র চিত্রনাট্য সাজিয়েছেন বিক্রমাদিত্য মোটওয়ানে। ছবি: সংগৃহীত।

‘লুটেরা’ দেখে অনেকের মনে হয়েছিল, যেন একটি ছোটগল্প। হিন্দি সিনেমার স্বর্ণযুগ নিয়ে তৈরি ‘জুবিলি’ দেখে অনেকের মনে হয়েছে, যেন একটি উপন্যাস। পরিচালনার এই বিশেষ ধরন কি সচেতন ভাবেই আত্মস্থ করেছেন পরিচালক? তিনি নিজে অবশ্য সেটা মনে করেন না। তাঁর কথায়, ‘‘একটা ছবিতে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ জিনিস কী বলুন তো? শুধুই ছবিটা। পরিচালকের সেখানে কোনও ভূমিকা নেই। তাই আমার নিজের পরিচালনার স্টাইল তৈরি হওয়ার জায়গা নেই। ‘উড়ান’ যেমন খুব ব্যক্তিগত একটা ছবি। সেটা অন্য ভাবে তৈরি। ‘লুটেরা’ অন্য রকম। ওখানে একটু কাব্যের প্রয়োজন ছিল। কারণ দর্শক এমন একটা নতুন দুনিয়ায় প্রবেশ করছেন, যা তাঁদের কাছে নতুন। ‘জুবিলি’ও কিন্তু তেমনই। গল্প বলার ধরনটা একটু নাটকীয়। চরিত্ররা খুব জরুরি। তাই তাদের অনুযায়ী গল্প বলতে হত। এ ভাবে আমি আগে কোনও গল্প বলিনি। ‘ট্র্যাপ্‌ড’ যেমন একদম অন্য রকম ছিল। আমার মনে হয়, ছবির প্রয়োজনে পরিচালনার স্টাইলও বদলে ফেলাটা জরুরি।’’

a scene from the Web series Jubilee

জয় খন্নার চরিত্রে সিদ্ধান্ত গুপ্তের অভিনয় দর্শক, সমালোচকদের দ্বারা সমান প্রশংসিত। ছবি: সংগৃহীত।

ভারতীয় সিনেমার গল্প। প্রথম প্লেব্যাক, প্রথমে সিনেমাস্কোপের প্রসঙ্গে উঠে আসে সিরিজ়ে। অথচ আমরা দেখছি ছোট পর্দায়, মুঠোফোনের পর্দায়। এমন গল্প বড় পর্দায় দেখানোর সাধ হয়নি বিক্রমাদিত্যের? প্রশ্ন শুনে সঙ্গে সঙ্গে উত্তর এল, ‘‘না, আমার বরাবরই ইচ্ছে ছিল ওয়েব সিরিজ়েই গ্র্যান্ড কিছু বানাব। অ্যামাজ়নের (প্রাইম ভিডিয়োজ়) একই রকম ইচ্ছা ছিল। ‘গেম অফ থ্রোন্‌স’, ‘ব্রেকিং ব্যাড’, ‘সোপরানোজ়’-এর কথা ভাবুন তো! ওরা ছোট পর্দার জন্য অত বড় পরিসরে ভাবতে পারলে, আমরা কেন পারব না!’’

অশোক কুমারের আদলে তৈরি মদন কুমারের চরিত্রের অপারশক্তির অভিনয় দারুণ প্রশংসা কুড়িয়েছে। সিদ্ধান্ত বা ওয়ামিকা গাব্বির মতো আনকোরা মুখ এত বড় প্রজেক্টে নেওয়াও খুব সাহসী কাজ। তবে বিক্রমাদিত্য জানালেন, প্রসেনজিৎ, অদিতি রাও হায়দরি এবং রাম কপূর ছাড়া বাকিরা সবাই অডিশন দিয়েই সুযোগ পেয়েছেন। ‘‘আমায় যদি কেউ এসে বলত, মদন কুমারের চরিত্রের জন্য অপারশক্তির অডিশন কি নেব? আমি নিজে হয়তো তত মন থেকে হ্যাঁ বলতাম না। কিন্তু এরা প্রত্যেকেই এত ভাল অডিশন দিল যে, আমার মনে কোনও দ্বিধা ছিল না। অনেকটা সিরিজ়ে যেমন মদন কুমারের চরিত্রে বিনোদ দাস অডিশন দিয়েই শ্রীকান্ত রায়কে মুগ্ধ করে, বাস্তবেও তেমনই হয়েছিল।’’

বিক্রমাদিত্যের মা বাঙালি। তাই কলকাতা এই প্রথম বার নয়। ছোটবেলায় বহু বার এসেছেন এই শহরে। এবং হাওড়ার দিকেও গিয়েছেন। উনি মনে করেন, শহরের বেশ কিছু অংশ এতটাই সিনেম্যাটিক যে গথিক কোনও গল্পের প্রেক্ষাপট হিসাবে দারুণ মানাবে। সিনেমার প্রতি তাঁর প্রেম বহু দিনের। সঞ্জয় লীলা ভন্সালীর সঙ্গে প্রায় ১০-১২ বছর সহকারী পরিচালক হয়ে কাজ করেছেন। তিনি একটি অন্ধকার থিয়েটারে ঢুকে সিনেমা দেখতে যতটা পছন্দ করেন, তেমন সেটের ভিতরে চড়া আলোর নীচে দাঁড়িয়ে সিনেমা বানাতে ততটাই পছন্দ করেন। সেই সব মিলিয়ে তৈরি হয়েছে ‘জুবিলি’।

এত বড় পরিসরে একটি সিরিজ়। দর্শক-সমালোচকদের দ্বারা সমান প্রশংসিত। মাপকাঠি এতটাই উঁচুতে তৈরি হয়ে গেল যে পরবর্তী কাজ আরও বেশি আতশকাচের নীচে ফেলে দেখা হবে। সেই নিয়ে ভয় হয় না বিক্রমাদিত্যের? শিশুসুলভ হাসি দিয়ে পরিচালক বললেন, ‘‘ধুর! এত দিন পর আর কিসের টেনশন? ‘উড়ান’ বা ‘লুটেরা’র পর একটু চাপে থাকতাম। এখন সাত নম্বর কাজের পর আর এ সব নিয়ে কেউ ভাবে নাকি?’’

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE