রাশিদ খান। —ফাইল চিত্র।
আজ মনে হচ্ছে, আমার পরিবারেরই এক সদস্য যেন চলে গেল। ধ্রুপদী সঙ্গীতের এই জগৎটি এতটাই ঘননিবদ্ধ যে, এক জনের কষ্টের কারণ ঘটলে, অন্যের মনে লাগে। সুরের টানে সবাই একে অন্যের সঙ্গে সম্পর্কিত। উস্তাদ রাশিদ খান বহুদিন ধরেই খুব কষ্ট পাচ্ছিল। আজ আমরা শোকে ডুবে রয়েছি।
দেশ হারাল তার অন্যতম সেরা এক সঙ্গীতশিল্পীকে। ও ছিল ঈশ্বরপ্রেরিত এক মানুষ, এক ‘চাইল্ড প্রডিজি’। কলকাতায় আসার পরে বাংলার মানুষের ভালবাসা পেয়েছে, বড় সঙ্গীতশিল্পীদের আশীর্বাদ পেয়েছে, শুভানুধ্যায়ীদের পৃষ্ঠপোষকতা পেয়েছে। কিন্তু এত তাড়াতাড়ি ওর সঙ্গীতযাত্রা শেষ হয়ে যাবে, তা ঘুণাক্ষরেও ভাবিনি। দুনিয়ার এটাই হয়তো নিয়ম যে, যখন একটি শিশু ভূমিষ্ঠ হয়, তখনই তার চলে যাওয়ার দিনও লেখা হয়ে থাকে।
পণ্ডিত ভীমসেন জোশীজি ওকে অনেক প্রেরণা জুগিয়েছেন, উৎসাহ দিয়েছেন। হিন্দুস্তানি মার্গসঙ্গীতের এই ক্ষেত্রে ভীমসেন যা করেছেন, তা আর কেউ কখনও করেননি। উনি রাশিদকে নিজের সঙ্গে বসিয়ে গেয়েছেন, ওকে দিয়ে গাইয়েছেন। জানিয়ে দিয়েছেন, ‘আমার পর রাশিদই গাইবে।’ রাশিদের জন্য খুবই সৌভাগ্যের বিষয় ছিল এটি। এত অল্প বয়সেই ও দেশ এবং দুনিয়ার মানুষের হৃদয় জিতে নিয়েছিল, মানুষের মনে নিজের ঘর গড়তে পেরেছিল। ভগবান ওর স্বরে যে আবেদন দিয়েছিলেন, যে ঐশ্বরিক বিভূতি ছিল তার, তাতে ও যখন গাইতে শুরু করত, শ্রোতারা মন্ত্রমুগ্ধ হয়ে পড়তেন।
আরও একটা কথা বলা আজ জরুরি যে, রাশিদ নিজেই একটি প্রতিষ্ঠান, নিজেই একটি ঘরানা হয়ে উঠেছিল। এত কম বয়সেই কণ্ঠসঙ্গীতকে অন্য মাত্রা দিতে পেরেছিল। বিভিন্ন ঘরানা নিজের মতো করে চলে, তাদের কেউ বেশি সম্মান পায়, কেউ পায় না। কিন্তু ‘ঘরানা’ শব্দটিতেই সীমাবদ্ধতা রয়েছে বলে মনে করি। যখন যাঁর নিজের সাধনা পূর্ণ হয়ে যায়, সফল হয়, শ্রোতারা তাঁকে মেনে নেন, তখন তিনি নিজেই প্রতিষ্ঠান ও ঘরানার প্রতিভূ হয়ে ওঠেন। রাশিদের ক্ষেত্রে তা-ই ঘটেছিল।
কত ছোটবেলা থেকে ওকে দেখেছি, ওর গান শুনেছি, সে সব আজ মনে পড়ছে। রাশিদ আমাকে চাচা বলে ডাকত। আমার স্ত্রীকে ডাকত চাচি বলে। আবার ওর যে গুরু ছিলেন, সেই উস্তাদ নিসার হুসেন খান সাব আমার বাবাকে, চাচা বলে ডাকতেন! এই ভাবে আমাদের সম্পর্ক অদৃশ্য সুতোয় বাঁধা রয়েছে। আজ তাই ওর চলে যাওয়া আমার কাছে ব্যক্তিগত শোকও বটে। আজ এটাই প্রার্থনা করি যে, ওর গুরু নিসার হুসেন খান সাব-এর তালিম, রাশিদের সঙ্গীতের বার্তাকে ওর পুত্র আরমান খান এবং শিষ্যেরা এগিয়ে নিয়ে যাবে। এই বিরাট ক্ষতিকে সহ্য করার শক্তি ও সামর্থ্য খুদা যেন ওর পুত্রকে দেন, সাহস জোগান, এই প্রার্থনা করছি।
অনুলিখন: অগ্নি রায়
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy